চরাচর-অলিপুর গেট : যেন মরণ ফাঁদ by শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সারা দেশের মানুষ এখন সোচ্চার। মানুষ চোখের সামনে দেখছে কিভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বজনরা মারা যাচ্ছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পেছনে যেমন চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর মনোভাব বিদ্যমান থাকে, তেমনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের থাকে চরম গাফিলতি কিংবা দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ।
চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আরো বেশি সোচ্চার হচ্ছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার ব্যাপারে। আমাদের সুশীল সমাজের লোকজন এ বিষয়ে দেশের যোগাযোগমন্ত্রীকে দোষারোপ করছেন। কেউ কেউ তাঁর পদত্যাগও দাবি করছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জে অলিপুর গেটে কত যে দুর্ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেছে কেউ তা হিসাব করে বলতে পারবে না। অভিযোগ আছে, এখানে রাস্তাটির স্থানে স্থানে ভেঙে যাওয়ায় তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। তাই সেখানে প্রতিনিয়তই গাড়িঘোড়া দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অলিপুর স্থানটিকে মানুষ মৃত্যুকূপ বলেই অভিহিত করে থাকে। রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। বলা হচ্ছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে রাস্তাঘাট মেরামত করার ব্যাপারে তেমন কিছুই করছে না। এক পরিসংখ্যান মতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি চালু হওয়ার পর থেকেই এই অলিপুর গেটে ছোটবড় ৩০০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ৩০ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। ওই পরিসংখ্যান মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষ আহত হয়েছে। প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এ কথাও বলা হয়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অলিপুর গেটে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছে পাঁচ শতাধিক মানুষ। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি নির্মাণের সময় হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জে অলিপুর বাসস্ট্যান্ডে একটি গোলচত্বর ও অলিপুর রেলস্টেশনের ওপর একটি ওভারব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল এর মূল নকশায়। বলা হচ্ছে, গোলচত্বর নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। অথচ রাস্তাটি নির্মাণের সময় রহস্যজনক কারণেই হোক কিংবা অন্য যেকোনো কারণেই হোক ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না জিও কম্পানি তৎকালীন সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে ম্যানেজ করে মূল নকশা থেকে গোলচত্বর ও ওভারব্রিজটি বাদ দিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি নির্মাণ করে। এখন সবাই বলাবলি করছে, বৃহত্তর সিলেট বিভাগের ঢাকাগামী কিংবা বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের জন্য জায়গাটি আপদ হয়ে উঠেছে। অভিযোগ হচ্ছে, মহাসড়কটির নির্মাণের পর থেকে অলিপুর রেললাইনের উভয় পাশে রাস্তা সবসময় ভাঙা থাকে। বর্তমান অবস্থায় রাস্তার পাথর উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পাথর এমনভাবেই উঠেছে যে, পাথরের নিচে যে রড থাকে সেগুলো পর্যন্ত উঠে গেছে। এ কথাগুলো আমার নয়, স্থানীয় সংবাদপত্রে এ ব্যাপারে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের জনগণের কথা মাথায় রেখে আসা করা যায়, এবার সরকার কিছু একটা করবে। সরকারের অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ি বৃহত্তর সিলেট বিভাগে। বলতে গেলে আমাদের সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বাড়ির কাছাকাছি অলিপুর গেটের অবস্থান। এ ছাড়া বৃহত্তর সিলেট বিভাগের আরো যাঁরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছাকাছি আছেন বা সরকারি দল কিংবা বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আছেন, তাঁদের কি দায়িত্ব নয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ-অলিপুর গেটের রাস্তা মেরামতের ব্যাপারে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবে এলাকাবাসী আশা করেন। অপমৃত্যু কারো কাম্য হতে পারে না। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, সরকার এবার মানুষের জন্য এগিয়ে আসবে।
শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল
শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য টুটুল
No comments