সাগরে অলিভিন মিশালে কি পৃথিবীর উষ্ণতা কমবে by এনামুল হক
পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমাগত বেড়ে চলায়
বিজ্ঞানী মহল উদ্বিগ্ন। এই উষ্ণতাকে আর বাড়তে না দেয়ার কিংবা উষ্ণতা কমানোর
জন্য অনেক জিওইঞ্জিনিয়ারিং বা ভূ-প্রকৌশল সমাধান উপস্থাপন করা হচ্ছে।
যেমন সমুদ্রে লোহা ফেলে দেয়া কিংবা বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক জলরাশিকে
লবণাক্ততা মুক্ত করা। সম্প্রতি আরও একটি উপায় নিয়ে গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন
বিজ্ঞানীরা সেটা হলো অলিভিন পাথর গুঁড়ো করে সমুদ্রে ফেলে দেয়া।
তাতে লাভ হবে কি? অলিভিন হলো জলপাইয়ের মতো সবুজাভ এক ধরনের পাথর বা শিলা যাকে বাংলায় বলে গোমেদমণি। অলিভিন ম্যাগনেশিয়াম সিলিকেটে তৈরি। পৃথিবীতে এটা প্রচুর পরিমাণে ও সহজে পাওয়া যায়। এটা ভূ-ত্বকের নিচে থাকে এবং পানি ও বায়ুর সংস্পর্শে দ্রুত বিশ্লিষ্ট হয়ে যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে এটা কার্বনিক এ্যাসিড দ্বারা দ্রবীভূত হয়। এই কার্বনিক এ্যাসিড বায়ুমণ্ডলের ও বৃষ্টির পানির কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে তৈরি হয়।
অলিভিন যদি গুঁড়ো করে সাগর, মহাসাগরের পৃষ্ঠদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে সমুদ্রের পানির ক্ষারত্ব বাড়বে। ফলে সমুদ্র বায়ুমণ্ডল থেকে আরও বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিতে পারবে। তার পরিণতিতে পৃথিবী অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা হবে।
কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় এই প্রক্রিয়ার সুফল ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো মূল্যায়ন করে দেখা হয়। প্রাকৃতিকভাবেই সাগরে খনিজ অলিভিনের দ্রবণ ঘটার প্রভাব এবং বায়ুম-লের কার্বন ডাই-অক্সাইড হ্রাসে তা কতটা কার্যকর সেটাও হিসাব করা হয়। জার্মানির ব্রিমার হ্যাভেনের পোলার এন্ড ম্যারিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই গবেষকরা হিসাব করে বের করেন যে, প্রতিবছর সাগরে যদি তিন গিগাটন বা তিন বিলিয়ন বা তিন শ’ কোটি টন অলিভিন জমা করা যায় তাহলে বর্তমানে মানুষের কর্মকা-ের কারণে প্রতিবছর যে পরিমরাণ কার্বন নির্গত হয়ে বায়ুম-লে মিশছে সেটা মাত্র ৯ শতাংশ হ্রাস পাবে।
কিন্তু এই জিও ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতির পরিবেশগত বিরূপ প্রভাবও আছে। অলিভিন পাথরকে গুঁড়া করে সাগরে ফেলতে হবে। তবে ব্যাপারটা কার্যকর হতে হলে পাথরের গুঁড়ো হতে হবে বেশ ছোট যাতে একেকটা দানা এক মাইক্রোমিটারের বেশি বড় না হয়। এই গুঁড়ো করার প্রক্রিয়ার পেছনে জ্বালানি খরচ হবে। আর জ্বালানি খরচ হলেই বিভিন্ন পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। তবে সেটা নির্ভর করবে ওই জ্বালানি যোগাতে কি ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর। এ প্রসঙ্গে গবেষক দলের অন্যতম পিটার কোহলার বলেন, অলিভিন পাথরকে বর্তমান দিনের প্রযুক্তিতে এত ছোট আকারে চূর্ণ করার জন্য যে জ্বালানি খরচ পড়বে তাতে বায়ুম-ল থেকে সাগর ও মহাসাগরের শুষে নেয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রায় ৩০ শতাংশই চূর্ণন প্রক্রিয়ায় পুনর্নির্গত হয়ে বায়ুম-লে গিয়ে মিশবে। তার মানে অলিভিন পাথর গুঁড়ো করে সাগরে ফেলার মাধ্যমে বছরে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কমবে প্রকৃত পক্ষে মাত্র ৬ শতাংশ যা মোটেই তেমন দক্ষ ও কার্যকর ব্যবস্থা নয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুম-ল থেকে সাগরের শুষে নেয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের ৯২ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঘটবে পানির রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তনের কারণে এবং বাকি ৮ শতাংশের ক্ষেত্রে ঘটবে সমুদ্রের নিষিক্তকরণ নামে এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সামুদ্রিক জীবনে পরিবর্তনের কারণে। সমুদ্র নিষিক্তকরণ হলো ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনকে তাদের বৃদ্ধি উৎসাহিত করার জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান যোগানো। