শেয়ারবাজার-আস্থা দূর অস্ত!

দেশের শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয়, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও গত ১১ মাসে দরপতনের ধারা রোধ করা যায়নি। অথচ এই একই সময়ে এক হাজার ৬শ' কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।


এখন শেয়ারবাজার এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, দরপতন শেষ পর্যন্ত সূচককে আর কত নিচে নামিয়ে আনবে তা নিয়ে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী আতঙ্কগ্রস্ত। লক্ষ্য করার বিষয়, শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও এতে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। এ জন্য বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতাকে দায়ী করেছেন অনেকে। কেন বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীরা আস্থা স্থাপন করতে পারছেন না সেটাই এখন জিজ্ঞাস্য। তদুপরি সম্ভাব্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির প্রভাব কতটুকু বাজারের ওপর পড়বে সে সম্পর্কেও অনেকে চিন্তিত। ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট তো আছেই। সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করায় এখানেও তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদানের সামর্থ্য হ্রাস পাওয়ায় তারা ঋণের সুদহার বৃদ্ধি করেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারের ওপরও পড়ছে। তারপরও শেয়ারবাজারের সূচক এতটা নিম্নমুখী হওয়ার বস্তুগত যথেষ্ট কারণ নেই। এখন বাজারে শেয়ারের সংখ্যা কম নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারও বাজারে আসার অপেক্ষায়। সুতরাং শেয়ারের সংখ্যাস্বল্পতা বাজারের নিম্নমুখিনতার জন্য দায়ী নয়। এখানেও ঘুরেফিরে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতাকেই দায়ী করা যায়। এই আস্থাহীনতা সৃষ্টির জন্য সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অ্যাক্টরকে দায়ী করা চলে। সরকার বাজারকে শক্তিশালী করার জন্য অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। তবে অধিকাংশই এলোমেলোভাবে। আবার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা বলায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমেছে। তবে আশার কথা এই যে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের এহেন নাজুক পরিস্থিতিতেও অনেকে এখান থেকে নিজেদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেননি। প্রায় সবাই সন্দিগ্ধ মন ও তীক্ষষ্টদৃষ্টি নিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। তাই দোদুল্যমান ও হতাশ বিনিয়োগকারীদের বাজারের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে এ মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাহলেই এক সময় বাজার স্থিতিশীল হবে।

No comments

Powered by Blogger.