দায়িত্ববোধ থেকে আয়কর প্রদান-দুর্নীতি কাটিয়ে এনবিআরকে উদ্যোগী হতে হবে

ত বৃহস্পতিবার ছিল জাতীয় আয়কর দিবস এবং গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে আয়কর মেলা। আয়কর দিবসে রাজধানীসহ সারা দেশেই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়েছিল। শোভাযাত্রায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও নানা ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়েছিল। এতসব আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, মানুষকে কর প্রদানে উৎসাহিত করা।


সেই উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে_এমন প্রশ্ন না করেই বলা যায়, সাফল্য আশানুরূপ নয়। কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিদের একটি বড় অংশই এখনো কর দিচ্ছেন না। এখনো অনেক ব্যবসায়ী কর ফাঁকি দেওয়াটাকে অপরাধ বলে মনে করেন না। এ জন্য ব্যক্তিবিশেষ যেমন দায়ী, একইভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরও এর দায় এড়াতে পারে না।
'আমি কর দেব না', কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে সেবা ও অবকাঠামোসহ ষোল আনা সুযোগ-সুবিধা দাবি করব_তা হয় না। কোনো সভ্য দেশেই কর ফাঁকির এমন রেওয়াজ নেই। নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই সেসব দেশের বাসিন্দারা আয়কর দিয়ে থাকেন। আমাদের চরিত্রে অনেক রকম দৈন্য আছে, তারই একটি হলো, কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা। এবার এনবিআর সব জেলা ও সিটি করপোরেশনের যে ৩৫০ জনকে সেরা আয়করদাতা হিসেবে পুরস্কৃত করেছে, তাঁদের মধ্যে আজিজুর রহমান নামে একজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। ৫৮ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী একটি মনোহারি দোকান নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন এবং বর্তমানে ইলেকট্রনিক পণ্যের চারটি বড় দোকানের মালিক। তিনি ৩৮ বছর ধরেই আয়কর দিয়ে আসছেন। কর দেওয়াটাকে তিনি নিজের দায়িত্ব বলেই মনে করেন। অথচ ঢাকাসহ সারা দেশেই এমন অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা বছরে নয়, মাসেই ১০-২০ লাখ টাকা আয় করেন, কিন্তু আয়কর দেন না। এটি যে খারাপ কাজ_সে বোধটুকুও তাঁদের মধ্যে নেই। কিন্তু এর জন্য কি কেবল ওই ব্যক্তি দায়ী? কেন এনবিআর তাঁদের করের আওতায় আনতে পারছে না? এটি আজ ওপেন সিক্রেট, এনবিআর হচ্ছে দুর্নীতির আখড়া। সেখানকার এক শ্রেণীর কর কর্মকর্তা নিজের পকেটে পড়লেই তাঁকে যে উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র চাকরি দিয়েছে, সে কথাটি ভুলে যান। এনবিআর যদি প্রকৃত অর্থেই এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে চায়, তাহলে তাদের খুব দূরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। কর কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত আয়-ব্যয় ও সম্পদের যথাযথ তদন্ত করলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। কর প্রদানের পদ্ধতিগত জটিলতাও কর প্রদানকে নিরুৎসাহিত করে। বহু মানুষের মধ্যেই এ ব্যাপারে রীতিমতো ভীতি কাজ করে। আর সেই সুযোগটাই নেন সেখানকার কিছু অসৎ কর কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী। এ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হলেও সমস্যাটি নিরসনের কাজ খুব একটা এগোয়নি। সে জন্য এনবিআরকে আরো উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী বছর থেকে অনলাইনে কর প্রদানের সুযোগ থাকবে বলে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নতুন কিংবা অনভ্যস্ত করদাতাদের ফরম পূরণ ও করের অর্থ জমা দেওয়ার কাজে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা শিক্ষিত বেকারদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। সাময়িকভাবে বা এক-দুই মাসের জন্য হলেও স্থানে স্থানে কর প্রদান বুথ থাকলে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে অনেকেই মনে করেন। রাষ্ট্র তথা মানুষের স্বার্থেই আমরা চাই, আয়কর দিবস ও আয়কর মেলার উদ্দেশ্য সর্বতোভাবে সফল হোক।

No comments

Powered by Blogger.