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন তাদের বৃদ্ধির জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে এবং তারপর মারা গেলে কার্বন ডাই-অক্সাইড সঙ্গে নিয়ে সাগরতলে ডুবে যায়। গবেষকদের মতে, অলিভিন যদি ব্যাপক পরিসরে ব্যবহার করা হয় তাহলে লোহা ও অন্যান্য ধাতব পদার্থও সামদ্রিক জীবনের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। কোহলার নামে এক গবেষক বলেন, এই কৌশলটিকে সমুদ্র নিষিক্তকরণ পরীক্ষা হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে এবং অলিভিনের দ্রবণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো মূল্যায়ন করে দেখার সময় এগুলোর প্রভাবকে বিবেচনায় নেয়া উচিত।
সাগরের অম্লতœ বৃদ্ধি সামুদ্রিক প্রাণীকুলের ওপর সুগভীর প্রভাব ফেলে থাকে। সাগরে অলিভিন জমা হলে এই অম্লত্ব সমস্যার প্রতিকার হতে পারে কিনা গবেষকরা সেটাও অনুসন্ধান করে দেখেছেন। তারা হিসাব করে বের করেছেন যে, মানুষের কারণে আজ যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হচ্ছে তা পুরোপুরি প্রতিকার করতে বছরে প্রায় ৪০ গিগাটন বা ৪ হাজার কোটি টন অলিভিন সাগরের জলরাশিতে দ্রবীভূত করার প্রয়োজন হবে। ভূ-প্রকৌশলের এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অলিভিন পাওয়ার জন্য আমাদের আজকের কয়লা শিল্প যে আকার লাভ করেছে, সেই আকারের একটা শিল্পের প্রয়োজন হবে। সেই অলিভিন সমস্ত সাগর-মহাসাগরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রয়োজন হবে ১শ’টি বড় আকারের জাহাজ যেগুলোর প্রতিটি বছরে এক গিগাটন করে অলিভিন ছড়িয়ে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। এ সমস্ত দিক একত্রে বিবেচনায় নিলে এবং মূলত অলিভিন প্রক্রিয়াকরণের জ্বালানি ব্যয় ও সামুদ্রিক প্রাণীকুলের ওপর অলিভিনের সম্ভাব্য প্রভাব হিসাবে ধরা হলে বলা যায়, এই পদ্ধতিটা তেমন একটা কাজের নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা সমস্যার এটা অবশ্যই কোন সহজ সমাধান হতে পারে না।
সূত্র : দি গার্ডিয়ান
তাতে লাভ হবে কি? অলিভিন হলো জলপাইয়ের মতো সবুজাভ এক ধরনের পাথর বা শিলা যাকে বাংলায় বলে গোমেদমণি। অলিভিন ম্যাগনেশিয়াম সিলিকেটে তৈরি। পৃথিবীতে এটা প্রচুর পরিমাণে ও সহজে পাওয়া যায়। এটা ভূ-ত্বকের নিচে থাকে এবং পানি ও বায়ুর সংস্পর্শে দ্রুত বিশ্লিষ্ট হয়ে যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশে এটা কার্বনিক এ্যাসিড দ্বারা দ্রবীভূত হয়। এই কার্বনিক এ্যাসিড বায়ুমণ্ডলের ও বৃষ্টির পানির কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে তৈরি হয়।
অলিভিন যদি গুঁড়ো করে সাগর, মহাসাগরের পৃষ্ঠদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে সমুদ্রের পানির ক্ষারত্ব বাড়বে। ফলে সমুদ্র বায়ুমণ্ডল থেকে আরও বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিতে পারবে। তার পরিণতিতে পৃথিবী অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা হবে।
কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় এই প্রক্রিয়ার সুফল ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো মূল্যায়ন করে দেখা হয়। প্রাকৃতিকভাবেই সাগরে খনিজ অলিভিনের দ্রবণ ঘটার প্রভাব এবং বায়ুম-লের কার্বন ডাই-অক্সাইড হ্রাসে তা কতটা কার্যকর সেটাও হিসাব করা হয়। জার্মানির ব্রিমার হ্যাভেনের পোলার এন্ড ম্যারিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই গবেষকরা হিসাব করে বের করেন যে, প্রতিবছর সাগরে যদি তিন গিগাটন বা তিন বিলিয়ন বা তিন শ’ কোটি টন অলিভিন জমা করা যায় তাহলে বর্তমানে মানুষের কর্মকা-ের কারণে প্রতিবছর যে পরিমরাণ কার্বন নির্গত হয়ে বায়ুম-লে মিশছে সেটা মাত্র ৯ শতাংশ হ্রাস পাবে।
