জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রলীগ সামলাবে কে?

চাপাতি, রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মারমুখী ভঙ্গিতে ছুটছে একদল তরুণ। প্রতিপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে প্রবল পরাক্রমে, ভাংচুর চালাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে এমন সব ছবি। ঘটনার বিবরণ না জানলে মনে হতে পারে, উচ্ছৃঙ্খল কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী বুঝিবা কোনো হত্যা ও দখলের লড়াইয়ে মত্ত। কিন্তু সত্য হলো, ছবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া ছাত্রদের।


আর এ ছাত্ররা সবাই ছাত্রলীগের সদস্য। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ কর্মীদের সন্ত্রাস, সংঘর্ষ নতুন কোনো খবর নয়। প্রায় নিয়মিতভাবেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের খবর আসে। কখনও কখনও প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালেও অধিকাংশ সময়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা অভ্যন্তরীণ কলহের কারণেই সংবাদ তৈরি করছে। অভ্যন্তরীণ কলহের জের ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের হাতে নিহত হয়েছেন এক ছাত্র। এ ঘটনার রেশ থাকতে থাকতেই সংঘর্ষে জড়ালো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীরা। ছাত্রলীগের মধ্যকার এই সংঘাত-সংঘর্ষ নিয়ে নাগরিকরা নানাভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো উদ্বেগই কাজে আসেনি। ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত হয়নি, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের সংঘাত-সংঘর্ষজনিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম বরং বেড়েছে। প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগের মধ্যে এই বিভেদ ও অনৈক্য কেন? একি নিরাময়-অযোগ্য কোনো ব্যাধি? বলাবাহুল্য, ছাত্রলীগের মধ্যে নানা উপদলের যে বিভেদ ও সংঘাত তার পেছনে কোনো মতাদর্শিক কারণ নেই। বরং নানা স্বার্থসিদ্ধি ও সুবিধার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বিমতই এই সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক রাজনীতির নেতারা ছাত্রলীগের বিভাজনকে উস্কে দিচ্ছেন, কোথাও-বা কোনো রাজনৈতিক নেতার আশকারা আছে। অনেক জায়গায় নিজেদের উদ্যোগেই ছাত্রলীগ কর্মীরা বিভিন্ন পক্ষে ভাগ হয়ে গেছেন। এই বিভাজিত উপদলগুলো যে কোনো আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করছে না সেটি সবার বোধগম্য। চাঁদাবাজি, বখরা আদায়, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারই সংঘর্ষের কারণ। প্রশ্ন হলো, এ বিভাজন মেটানোর দায়িত্ব কার? সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উচিত সংগঠনের শাখাগুলোতে বিভিন্ন উপদলের বিরোধ মেটানোর দায়িত্ব নেওয়া। সাধারণত দেখা যায়, কোনো শাখায় অঘটন ঘটলেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতারা সাংগঠনিক বহিষ্কারাদেশ দেন। প্রশ্ন হলো, অঘটন ঘটবার আগে কি তারা জানতে পারেন না? জানলেও ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয় না। সংগঠনের স্বার্থে ছাত্রলীগের উচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ফেলা। সরকার-সংশ্লিষ্ট সংগঠন বলে এ ক্ষেত্রে সরকারেরও দায় আছে। সরকারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তিও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরণীয় কোন্দল মেটানোর দায়িত্ব পেতে পারেন। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটি দুঃখজনক। সন্ত্রাস প্রতিরোধ যেখানে সরকারের মুখ্য মনোযোগের বিষয়, সেখানে সরকার সমর্থিত একটি সংগঠন একের পর এক সন্ত্রাস সৃষ্টি করেও বহাল তবিয়তে থাকছে কীভাবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে ছাত্রলীগের অপকর্মের রাশ টেনে ধরা দরকার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় উপস্থিত থেকেও কেন পদক্ষেপ নিতে পারে না সেটি বের করা দরকার। যদি প্রকাশ্য দিবালোকের সরব একটি সংঘাতেই তাদের ভূমিকা হয় নীরব দর্শকের মতো তবে চাঁদাবাজি, বখরা আদায়ের মতো নীরব অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে তাদের ভূমিকা কী? এ ক্ষেত্রে সরকারের তরফে নির্দেশনা আসা উচিত। আমরা চাই, একটি নিয়মতান্ত্রিক ও সুন্দর ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করুক। এ জন্য সরকারের আন্তরিক উদ্যোগই এখন সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.