সুন্দর শহরের নিঃসঙ্গতা by কাজী জহিরুল ইসলাম
সূর্য ঢলে পড়েছে। রোমান সভ্যতার কনক্রিটের আড়ালে তরতর করে নেমে যাচ্ছে সোনায় মোড়ানো উটপাখির ডিমের মতো গোলগাল অস্তগামী সূর্য। গ্রীষ্মের বিকালকে পেছনে ফেলে একপশলা শীতল হাওয়া অড্রিয়াটিক সমুদ্র থেকে উঠে এসে চোখে-মুখে বেহেশতি ঝাপ্টা দিয়ে গেল।
ব্রিনডিসি বন্দরে বসে বসে ভাবছি কোথায় যাব? গ্রিসে যাব, এটা ঠিক করেই রেখেছি; কিন্তু গ্রিসের কোথায়? এখান থেকে জাহাজে চড়ে দুটি জায়গায় যাওয়া যায়—ইগুমেনিত্সা অথবা এথেন্স। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, ইগুমেনিত্সায় যাব, এথেন্সে হয়তো যাওয়ার সুযোগ আরও আসবে; কিন্তু গ্রিসের থেসপ্রোটিয়া রাজ্যের রাজধানী ইগুমেনিত্সায় যাওয়ার সুযোগ হয়তো আর না-ও আসতে পারে।
ইতালি থেকে গ্রিস, সারারাতের জাহাজ ভ্রমণ। অড্রিয়াটিকের সুবিশাল নীল জলরাশি পেরিয়ে সকাল আটটায় জাহাজ ভিড়ল ইগুমেনিত্সায়। গিয়ে উঠলাম এক বুড়ির হোটেলে। তেমন কোনো ভিড় নেই রাস্তায়, মানুষের চলায়-বলায়ও তেমন কোনো তাড়া আছে বলে মনে হয় না। এই শহরের মানুষ যেন সবাই এক হলিডে মুডে আছে। প্রথম দিনটা মোটামুটি হোটেলে বসে-শুয়েই কাটিয়ে দিলাম। পরদিন ভোরেই একটি ঝোলা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে গেলাম জাহাজ ঘাটে। ট্যুরিস্টদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জাহাজ ঘাটেই পাওয়া যাবে। অড্রিয়াটিকের পাড়ে শুয়ে থাকা ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক বন্দর শহর ইগুমেনিত্সা। অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক লীলাবৈচিত্র্যের শহর। একদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের সারি, অন্যদিকে বালুকাময় বিচ, আবার কোথাও কোথাও পাথুরে রকি বিচ। জলপাই বাগানের সারি যেমন আছে, তেমনি আছে সারি সারি মাইল দীর্ঘ ঘন সবুজ ঝাউবন। পথের পাশে সারি সারি আপেল, কমলা ও নাশপাতির গাছ। নাশপাতি-আপেল গাছগুলো ফলে ঠাসা। পথের পাশে পড়ে বিছিয়ে আছে আপেল-নাশপাতি, কেউ ছুঁয়েও দেখছে না। বাড়িতে বাড়িতে আঙুরের মাচা, ঝুলে আছে সবুজ আঙুরের থোকা। ইগুমেনিত্সা শহর হলেও এই শহরে টিপিক্যাল ইউরোপীয় শহরগুলোর মতো শহুরে ভাবটা নেই। অবশ্য আমি এই জিনিসটা লক্ষ্য করেছি ভূমধ্যসাগর এবং অড্রিয়াটিক সাগরের তীরবর্তী প্রায় সবক’টি দেশের ছোট শহরেই। পশ্চিম ইউরোপের মানুষের মধ্যে যেমন গাড়ি ছেড়ে দিল, গাড়ি ছেড়ে দিল ভাব—এই তাড়াহুড়োটা অড্রিয়াটিকের পাড়ে প্রায় কোথাও নেই। ফলে একটা গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতা এই শহরগুলোতে পরিলক্ষিত হয়।
ইগুমেনিত্সা শহরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এই শহরের বিচগুলো। দ্রেপানো এবং মাক্রিগিয়ালি বিচে রয়েছে অসংখ্য সুপরিসর রিসোর্ট। ইগুমেনিত্সা শহর থেকে সমুদ্র উপকূলে ২৪ কিলোমিটার পথ অবধি অসংখ্য সুন্দর বিচের সারি। মনে হতে পারে একটি লম্বা সৈকত মানে তো একটিই বিচ, অসংখ্য বিচ হয় কেমন করে? একটি লম্বা সৈকত কিছুদূর পরপর যখন লোকালয় বদল করতে থাকে তখন প্রতিটি লোকালয়ের নিজস্ব নাম তো থাকতেই পারে। ইগুমেনিত্সার উল্লেখযোগ্য বিচগুলো হচ্ছে—জাভিয়া, মেগা আমোস, আগিয়া পারাসকেভি, বেলা ভ্রাকা এবং আরও অনেক।
