ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলে : সতর্ক না হলে মাশুল গুনতে হবে
বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ার যে খবর গতকাল আমার দেশ শেষের পাতায় ছেপেছে, সেটাকে উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশে বৃষ্টি কম হওয়া এবং অব্যাহতভাবে মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলনের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গত কয়েক বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে রাজশাহী অঞ্চলের পরিবেশ ও মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর। রাজশাহীতে এ বছর বৃষ্টি স্বাভাবিকের চেয়ে একেবারেই কম হয়েছে। ফলে ২০০৮ সালের মে মাসের চেয়ে এ বছর মে মাসে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৪০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে গেছে। পানির স্তরের এই নিম্নগামী প্রবণতা প্রকট হয়ে ওঠে ১৯৯৬ সাল থেকে। এরপর মাত্র একবার ২০০০ সালে এখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা উপরে উঠেছিল। তাও অবস্থান ছিল ১৯৯৬ সালের স্তরের চেয়ে নিচে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এবার বিএমডিএ’র প্রকল্প এলাকায় বোরো মৌসুমে অনেক গভীর নলকূপে পানি না পাওয়া গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাই এবার এখানে সব জমিতে বোরো চাষ সম্ভব না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নিচে নেমে যাওয়ার জন্য আমন মৌসুমে বৃষ্টি কম হওয়াকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, বৃষ্টি কম হওয়ায় আমন ফলন ঠিক রাখার জন্য অনেক বেশি পানি সেচ দিতে হয়েছিল। কিন্তু এই মতবাদের প্রবক্তারাও পানির স্তর আবার উপরে ওঠে আসার অথবা নিচে নেমে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হওয়ার কথা জোর গলায় বলতে পারছেন না মূলত জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের কারণে।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ার প্রবণতা কেবল বরেন্দ্র অঞ্চলের সমস্যা নয়। দেশজুড়ে পানির স্তর যে নেমে যাচ্ছে এবং এই নেমে যাওয়া ঠেকাতে যে কিছুই করা হচ্ছে না—নিয়মিত পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় খোদ রাজধানী ঢাকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে প্রতিবছর, বিশেষ করে প্রাক-বর্ষা মৌসুমে পানির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হয়। এর জন্য আবহাওয়াগত বিপর্যয়কে দায়ী করা হলেও এ বিপর্যয় যে মানুষই সৃষ্টি করেছে, সে কথা আমরা মনে রাখি না। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে সংযমী হওয়া এবং ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ ও অধিক ব্যবহারের বিষয়গুলো এখনও আমাদের দেশে তাত্ত্বিক আলোচনার উপাদান হয়ে আছে। ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের জন্য নতুন জলাশয় খনন করা এখন একেবারে বন্ধ। পুরনো জলাশয়গুলো সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগও তেমন একটা দৃশ্যমান নয়। বরং শহরাঞ্চলে এবং শহরতলিতে বিদ্যমান পুকুরগুলো ভরাট করার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। জলাশয় ভরাট করে ফেলায় পানির গুরুত্বপূর্ণ উত্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাছও উধাও হয়েছে; সেই সঙ্গে ধ্বংস হয়েছে জলাশয়কেন্দ্রিক সবুজের সমারোহ। ফলে ক্রমেই বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো এমন দিন অদূর ভবিষ্যতে আসবে, যখন গভীর নলকূপ গভীরতর করেও ভূগর্ভস্থ পানির নাগাল পাওয়া যাবে না। তাই সময় নষ্ট না করে এ অবস্থার প্রতিকারের জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে এবং সচেতনতাকে সক্রিয়তায় রূপান্তরিত করতে হবে।
