খাদ্য ও ওষুধে ভেজাল-সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে আগে

ভেজাল খাদ্য নিয়ে প্রতিবেদন হয়। নকল-ভেজাল ওষুধ নিয়েও কত প্রতিবেদন লেখা হলো। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসে। ফলাও করে টেলিভিশনেও তা প্রচার হয়। কিন্তু ফলটা দাঁড়ায় শূন্য। ভেজাল আর নকলের বেড়াজালে আটকে আছে যেন সব কিছু। ফুটপাতে খাবারের দোকানে অধিকাংশ সময় খাদ্য ভেজালযুক্ত হয় পারিপাশ্বর্িক কারণে।


ভেজাল মেশানো হয় ইচ্ছাকৃতভাবে বড় এবং মাঝারি প্রতিষ্ঠানে। বিএসটিআই নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে বাংলাদেশে। কেউ কি বলতে পারবে, প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে ভেজাল-নকল নিরোধ সম্ভব হয়েছে? খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অপরাপর দ্রব্যের মান সঠিক রাখার ক্ষেত্রে তাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত আছে, তা কি তারা যথাযথভাবে পালন করছে? সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং পাবলিক অ্যানালিস্টরা কি অর্পিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সততা বজায় রেখে চলেছেন? বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে সহজেই অনুমান করা যায়, তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো তাঁরা পালন করছেন না। করছেন না বলেই বাচ্চার গুঁড়ো দুধ থেকে শুরু করে আটা, ময়দা_হেন দ্রব্য নেই, যা ভেজালমুক্ত থাকছে। জিনিসপত্রের দামও, বিশেষ করে ওষুধপত্রের দামও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
আপাতদৃষ্টিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যা প্রচারমাধ্যমে আসে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, সিটি করপোরেশনের কিছুসংখ্যক স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং পাবলিক অ্যানালিস্টের একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধ অর্থের বিনিময়ে ভেজালকারীদের রক্ষা করছে। তাদের কাছ থেকে অনৈতিক এসব সুবিধাভোগী আবার সমাজের রাঘববোয়ালবিশেষ। ভেজাল নিরোধের লক্ষ্যে আমরা যেসব অভিযান মাঝেমধ্যে পরিচালিত হতে দেখতে পাই এবং ওইসব অভিযানে যাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তারা মূলত তৃণমূল পর্যায়ের খুবই দুর্বল প্রতিষ্ঠানের মালিক। কিন্তু যারা বৃহত্তর বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের ধারেকাছেও না গেলে সাধারণ মানুষের বিশুদ্ধ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না কোনোভাবেই।
ভেজাল নিরোধ করতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত গঠনের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে হাইকোর্টের। হাইকোর্টের সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একমাত্র ঢাকা জেলায় একটি খাদ্য আদালত গঠন করে বসে আছে। এতেই বোঝা যায়, ১৬ কোটি মানুষের নির্ভেজাল খাদ্যপ্রাপ্তি কতটা নিশ্চিত হতে পারে এই দেশে। এ পরিস্থিতিতে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি খাদ্য আদালত গঠনের কাজটি দ্রুত সময়ের মধ্যে করা উচিত। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি দুষ্টচক্র ভেঙে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সরকারকেই সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.