নিপা ভাইরাস সর্বাগ্রে দরকার জনসচেতনতা by ড. মাহবুব খন্দকার
কয়েক বছর আগে নিপা ভাইরাস দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশ, দেশের উত্তরাঞ্চলে আবার এর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উত্তরাঞ্চলে অন্তত পাঁচটি শিশুর মৃত্যুর খবর আমাদের নতুনভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ২০০৭ সালের শেষদিকে দেশে এই ভাইরাসের আক্রমণে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবার তা আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরছে। তবে তাঁদের এমন অভিমতও পাওয়া গেছে, সতর্ক থাকলে এই ভাইরাস ঠেকানো মোটেও কঠিন নয়। সতর্কতাই এই সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। এর উৎস হচ্ছে বাদুড়ের লালা। এ অবস্থায় জরুরি পরামর্শ মিলেছে, খেজুরের রস ফুটিয়ে পান করলে কিংবা ফল ভালোভাবে ধুয়ে খেলে এর সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়।
সচেতনতা সব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এ ক্ষেত্রে খুবই উদাসীন। এর পেছনের কারণ মূলত শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা। দারিদ্র্যপীড়িত এই দেশে ক্ষীণ হলেও আশা জাগানিয়া বিষয় হলো, বর্তমানে শিক্ষার দিকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষই ক্রমাগত ঝুঁকছে। একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানকেও নূ্যনতম শিক্ষার আলোয় স্পর্শ করার তাগিদ অনুভূত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা এখনো বিদ্যমান। সরকারের নানা রকম ভাষ্য সত্ত্বেও সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পেঁৗছানো সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে মফস্বলে এই চিত্র প্রকট। জেলা কিংবা উপজেলার অধিকাংশ হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দানের চিত্রটি খুবই বিবর্ণ। এবার নিপা ভাইরাস সংক্রমিত এলাকাগুলোতেও এই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির পর আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং অন্যান্য সেবায় অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখা উচিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের খুবই সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত, যাতে নিপা ভাইরাস নতুন করে অন্যত্র আর ছড়িয়ে পড়তে না পারে। আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত বিশেষ চিকিৎসক দল পাঠিয়ে এর জন্য যা যা করণীয়, তা অবিলম্বে করা উচিত। আক্রান্তরা যাতে সহজে যথাযথ চিকিৎসা পায়, তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের ব্যাপারে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবস্থা গ্রহণ অবশ্যই প্রত্যাশিত। দেশে নিপা ভাইরাসের ওপর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বিশেষ করে আইসিডিডিআরবি বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বশীলদের উচিত কালবিলম্ব না করে তাদের সঙ্গে সমন্বয় এবং চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করা। জনসচেতনতা কর্মসূচির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া দরকার। আক্রান্ত এলাকার ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করার কাজটি জোরদার করা খুবই আবশ্যক। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে নিপা ভাইরাসবিরোধী প্রচার যেন বাদুড়নিধন কর্মকাণ্ডে উৎসাহ না জোগায়, তাও লক্ষ রাখতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এই প্রাণীরও প্রয়োজন রয়েছে।
এখনো বাংলাদেশে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন চলছে। এর ফলে পাখিরা আশ্রয় হারাচ্ছে। বনে গাছপালা কমছে বিধায় লোকালয়ে বাদুড়ের প্রবেশ বেশি হারে ঘটছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বনায়ন কর্মসূচি চলছে, তবে তা আরো জোরদার করা আবশ্যক। এমন গাছপালাও লাগাতে হবে, যেগুলোর ফল কিংবা পাতা পশু-পাখির ভোজে লাগে। মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা সমাধান নয়। সমাধান খুঁজতে হবে গঠনমূলক পথে। আমরা যদি সর্বক্ষেত্রেই সচেতন হই, তাহলে মানুষ বাঁচবে, প্রকৃতি বাঁচবে, পশু-পাখিও বাঁচবে। গ্রামীণ জনপদে শীতকালে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব এমনিতেই বাড়ে। নিপা ভাইরাস ছোঁয়াচে এবং খুব দ্রুত ছড়ায়। শীতকালে খেজুরের রস খাওয়াটা অনেকটা লোভনীয়। কিন্তু যেহেতু এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, সেহেতু নিয়ম মেনে চললে বিপদের আশঙ্কা হ্রাস পাবে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের যেহেতু আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত, সেহেতু দেশের হাসপাতালগুলোতে 'আইসোলেটেড ওয়ার্ড' চালু করা দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যত দ্রুত ভাববে, ততই মঙ্গল। প্রধানত সতর্কতা ও সচেতনতার মাধ্যমে এই প্রাণঘাতী রোগ প্রতিহত করে অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