এ কথা ঠিক যে, মানুষের অবিমৃষ্যকারিতার ফলে দুনিয়াজুড়ে জলবায়ুর যে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে, তার বিরূপ প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত নই। এই মহাবিপর্যয় থেকে পৃথিবী নামের গ্রহটিকে রক্ষার উপায় নির্ধারণের ব্যাপারে একমত হওয়া যাচ্ছে না শিল্পোন্নত দেশগুলোর অসহযোগিতার কারণে। কোপেনহেগেনে চলমান ধরিত্রী সম্মেলনও শেষ পর্যন্ত অশ্বডিম্বের বেশি কিছু প্রসব করবে বলে মনে হয় না। ভূ-প্রকৃতি স্বাভাবিক রাখার চেয়ে যখন কর্পোরেট হাউসগুলোর মুনাফা সংরক্ষণ বেশি গুরুত্ব পেতে থাকে, তখন বেশি কিছু আশা না করাই ভালো। তবে বিশ্বব্যাপী এই বিপর্যয়ের পাশাপাশি আমরা নিজেরাও যে নির্বুদ্ধিতা ও অদূরদর্শিতার কারণে নিজেদের পায়ে কুঠার মারছি, সে কথা স্বীকার করতেই হবে। ব্যাপকভাবে বৃক্ষ নিধন করে, যথাসময়ে নদীর পলি না সরিয়ে, একের পর এক খাল ও জলাশয় ভরাট করে এবং প্রাণপণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপন্ন করে তুলেছি। এখন এর বিপরীত পথে হাঁটতে শুরু করা ছাড়া এ বিপদ থেকে উদ্ধারের বিকল্প নেই।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ার প্রবণতা কেবল বরেন্দ্র অঞ্চলের সমস্যা নয়। দেশজুড়ে পানির স্তর যে নেমে যাচ্ছে এবং এই নেমে যাওয়া ঠেকাতে যে কিছুই করা হচ্ছে না—নিয়মিত পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় খোদ রাজধানী ঢাকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে প্রতিবছর, বিশেষ করে প্রাক-বর্ষা মৌসুমে পানির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হিমশিম খেতে হয়। এর জন্য আবহাওয়াগত বিপর্যয়কে দায়ী করা হলেও এ বিপর্যয় যে মানুষই সৃষ্টি করেছে, সে কথা আমরা মনে রাখি না। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে সংযমী হওয়া এবং ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ ও অধিক ব্যবহারের বিষয়গুলো এখনও আমাদের দেশে তাত্ত্বিক আলোচনার উপাদান হয়ে আছে। ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের জন্য নতুন জলাশয় খনন করা এখন একেবারে বন্ধ। পুরনো জলাশয়গুলো সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগও তেমন একটা দৃশ্যমান নয়। বরং শহরাঞ্চলে এবং শহরতলিতে বিদ্যমান পুকুরগুলো ভরাট করার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। জলাশয় ভরাট করে ফেলায় পানির গুরুত্বপূর্ণ উত্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাছও উধাও হয়েছে; সেই সঙ্গে ধ্বংস হয়েছে জলাশয়কেন্দ্রিক সবুজের সমারোহ। ফলে ক্রমেই বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো এমন দিন অদূর ভবিষ্যতে আসবে, যখন গভীর নলকূপ গভীরতর করেও ভূগর্ভস্থ পানির নাগাল পাওয়া যাবে না। তাই সময় নষ্ট না করে এ অবস্থার প্রতিকারের জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে এবং সচেতনতাকে সক্রিয়তায় রূপান্তরিত করতে হবে।
এ কথা ঠিক যে, মানুষের অবিমৃষ্যকারিতার ফলে দুনিয়াজুড়ে জলবায়ুর যে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে, তার বিরূপ প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত নই। এই মহাবিপর্যয় থেকে পৃথিবী নামের গ্রহটিকে রক্ষার উপায় নির্ধারণের ব্যাপারে একমত হওয়া যাচ্ছে না শিল্পোন্নত দেশগুলোর অসহযোগিতার কারণে। কোপেনহেগেনে চলমান ধরিত্রী সম্মেলনও শেষ পর্যন্ত অশ্বডিম্বের বেশি কিছু প্রসব করবে বলে মনে হয় না। ভূ-প্রকৃতি স্বাভাবিক রাখার চেয়ে যখন কর্পোরেট হাউসগুলোর মুনাফা সংরক্ষণ বেশি গুরুত্ব পেতে থাকে, তখন বেশি কিছু আশা না করাই ভালো। তবে বিশ্বব্যাপী এই বিপর্যয়ের পাশাপাশি আমরা নিজেরাও যে নির্বুদ্ধিতা ও অদূরদর্শিতার কারণে নিজেদের পায়ে কুঠার মারছি, সে কথা স্বীকার করতেই হবে। ব্যাপকভাবে বৃক্ষ নিধন করে, যথাসময়ে নদীর পলি না সরিয়ে, একের পর এক খাল ও জলাশয় ভরাট করে এবং প্রাণপণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপন্ন করে তুলেছি। এখন এর বিপরীত পথে হাঁটতে শুরু করা ছাড়া এ বিপদ থেকে উদ্ধারের বিকল্প নেই।
No comments