আমি একটি বাসে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। বাসটি আমাকে নিয়ে গেল জাভিয়া বিচে। পাশের আসনে বসা ভদ্রমহিলার সঙ্গে কিছুটা আলাপ জমাতে চাইলাম। মহিলার ইংরেজি জ্ঞান এতই কম যে, তেমন সুবিধা হলো না। তাছাড়া ভদ্রমহিলার অতি সংক্ষিপ্ত স্নানবস্ত্রের দিকে এগোতে আমার সাহসেও তেমন কুলোচ্ছে না। আগুনবতী যৌবনা এক গ্রিক নারীর রূপের আগুনে আমার চোখ ঝলসে গেলেও কোনো এক অমোঘ শাসন আমার মনকে ঠিকই সংযত রাখছে। গ্রিক সভ্যতার পাদপীঠে এসে নীল দরিয়ার জলে আমার সংযম ভেসে যাচ্ছে না।
ইগুমেনিত্সায় এসে একটি জিনিস উপলব্ধি করছি, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যও পানসে লাগে যদি নিঃসঙ্গতা নামক দৈত্যটি কাউকে চেপে ধরে। আমি এখন একা। চারপাশে এত মানুষ বিচে হুড়োহুড়ি করছে, রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে, সাঁতার কাটছে; কিন্তু এরা আমার কেউ নয়, এত মানুষের ভেতরে থেকেও আমি একা। বিচে এক সারি পাম গাছ, আমি রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে পাম গাছের নিচে গিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলাম। হু হু করে যে হাওয়াটা এসে আমার গায়ে লাগছে, এ যেন কারও বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস। দুপুর হেলে পড়েছে। হাজার হাজার নারী-পুরুষ অড্রিয়াটিকের পানিতে জলকেলি করছে। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। ক্ষুিপপাসা নিবৃত্ত করার জন্য রেস্টুরেন্টে গেলাম। বিচ-রেস্টুরেন্টের মালিক নিজেই এগিয়ে এলেন। আমার মতো চামড়ার ট্যুরিস্ট সাধারণত ইগুমেনিত্সায় তেমন একটা দেখা যায় না। আমাকে দেখে তিনি অবাকই হলেন। পরিচয় জানতে পেরে দীর্ঘদেহী রেস্টুরেন্ট মালিক খুব খুশি হলেন। বাংলাদেশীরা খুব পরিশ্রমী। এথেন্সে আমার রেস্টুরেন্ট ছিল। এক বাংলাদেশী ছেলে কাজ করত আমার রেস্টুরেন্টে। সাঈদ, খুব ভালো ছেলে। সারাদিন কাজ করত, আর খুব হাসি-খুশি ছিল। আমি এথেন্সের ব্যবসা বন্ধ করে ইগুমেনিত্সায় চলে আসি তিন বছর আগে। আমি মাছ খেতে চাইলে ও আমাকে এক প্লেট মলা-ঢেলা জাতীয় মাছ তেলে ভেজে এনে দিল। সঙ্গে ছোট ছোট করে কাটা বাগেজ জাতীয় শক্ত রুটি। মাছের প্লেটের চারপাশে পেঁয়াজ-টমেটোর কুচি আর লেটুস পাতার সজ্জা। দেখতে যত সুন্দর, খেতে ততই বিস্বাদ। মাছের পেট ফেলেনি, আঁশ ফেলেনি। তিতকুটে স্বাদ। তাছাড়া লবণ-মরিচের তো কোনো গন্ধও নেই।
বিকালে খুব বিষণ্ন মন নিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। হোটেল থেকে নেমে সন্ধ্যায় শহরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। পার্কে বসে থাকলাম। জাহাজ ঘাটে গেলাম। অস্তগামী সূর্য অড্রিয়াটিকের নীল জলের ভেতর ডুবে যাচ্ছে। একটি জাহাজ ভেঁপু বাজিয়ে নোঙ্গর তুলে কোনো দূরের গন্তব্যে যাত্রা করছে। আমার দু’চোখ থেকে তখন অড্রিয়াটিকের লোনা জলের ধারা গড়াতে শুরু করেছে। আমার কেবল চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করছে—থামো, আমাকেও নিয়ে যাও, আমার প্রিয়জনের কাছে। আমি এই সুন্দর শহরের নিঃসঙ্গতা আর সইতে পারছি না।