লেখক : একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
সচেতনতা সব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এ ক্ষেত্রে খুবই উদাসীন। এর পেছনের কারণ মূলত শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা। দারিদ্র্যপীড়িত এই দেশে ক্ষীণ হলেও আশা জাগানিয়া বিষয় হলো, বর্তমানে শিক্ষার দিকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষই ক্রমাগত ঝুঁকছে। একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানকেও নূ্যনতম শিক্ষার আলোয় স্পর্শ করার তাগিদ অনুভূত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা এখনো বিদ্যমান। সরকারের নানা রকম ভাষ্য সত্ত্বেও সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পেঁৗছানো সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে মফস্বলে এই চিত্র প্রকট। জেলা কিংবা উপজেলার অধিকাংশ হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দানের চিত্রটি খুবই বিবর্ণ। এবার নিপা ভাইরাস সংক্রমিত এলাকাগুলোতেও এই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির পর আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং অন্যান্য সেবায় অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখা উচিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের খুবই সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত, যাতে নিপা ভাইরাস নতুন করে অন্যত্র আর ছড়িয়ে পড়তে না পারে। আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত বিশেষ চিকিৎসক দল পাঠিয়ে এর জন্য যা যা করণীয়, তা অবিলম্বে করা উচিত। আক্রান্তরা যাতে সহজে যথাযথ চিকিৎসা পায়, তা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের ব্যাপারে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবস্থা গ্রহণ অবশ্যই প্রত্যাশিত। দেশে নিপা ভাইরাসের ওপর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বিশেষ করে আইসিডিডিআরবি বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বশীলদের উচিত কালবিলম্ব না করে তাদের সঙ্গে সমন্বয় এবং চিকিৎসাসেবা সহজলভ্য করা। জনসচেতনতা কর্মসূচির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া দরকার। আক্রান্ত এলাকার ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করার কাজটি জোরদার করা খুবই আবশ্যক। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে নিপা ভাইরাসবিরোধী প্রচার যেন বাদুড়নিধন কর্মকাণ্ডে উৎসাহ না জোগায়, তাও লক্ষ রাখতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এই প্রাণীরও প্রয়োজন রয়েছে।
এখনো বাংলাদেশে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন চলছে। এর ফলে পাখিরা আশ্রয় হারাচ্ছে। বনে গাছপালা কমছে বিধায় লোকালয়ে বাদুড়ের প্রবেশ বেশি হারে ঘটছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বনায়ন কর্মসূচি চলছে, তবে তা আরো জোরদার করা আবশ্যক। এমন গাছপালাও লাগাতে হবে, যেগুলোর ফল কিংবা পাতা পশু-পাখির ভোজে লাগে। মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা সমাধান নয়। সমাধান খুঁজতে হবে গঠনমূলক পথে। আমরা যদি সর্বক্ষেত্রেই সচেতন হই, তাহলে মানুষ বাঁচবে, প্রকৃতি বাঁচবে, পশু-পাখিও বাঁচবে। গ্রামীণ জনপদে শীতকালে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব এমনিতেই বাড়ে। নিপা ভাইরাস ছোঁয়াচে এবং খুব দ্রুত ছড়ায়। শীতকালে খেজুরের রস খাওয়াটা অনেকটা লোভনীয়। কিন্তু যেহেতু এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, সেহেতু নিয়ম মেনে চললে বিপদের আশঙ্কা হ্রাস পাবে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের যেহেতু আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত, সেহেতু দেশের হাসপাতালগুলোতে 'আইসোলেটেড ওয়ার্ড' চালু করা দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যত দ্রুত ভাববে, ততই মঙ্গল। প্রধানত সতর্কতা ও সচেতনতার মাধ্যমে এই প্রাণঘাতী রোগ প্রতিহত করে অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
লেখক : একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
No comments