কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ-মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ফান্ডামেন্টালিস্ট by রণজিৎ বিশ্বাস
: আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারেন? সিরিয়াসলি বলছি। : আপদের কথা! বুঝতে না পারার কী আছে? আপনি কি মনে করেন, আপনি খুব কঠিন ভাষায় কথা বলেন! ইন্টারেস্টিং তো! : তেমন আমি শুধু শুধু মনে করতে যাব কেন! আমি কি উন্মাদ নাকি!
: আপনি উন্মাদ কি শিশু অথবা দুয়ের মিলনে-মিশ্রণে কোনো নিরপেক্ষ, তা আমি জানি না। তবে দীর্ঘদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি, নিজেকে অতিমূল্যায়নের একটি প্রবণতা আপনার ভেতর কাজ করে। প্রায়ই আপনি আপনার শ্রোতা ও পাঠককে জিজ্ঞেস করেন, বুঝতে পারছেন তো আমার কথা? বুঝতে না পারার কী আছে! আপনি 'ক' বললে আমি কলকাতা চলে যেতে পারি।
: অতটা যাবেন না! আপনারও বিপদ, আমারও বিপদ। মানুষ বিভ্রান্ত হবে, আমিও সন্ত্রস্ত থাকব।
: এ রকম বিপদ আপনার হয়েছে নাকি কখনো?
: বারবার। কিছু ঊনপাঠকের হাতে পড়ে অন্তত তিনবার_প্রতিবারই আমাকে উচ্চমূল্য দিতে হয়েছে। ক্যারিয়ারের মূল্য, নিদ্রার মূল্য, শান্তির মূল্য, সম্মানের মূল্য।
: একবার সন্তানসম্ভাবনাকালীন কুসংস্কার নিয়ে গল্প লিখলাম জোটকদলী। জোট সরকারের জন্মের ১২ বছর আগে। তা নিয়ে অসত্যের মোটবওয়া কিছু অপদার্থ ঘোট পাকিয়ে আমাকে বিশাল চোট দিয়ে বসল। বলল, আমি নাকি কোনো একটা ইনস্টিটিউশনকে কটা চোখ দেখিয়েছি। ওরা সবাই মিলে ল্যাঙের চোটে আমার ঠ্যাং ভেঙে দিল। আমি অনেক দিন তপ্ত সড়কে চেপ্টে যাওয়া ব্যাঙের মতো পড়ে থাকলাম। অনুবর্তীরা আমাকে পিষে পিষে আমার চারপাশে ঢ্যাঢাংঢ্যাং নেচে বেড়াল।
: আপনার জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতার কথা শুনতে চাই এবার। দুটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কথা বলুন।
: বলার মতো কোনো সাফল্য_অনেক আবাহনের পরও এখনো আমার দুবাহুর মাঝখানে ঝাঁপায়নি।
: কোনো সন্তোষের কথা?
: একটি আছে। বহু পুরনো। গৃহপরিচারিকার সার্টিফেটক। 'হেরা আমাগো ধর্মের না হইলেও মানুষ খরাপ না।'
: জীবনের দুটি প্রধান ব্যর্থতার কথা বলুন।
: এক সাগর ব্যর্থতা মন্থন করে দুটি তুলে আনা বড় কঠিন। তবু জানতে যখন চাইছেন বলি, প্রথম ব্যর্থতা_আমি সময়ের কাজ সময়ে করতে পারি না। দ্বিতীয় ব্যর্থ_মানুষ চিনতে আমি ভুল করি। বড় বেশি ভুল করি।
: নিজের ব্যাপারে যদি একরোখা হওয়ার অভিযোগ শোনেন, মানবেন?
: মানব। কন্ডিশনালি! একটি বিষয়ে আমি অবশ্যই একরোখা। মুক্তিযুদ্ধ। এ ব্যাপারে আপনি যদি আমাকে বলেন_মৌলবাদী, মানব; যদি বলেন_ফান্ডামেন্টালিস্ট, প্রতিবাদ করব না।
: এই মৌলবাদিতার ধরনটা কী রকম?
: আমার কয়েকটা বিশ্বাস দিয়ে কথাটা বলি। এক. মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমছে, রাজাকারের সংখ্যা বাড়ছে। দুই. স্বাধীনতাবিরোধীরা বদলায় না, মুক্তিযোদ্ধা বদলায়। তিন. রাজাকার পচে না, মুক্তিযোদ্ধা পচে এবং পচে গেলে ওরা রাজাকারের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়। চার. মুক্তিযোদ্ধারা সমাজের মাথা, মাথায় পচন ধরলে দেহের কোনো অংশ রক্ষা পায় না। পাঁচ. মুক্তিযোদ্ধা 'বাইচান্স' হতে পারে, রাজাকার কখনো 'বাইচান্স' হয় না। রাজাকাররা 'রাজাকার বাই কনভিকশন, বাই বিলিফ, বাই ঔথ্'। ছয়. মুক্তিযোদ্ধারা একাট্টা হতে পারে না, রাজাকাররা একাট্টা হয়েই থাকে। সাত. রাজাকাররা বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধাদের আনুকূল্য পায়, সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধারা তাদের দুশমনি ছাড়া কিছুই পায় না। আট. সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা কোনো দিন সাম্প্রদায়িক কিংবা ছদ্মসাম্প্রদায়িক হয় না, রাজাকার ও বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে তা হতে হয় এবং হয়ে থাকতে হয়। সেটিই তাদের পুঁজি। নয়. সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা কখনো মানবেতর হয়ে পাশকোতর প্রাণীর সঙ্গে দোস্তি করতে পারে না কিংবা এক পঙ্ক্তিতে বসে না। এবং দশ. সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা কখনো মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি ও জাতির জনককে হত্যা করতে পারে না অথবা হত্যাকারী ইডিয়টদের বলতে পারে না_এগিয়ে যেতে চাইলে তোমরা যেতে পারো, বাধা দেব না ভাবতে পারো।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
: অতটা যাবেন না! আপনারও বিপদ, আমারও বিপদ। মানুষ বিভ্রান্ত হবে, আমিও সন্ত্রস্ত থাকব।
: এ রকম বিপদ আপনার হয়েছে নাকি কখনো?