লেখক : কবি, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা
ইতালি থেকে গ্রিস, সারারাতের জাহাজ ভ্রমণ। অড্রিয়াটিকের সুবিশাল নীল জলরাশি পেরিয়ে সকাল আটটায় জাহাজ ভিড়ল ইগুমেনিত্সায়। গিয়ে উঠলাম এক বুড়ির হোটেলে। তেমন কোনো ভিড় নেই রাস্তায়, মানুষের চলায়-বলায়ও তেমন কোনো তাড়া আছে বলে মনে হয় না। এই শহরের মানুষ যেন সবাই এক হলিডে মুডে আছে। প্রথম দিনটা মোটামুটি হোটেলে বসে-শুয়েই কাটিয়ে দিলাম। পরদিন ভোরেই একটি ঝোলা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে গেলাম জাহাজ ঘাটে। ট্যুরিস্টদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জাহাজ ঘাটেই পাওয়া যাবে। অড্রিয়াটিকের পাড়ে শুয়ে থাকা ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক বন্দর শহর ইগুমেনিত্সা। অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক লীলাবৈচিত্র্যের শহর। একদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের সারি, অন্যদিকে বালুকাময় বিচ, আবার কোথাও কোথাও পাথুরে রকি বিচ। জলপাই বাগানের সারি যেমন আছে, তেমনি আছে সারি সারি মাইল দীর্ঘ ঘন সবুজ ঝাউবন। পথের পাশে সারি সারি আপেল, কমলা ও নাশপাতির গাছ। নাশপাতি-আপেল গাছগুলো ফলে ঠাসা। পথের পাশে পড়ে বিছিয়ে আছে আপেল-নাশপাতি, কেউ ছুঁয়েও দেখছে না। বাড়িতে বাড়িতে আঙুরের মাচা, ঝুলে আছে সবুজ আঙুরের থোকা। ইগুমেনিত্সা শহর হলেও এই শহরে টিপিক্যাল ইউরোপীয় শহরগুলোর মতো শহুরে ভাবটা নেই। অবশ্য আমি এই জিনিসটা লক্ষ্য করেছি ভূমধ্যসাগর এবং অড্রিয়াটিক সাগরের তীরবর্তী প্রায় সবক’টি দেশের ছোট শহরেই। পশ্চিম ইউরোপের মানুষের মধ্যে যেমন গাড়ি ছেড়ে দিল, গাড়ি ছেড়ে দিল ভাব—এই তাড়াহুড়োটা অড্রিয়াটিকের পাড়ে প্রায় কোথাও নেই। ফলে একটা গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতা এই শহরগুলোতে পরিলক্ষিত হয়।
ইগুমেনিত্সা শহরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এই শহরের বিচগুলো। দ্রেপানো এবং মাক্রিগিয়ালি বিচে রয়েছে অসংখ্য সুপরিসর রিসোর্ট। ইগুমেনিত্সা শহর থেকে সমুদ্র উপকূলে ২৪ কিলোমিটার পথ অবধি অসংখ্য সুন্দর বিচের সারি। মনে হতে পারে একটি লম্বা সৈকত মানে তো একটিই বিচ, অসংখ্য বিচ হয় কেমন করে? একটি লম্বা সৈকত কিছুদূর পরপর যখন লোকালয় বদল করতে থাকে তখন প্রতিটি লোকালয়ের নিজস্ব নাম তো থাকতেই পারে। ইগুমেনিত্সার উল্লেখযোগ্য বিচগুলো হচ্ছে—জাভিয়া, মেগা আমোস, আগিয়া পারাসকেভি, বেলা ভ্রাকা এবং আরও অনেক।
