বিপিসির দুরবস্থা-লোকসান কাটিয়ে ওঠার পথ খুঁজে দেখা জরুরি

রাষ্ট্রীয় তেল (জ্বালানি) ক্রয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেনার দায়ে ডুবতে বসেছে। ১৮ সেপ্টেম্বর কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিবছর বিপিসিকে জ্বালানি তেল ক্রয় বাবদ আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়।


আগামী অর্থবছরে তা ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, মূল্য সমন্বয় না করলে অব্যাহতভাবে বিপুল ভর্তুকি দেওয়া বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। একই দিন কালের কণ্ঠে ভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশ, আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসের খরচ ও সময় বাঁচাতে গভীর সমুদ্রে পাইপলাইন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বিপিসি। বিপুল অর্থ ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে ৯ কোটি টাকা সাশ্রয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশ্নাতীতভাবেই বলা যায়, এই সাশ্রয় ডুবতে বসা বিপিসির জন্য ব্যাপক কল্যাণকর হবে এবং ভর্তুকির পরিমাণও হ্রাস পাবে।
বিপিসির যে সংকট দেখা দিয়েছে এর জন্য প্রয়োজন বিষয়টি সামগ্রিক নীতির আওতায় নিয়ে আসা। বিপিসি যে আর্থিক লোকসানে আছে, এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে দেখা জরুরি। বিদ্যুতের ঘাটতি ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিপিসির কাঁধে। বিদ্যুৎ সমস্যাও প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে উত্তরণের পথ সন্ধান সত্ত্বেও। বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি তেল সরবরাহের সময় একবার আর বিদ্যুৎ বিক্রির সময় আবার ভর্তুকি দিতে হয়। ভর্তুকির এই ধারা জাতীয় অর্থনীতিকেও আঘাত করছে। এ অভিযোগও মোটেই অমূলক নয় যে, বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি ভর্তুকির সুবিধা দেশের সাধারণ মানুষ পায় না। বেশি দামে জ্বালানি তেল আমদানি করে কম দামে তা সরবরাহ করে আবার সেখান থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনে নিচ্ছে সরকার। ফার্নেস অয়েলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন খরচ কম। কাজেই এ ব্যাপারে নতুন চিন্তাভাবনা জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল উৎপাদন হয়। বিপিসির লোকসানের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে এবং তা জাতীয় অর্থনীতির জন্য অমঙ্গলজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ঋণ কিংবা দেনার দায়ে জর্জরিত বিপিসি এই বোঝা কত দিন বইবে_সেটাও জরুরি প্রশ্ন।
সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে ঋণ নিয়ে চলছে বিপিসি। বিপিসির দেনা রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছেও। রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি যাতে লোকসান কাটিয়ে সাম্যের পথে আসতে পারে, সে জন্য দূরদর্শী পরিকল্পিত উদ্যোগ দরকার। সংস্থাটির তারল্য সংকট কাটানোর লক্ষ্যেও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে দরকার পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা গ্যাসের ওপর চাপ কমানো। পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের কারণে গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানো। লোকসান কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিশ্চয়ই কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সমন্বিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.