প্রসারিত হচ্ছে ইসলাম by জহির উদ্দিন বাবর

'জেমস' যে সময় আমেরিকান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, তখন উপসাগরীয় যুদ্ধ চলছিল। তাকে আমেরিকানদের সঙ্গে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কোনো মুসলিম দেশে এটাই ছিল জেমসের প্রথম সফর।

একদিন জেমস তার কয়েক সহকর্মীর সঙ্গে ছাউনি থেকে শহরে যান। তারা এক দোকানে গিয়ে কেনাকাটা করতে লাগলেন। এ সময় পাশের মসজিদ থেকে আজানের সুর ভেসে এলো। মুসলিম দোকানদার জেমসকে বললেন, 'আপনি একটু পরে আসুন, এখন আমি দোকান বন্ধ করে দিচ্ছি। কারণ, আজান হয়ে গেছে।' একথা শুনে জেমস খুব বিস্মিত হলেন। তিনি বললেন, 'কেনাকাটা তো শেষ, শুধু হিসাবটুকু বাকি।' কিন্তু দোকানদার অনড়, বললেন : 'আজান হয়ে গেছে, নামাজের পর সবকিছু হবে।' জেমসের আজান এবং নামাজ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। তিনি ভাবলেন, এটা কেমন বিষয়, একটি মাত্র আওয়াজ শুনে সব বেচাকেনা বন্ধ করে দিয়েছে। তার মাথায় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, 'ওই আওয়াজের মধ্যে এমন কী শক্তি আছে যা ওই দোকানিকে কয়েক মিনিট দেরি করতে দেয়নি?' কিন্তু শত ভেবেও তিনি কোনো উত্তর পেলেন না। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর জেমস দেশে ফিরে গেলেন। তবে তার মাথায় বারবার ওই প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছিল। এ প্রশ্নের সন্ধান পেতে তিনি ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করলেন। তিনি প্রথমে একত্ববাদ সম্পর্কে পড়লেন। পরে ইসলামে সাম্যের দৃষ্টান্ত সম্পর্কে জানলেন। তিনি ছিলেন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। তিনি আমেরিকান সমাজে সাদা আর নিগ্রোদের পার্থক্য ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন। এ জন্য ইসলামের সাম্যের চিত্র তার মধ্যে দারুণ প্রভাব ফেলে। তিনি পড়াশোনার গণ্ডি আরও বাড়িয়ে দিলেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই জেমস থেকে 'আবদুল্লাহ' নাম ধারণ করে মুসলমান হয়ে গেলেন।
ইসলাম গ্রহণের পর আবদুল্লাহ নিজেকে ইসলামের জন্য পুরোপুরি ওয়াকফ করে দিলেন। তিনি কোরআন-হাদিস শিখে এমন আদর্শ মুসলমান হয়ে ওঠেন, যাকে দেখে মুসলমানরা ঈর্ষা করে। এ ধরনের ঘটনা একটি নয়, অহরহ ঘটছে। এর দ্বারা প্রমাণ মিলে গতানুগতিক মুসলমানদের চেয়ে নওমুসলিমরা ধর্মেকর্মে অনেক এগিয়ে। তাদের ওঠাবসা ও চলাফেরা সবকিছুই পুরোপুরি ইসলাম অনুযায়ী। তাদের দেখে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। তাদের আমল-আখলাক দেখে অনেকেই ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছেন। কারণ, আশপাশের হতাশাগ্রস্ত লোকেরা যখন অনুসন্ধান করে পায় ইসলামই একমাত্র তাদের প্রশান্তির ঠিকানা, তখন এ পথের যাত্রীসংখ্যা বাড়তে থাকে। মুসলমানদের এই প্রসারতা দেখে খ্রিস্টান বিশ্বও উদ্বিগ্ন। খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি খ্রিস্টজগতের কেন্দ্র ভ্যাটিকান সিটিতে ২১ দিনের এক সম্মেলনে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। ওই ভিডিওতে দেখানোর চেষ্টা করা হয়, 'ইসলাম বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।'
এই ভিডিও প্রচারের পর ভ্যাটিকান সিটিতে হুলস্থূল পড়ে যায়। অনেকে এই ভেবে অস্থির হয়ে ওঠেন, পৃথিবী তার প্রকৃতির দিকে ফিরে যাচ্ছে। কর্তৃত্বের সূর্য ডুবে যাচ্ছে। যারা যুগ যুগ ধরে মানুষকে অসার ধর্মের বলয়ে আবদ্ধ থাকতে বাধ্য করেছে তাদের মোহ ভেঙে গেছে। কৌতূহলী মানুষেরা আজ নিজেরাই সত্যানুসন্ধানে তৎপর। মানুষের মধ্যে জানার আগ্রহ যত বাড়ছে দিন দিন ইসলামের প্রতি তাদের আকর্ষণও বাড়ছে। তারকা ব্যক্তিদের ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনি। চলমান শতাব্দীর শুরু থেকেই বিভিন্ন ধর্মের লোকদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে জানার ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বের হতাশাগ্রস্ত তরুণ শ্রেণীর মধ্যে ইসলাম গ্রহণের প্রবণতা বেশি। পার্থিব প্রাপ্তির ষোলকলা পূর্ণ হওয়ার পরও যখন তারা হতাশার চাদরে আচ্ছাদিত তখন ইসলামই তাদের একমাত্র শান্তির শেষ ঠিকানা।
সব দ্বিধা-সংশয় রেখে শান্তিময় এই ঠিকানায় যারা আশ্রয় নিতে পারেন তারা সত্যিই সৌভাগ্যবান। আর যারা সত্যকে জানার পরও গতানুগতিকতা ও প্রথার চোরাবালিতে আটকা পড়ে শান্তির আশ্রয়ে আশ্রিত হতে সংকোচবোধ করেন, হতাশা ও খেদ নিয়েই তাদের চলে যেতে হয় দুনিয়া থেকে। মূলত যাদের জন্য হেদায়েত নির্ধারিত তারাই সত্যকে খুঁজে বের করে তা অকপটে গ্রহণ করেন। আর যাদের অন্তরে ভ্রষ্টতার তিলক আঁটা তারা তো সত্যকে জানার ও উপলব্ধি করার পরও পড়ে থাকবে যোজন যোজন দূরে।
zahirbabor@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.