আমি একটি বাসে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। বাসটি আমাকে নিয়ে গেল জাভিয়া বিচে। পাশের আসনে বসা ভদ্রমহিলার সঙ্গে কিছুটা আলাপ জমাতে চাইলাম। মহিলার ইংরেজি জ্ঞান এতই কম যে, তেমন সুবিধা হলো না। তাছাড়া ভদ্রমহিলার অতি সংক্ষিপ্ত স্নানবস্ত্রের দিকে এগোতে আমার সাহসেও তেমন কুলোচ্ছে না। আগুনবতী যৌবনা এক গ্রিক নারীর রূপের আগুনে আমার চোখ ঝলসে গেলেও কোনো এক অমোঘ শাসন আমার মনকে ঠিকই সংযত রাখছে। গ্রিক সভ্যতার পাদপীঠে এসে নীল দরিয়ার জলে আমার সংযম ভেসে যাচ্ছে না।
ইগুমেনিত্সায় এসে একটি জিনিস উপলব্ধি করছি, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যও পানসে লাগে যদি নিঃসঙ্গতা নামক দৈত্যটি কাউকে চেপে ধরে। আমি এখন একা। চারপাশে এত মানুষ বিচে হুড়োহুড়ি করছে, রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে, সাঁতার কাটছে; কিন্তু এরা আমার কেউ নয়, এত মানুষের ভেতরে থেকেও আমি একা। বিচে এক সারি পাম গাছ, আমি রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে পাম গাছের নিচে গিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলাম। হু হু করে যে হাওয়াটা এসে আমার গায়ে লাগছে, এ যেন কারও বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস। দুপুর হেলে পড়েছে। হাজার হাজার নারী-পুরুষ অড্রিয়াটিকের পানিতে জলকেলি করছে। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। ক্ষুিপপাসা নিবৃত্ত করার জন্য রেস্টুরেন্টে গেলাম। বিচ-রেস্টুরেন্টের মালিক নিজেই এগিয়ে এলেন। আমার মতো চামড়ার ট্যুরিস্ট সাধারণত ইগুমেনিত্সায় তেমন একটা দেখা যায় না। আমাকে দেখে তিনি অবাকই হলেন। পরিচয় জানতে পেরে দীর্ঘদেহী রেস্টুরেন্ট মালিক খুব খুশি হলেন। বাংলাদেশীরা খুব পরিশ্রমী। এথেন্সে আমার রেস্টুরেন্ট ছিল। এক বাংলাদেশী ছেলে কাজ করত আমার রেস্টুরেন্টে। সাঈদ, খুব ভালো ছেলে। সারাদিন কাজ করত, আর খুব হাসি-খুশি ছিল। আমি এথেন্সের ব্যবসা বন্ধ করে ইগুমেনিত্সায় চলে আসি তিন বছর আগে। আমি মাছ খেতে চাইলে ও আমাকে এক প্লেট মলা-ঢেলা জাতীয় মাছ তেলে ভেজে এনে দিল। সঙ্গে ছোট ছোট করে কাটা বাগেজ জাতীয় শক্ত রুটি। মাছের প্লেটের চারপাশে পেঁয়াজ-টমেটোর কুচি আর লেটুস পাতার সজ্জা। দেখতে যত সুন্দর, খেতে ততই বিস্বাদ। মাছের পেট ফেলেনি, আঁশ ফেলেনি। তিতকুটে স্বাদ। তাছাড়া লবণ-মরিচের তো কোনো গন্ধও নেই।
বিকালে খুব বিষণ্ন মন নিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। হোটেল থেকে নেমে সন্ধ্যায় শহরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। পার্কে বসে থাকলাম। জাহাজ ঘাটে গেলাম। অস্তগামী সূর্য অড্রিয়াটিকের নীল জলের ভেতর ডুবে যাচ্ছে। একটি জাহাজ ভেঁপু বাজিয়ে নোঙ্গর তুলে কোনো দূরের গন্তব্যে যাত্রা করছে। আমার দু’চোখ থেকে তখন অড্রিয়াটিকের লোনা জলের ধারা গড়াতে শুরু করেছে। আমার কেবল চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করছে—থামো, আমাকেও নিয়ে যাও, আমার প্রিয়জনের কাছে। আমি এই সুন্দর শহরের নিঃসঙ্গতা আর সইতে পারছি না।
লেখক : কবি, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর্মকর্তা
No comments