: বারবার। কিছু ঊনপাঠকের হাতে পড়ে অন্তত তিনবার_প্রতিবারই আমাকে উচ্চমূল্য দিতে হয়েছে। ক্যারিয়ারের মূল্য, নিদ্রার মূল্য, শান্তির মূল্য, সম্মানের মূল্য।
: একবার সন্তানসম্ভাবনাকালীন কুসংস্কার নিয়ে গল্প লিখলাম জোটকদলী। জোট সরকারের জন্মের ১২ বছর আগে। তা নিয়ে অসত্যের মোটবওয়া কিছু অপদার্থ ঘোট পাকিয়ে আমাকে বিশাল চোট দিয়ে বসল। বলল, আমি নাকি কোনো একটা ইনস্টিটিউশনকে কটা চোখ দেখিয়েছি। ওরা সবাই মিলে ল্যাঙের চোটে আমার ঠ্যাং ভেঙে দিল। আমি অনেক দিন তপ্ত সড়কে চেপ্টে যাওয়া ব্যাঙের মতো পড়ে থাকলাম। অনুবর্তীরা আমাকে পিষে পিষে আমার চারপাশে ঢ্যাঢাংঢ্যাং নেচে বেড়াল।
: আপনার জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতার কথা শুনতে চাই এবার। দুটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের কথা বলুন।
: বলার মতো কোনো সাফল্য_অনেক আবাহনের পরও এখনো আমার দুবাহুর মাঝখানে ঝাঁপায়নি।
: কোনো সন্তোষের কথা?
: একটি আছে। বহু পুরনো। গৃহপরিচারিকার সার্টিফেটক। 'হেরা আমাগো ধর্মের না হইলেও মানুষ খরাপ না।'
: জীবনের দুটি প্রধান ব্যর্থতার কথা বলুন।
: এক সাগর ব্যর্থতা মন্থন করে দুটি তুলে আনা বড় কঠিন। তবু জানতে যখন চাইছেন বলি, প্রথম ব্যর্থতা_আমি সময়ের কাজ সময়ে করতে পারি না। দ্বিতীয় ব্যর্থ_মানুষ চিনতে আমি ভুল করি। বড় বেশি ভুল করি।
: নিজের ব্যাপারে যদি একরোখা হওয়ার অভিযোগ শোনেন, মানবেন?
: মানব। কন্ডিশনালি! একটি বিষয়ে আমি অবশ্যই একরোখা। মুক্তিযুদ্ধ। এ ব্যাপারে আপনি যদি আমাকে বলেন_মৌলবাদী, মানব; যদি বলেন_ফান্ডামেন্টালিস্ট, প্রতিবাদ করব না।
: এই মৌলবাদিতার ধরনটা কী রকম?
: আমার কয়েকটা বিশ্বাস দিয়ে কথাটা বলি। এক. মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমছে, রাজাকারের সংখ্যা বাড়ছে। দুই. স্বাধীনতাবিরোধীরা বদলায় না, মুক্তিযোদ্ধা বদলায়। তিন. রাজাকার পচে না, মুক্তিযোদ্ধা পচে এবং পচে গেলে ওরা রাজাকারের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়। চার. মুক্তিযোদ্ধারা সমাজের মাথা, মাথায় পচন ধরলে দেহের কোনো অংশ রক্ষা পায় না। পাঁচ. মুক্তিযোদ্ধা 'বাইচান্স' হতে পারে, রাজাকার কখনো 'বাইচান্স' হয় না। রাজাকাররা 'রাজাকার বাই কনভিকশন, বাই বিলিফ, বাই ঔথ্'। ছয়. মুক্তিযোদ্ধারা একাট্টা হতে পারে না, রাজাকাররা একাট্টা হয়েই থাকে। সাত. রাজাকাররা বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধাদের আনুকূল্য পায়, সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধারা তাদের দুশমনি ছাড়া কিছুই পায় না। আট. সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা কোনো দিন সাম্প্রদায়িক কিংবা ছদ্মসাম্প্রদায়িক হয় না, রাজাকার ও বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে তা হতে হয় এবং হয়ে থাকতে হয়। সেটিই তাদের পুঁজি। নয়. সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা কখনো মানবেতর হয়ে পাশকোতর প্রাণীর সঙ্গে দোস্তি করতে পারে না কিংবা এক পঙ্ক্তিতে বসে না। এবং দশ. সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা কখনো মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি ও জাতির জনককে হত্যা করতে পারে না অথবা হত্যাকারী ইডিয়টদের বলতে পারে না_এগিয়ে যেতে চাইলে তোমরা যেতে পারো, বাধা দেব না ভাবতে পারো।
লেখক : কথাসাহিত্যিক
No comments