কিন্তু এই জিও ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতির পরিবেশগত বিরূপ প্রভাবও আছে। অলিভিন পাথরকে গুঁড়া করে সাগরে ফেলতে হবে। তবে ব্যাপারটা কার্যকর হতে হলে পাথরের গুঁড়ো হতে হবে বেশ ছোট যাতে একেকটা দানা এক মাইক্রোমিটারের বেশি বড় না হয়। এই গুঁড়ো করার প্রক্রিয়ার পেছনে জ্বালানি খরচ হবে। আর জ্বালানি খরচ হলেই বিভিন্ন পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। তবে সেটা নির্ভর করবে ওই জ্বালানি যোগাতে কি ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর। এ প্রসঙ্গে গবেষক দলের অন্যতম পিটার কোহলার বলেন, অলিভিন পাথরকে বর্তমান দিনের প্রযুক্তিতে এত ছোট আকারে চূর্ণ করার জন্য যে জ্বালানি খরচ পড়বে তাতে বায়ুম-ল থেকে সাগর ও মহাসাগরের শুষে নেয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রায় ৩০ শতাংশই চূর্ণন প্রক্রিয়ায় পুনর্নির্গত হয়ে বায়ুম-লে গিয়ে মিশবে। তার মানে অলিভিন পাথর গুঁড়ো করে সাগরে ফেলার মাধ্যমে বছরে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ কমবে প্রকৃত পক্ষে মাত্র ৬ শতাংশ যা মোটেই তেমন দক্ষ ও কার্যকর ব্যবস্থা নয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুম-ল থেকে সাগরের শুষে নেয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের ৯২ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঘটবে পানির রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তনের কারণে এবং বাকি ৮ শতাংশের ক্ষেত্রে ঘটবে সমুদ্রের নিষিক্তকরণ নামে এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সামুদ্রিক জীবনে পরিবর্তনের কারণে। সমুদ্র নিষিক্তকরণ হলো ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনকে তাদের বৃদ্ধি উৎসাহিত করার জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান যোগানো। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন তাদের বৃদ্ধির জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে এবং তারপর মারা গেলে কার্বন ডাই-অক্সাইড সঙ্গে নিয়ে সাগরতলে ডুবে যায়। গবেষকদের মতে, অলিভিন যদি ব্যাপক পরিসরে ব্যবহার করা হয় তাহলে লোহা ও অন্যান্য ধাতব পদার্থও সামদ্রিক জীবনের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। কোহলার নামে এক গবেষক বলেন, এই কৌশলটিকে সমুদ্র নিষিক্তকরণ পরীক্ষা হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে এবং অলিভিনের দ্রবণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো মূল্যায়ন করে দেখার সময় এগুলোর প্রভাবকে বিবেচনায় নেয়া উচিত।
সাগরের অম্লতœ বৃদ্ধি সামুদ্রিক প্রাণীকুলের ওপর সুগভীর প্রভাব ফেলে থাকে। সাগরে অলিভিন জমা হলে এই অম্লত্ব সমস্যার প্রতিকার হতে পারে কিনা গবেষকরা সেটাও অনুসন্ধান করে দেখেছেন। তারা হিসাব করে বের করেছেন যে, মানুষের কারণে আজ যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হচ্ছে তা পুরোপুরি প্রতিকার করতে বছরে প্রায় ৪০ গিগাটন বা ৪ হাজার কোটি টন অলিভিন সাগরের জলরাশিতে দ্রবীভূত করার প্রয়োজন হবে। ভূ-প্রকৌশলের এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অলিভিন পাওয়ার জন্য আমাদের আজকের কয়লা শিল্প যে আকার লাভ করেছে, সেই আকারের একটা শিল্পের প্রয়োজন হবে। সেই অলিভিন সমস্ত সাগর-মহাসাগরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রয়োজন হবে ১শ’টি বড় আকারের জাহাজ যেগুলোর প্রতিটি বছরে এক গিগাটন করে অলিভিন ছড়িয়ে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। এ সমস্ত দিক একত্রে বিবেচনায় নিলে এবং মূলত অলিভিন প্রক্রিয়াকরণের জ্বালানি ব্যয় ও সামুদ্রিক প্রাণীকুলের ওপর অলিভিনের সম্ভাব্য প্রভাব হিসাবে ধরা হলে বলা যায়, এই পদ্ধতিটা তেমন একটা কাজের নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা সমস্যার এটা অবশ্যই কোন সহজ সমাধান হতে পারে না।
সূত্র : দি গার্ডিয়ান
No comments