চরাচর-দ্বিতীয় জীবন দান by ফাহমিদা আক্তার রিম্পি

'মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়।' মুনীর চৌধুরীর এই অসাধারণ কথাটা আর একবার পড়ুন। এবার নিজের হাতখানা উল্টেপাল্টে, ধীরেসুস্থে দেখুন। সত্যি সত্যি কিন্তু আপনার জীবন্ত এই হাতখানা পচে যাবে আপনার মৃত্যুর পর।


মানুষ যে মরে গেলে পচে যাবে, এই সহজ সত্য কথাটা কোনোকালেই সহজে কেউ মেনে নেয়নি। বাজার থেকে জীবন্ত মাছ, টাটকা মাংস এনে আমরা খাই। যে মাছে প্রাণ ছিল, যে মাংস একটা প্রাণীর ছিল, তা আমাদের পেটে গিয়ে পচে যাচ্ছে। এর অংশ মাত্র আমাদের শরীর বৃদ্ধির কাজে লাগে। ব্যস, একটা প্রাণীর দেহের জীবন্ত কোষগুলো মরে গিয়ে আরেকটা প্রাণীর দেহে জীবন্ত কোষ গড়ল। এত বড় ভূমিকা টানার মূল কারণটা এখন বলি। 'আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ/তাহারই মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান/বিস্ময়ে তাই জাগে আমার প্রাণ।' চোখ দুটো বন্ধ করে দেখুন তো, দুনিয়াতে অন্ধকার ছাড়া আর কিছু কী আছে? খিলখিল করে হেসে ওঠা একটা ফুলের মতো শিশুর দুষ্টুমি যার চোখ দেখতে পেল না, তার জন্ম কি সার্থক? প্রতিদিন তো শত মানুষের মৃত্যু হয়। তাদের চোখ দুটি পচেই যায়।
আপনি যদি মোটা পাওয়ারের চশমা পরেন, তাহলে মৃত্যুর পর এই চশমা দিয়ে একটা গরিব মানুষ যদি দেখতে পায়, তাহলে আপনার কি কোনো আপত্তি থাকবে? নিশ্চয়ই নয়। যে অন্ধ, সে তো গরিবেরও গরিব, অসহায়েরও অসহায়। আপনি মরে গেলে চশমাটারও দাম আছে; কিন্তু চোখের কোনোই দাম নেই। সেই গরিবেরও গরিব, অসহায়ের চেয়েও অসহায় মানুষটাকে এই চোখ দুটি দিয়ে গেলে তবে কিসের ক্ষতি!
আমাদের দেহে রক্তের মূল কাজ কী, জানেন? এই যে বুক ভরে শ্বাস নিই, এই শ্বাসের সঙ্গে নেওয়া অক্সিজেনকে রক্তের লোহিত কণিকারা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যায়। আর দেহের কোষে কোষে পৌঁছে দেয় প্রাণবায়ু অক্সিজেন। বিভিন্ন দুর্ঘটনা, অপারেশন ও অন্য অনেক প্রয়োজনে দেহে রক্তের পরিমাণ কমে যায়। তখন বাইরে থেকে রক্ত দেওয়া ছাড়া বাঁচানো সম্ভব হয় না। রক্তকণিকাগুলোর কিন্তু প্রাণ আছে। বর্তমান আধুনিক যুগে এখন পর্যন্ত প্রাণ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এমনকি লোহিতকণার মতো কাজ করবে এমন কোনো কিছু বানানোও সম্ভব হয়নি। তাই রক্তের অভাবে মুমূর্ষু একজন মানুষকে বাঁচাতে আরেকজন মানুষেরই এগিয়ে আসতে হবে রক্ত দেওয়ার জন্য। এর কোনো ব্যতিক্রম নেই। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো ৪৮ কেজি ওজনের পুরুষ বা ৪৫ কেজি ওজনের নারী চার মাস পর পর রক্ত দিতে পারেন। রক্ত দিন আর নাই দিন, চার মাস পর দেহের রক্তকণাগুলো এমনিতেই মরে যায়। আবার তা তৈরি হয়। দেহের পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থেকে ৩০০-৪০০ মিলিলিটার রক্ত দিলে শরীরের কিছুই ক্ষতি হয় না; অথচ অন্য একটা প্রাণ বেঁচে যায়। যে প্রাণটা আপনারও হতে পারত। আজ জাতীয় স্বেচ্ছা রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস। আপনার করণীয় আপনিই ঠিক করুন।
ফাহমিদা আক্তার রিম্পি

No comments

Powered by Blogger.