চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হ্রাসের আশঙ্কা এডিবিরঃ অবস্থা অতটা খারাপ মনে হয় না
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট অভ্যন্তরীণ উত্পাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর এডিবির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে, বিনিয়োগে মন্দা বিরাজ করছে, রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার লক্ষণ এবং কৃষি উত্পাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এডিবি প্রতিনিধিরা বলেছেন,বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশে সম্ভবত দেরিতে পড়েছে। বিশ্বমন্দা থাকলেও গত অর্থবছরে পরিবেশ অনেকটা অনুকূলে ছিল। এবার তা বেশ প্রতিকূল হয়ে পড়েছে। গত অর্থবছরে জিডিপির ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। কারণ সে সময় রফতানি, রেমিট্যান্স ও কৃষিতে অবস্থা ছিল ইতিবাচক। সেই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে প্রবৃদ্ধি অর্জন দূরে থাকুক, রফতানি আয় গত বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ কমে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার কারণে রফতানি খাতে এই নেতিবাচক প্রভাব বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। তবে মন্দা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করার পরও বাংলাদেশের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব বাড়তে থাকার পেছনে আরও একাধিক কারণ থাকতে পারে। রফতানি হ্রাস পাওয়ায় শিল্পোত্পাদন কমে যাবে। এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুত্ ঘাটতির বাধা তো রয়েছেই। রেমিট্যান্সে ভাটার টান লাগলে শিল্পপণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমে যাওয়া স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে অবস্থা ভালো নয়। এডিবি এবার কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করেছে। গত বছর এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এ বছর তা কমে ৪ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে এডিবির ধারণা। একইভাবে সেবাখাতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ার কথা বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা যে ভালো নয়, এ তিক্ত সত্য অস্বীকার করা যাবে না। সেনাসমির্থত জরুরি সরকারের তুঘলকি কর্মকাণ্ড এবং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার অভিঘাত আমাদেরকে বেশ ভালোরকম কাহিল করে ফেলেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও ব্যাপক তত্পরতা দরকার তার অনুপস্থিতিই অর্থনৈতিক স্থবিরতাকে প্রায় স্থায়ী করে ফেলেছে। এ কারণে দেশ-বিদেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশকে নিয়ে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা সফল হলে আমাদের অর্থনীতি অনেক আগেই ভেঙে পড়ার কথা ছিল। যেমন, আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো গেল অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে বলেছিল যে, জিডিপি যদি কোনোক্রমে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে তবে যেন আমরা নিজেদের ধন্য মনে করি। কিন্তু বাস্তবে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এখন যারা বলছেন যে সে সময়কার পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে ছিল, তারাই কিন্তু তখন নানান প্রতিকূলতা একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কেন এমনটি হয়েছিল তা বিশ্লেষণ করলে একাধিক কারণের খোঁজ পাওয়া যায়। যেমন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অকল্পনীয় স্ফীতমূল্য অতিদ্রুত এক-তৃতীয়াংশের নিচে নেমে আসে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ খাদ্যপণ্যের দামও সহনীয় পর্যায়ে এসে স্থিতিশীল হয়। এর পাশাপাশি আমাদের কঠোর পরিশ্রমী কৃষক শ্রেণী পরপর দু’মৌসুমে ফসল মার খাবার পর বোরো মৌসুমে সোনা ফলান। সেই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা পূরণ ও অভ্যন্তরীণ ক্রয়ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সব মিলিয়ে পণ্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যর্থ করে দিয়ে আমরা টিকে যাই।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি বাড়ার পরিবর্তে কমেছে, একথা ঠিক। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ধীরে ধীরে হলেও চাঙ্গাভাব ফিরে আসছে। রেমিট্যান্সে ধস নামার যে আশঙ্কা ছিল তার অনেকটাই কেটে গেছে বলা যায়। আমন ফলন মার খায়নি। বোরো উত্পাদন মার খাওয়ার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংকে জমে থাকা অলস তারল্য অনুত্পাদনশীল খাতে হু হু করে বেরিয়ে না পড়লে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টির কোনো হেতু নেই। তাই, অবস্থা যতটা খারাপ বলে এডিবি ধারণা করছে, বাস্তবতা তার চেয়ে ভিন্ন। এখন জরুরি হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়নখাতে সরকারের ব্যাপক বিনিয়োগ। প্রয়োজনে ব্যাংকের অলস তারল্য থেকে ঋণ নিয়ে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করা যায়। শুধু কঠোরভাবে ঠেকাতে হবে অপচয় আর দুর্নীতি। সরকারি উদ্যোগে উন্নয়ন কাজে গতি আসলে প্রচুর লোক কাজ পাবে, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। শিল্প ও কৃষি উত্পাদনে এই চাহিদা বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে কাটতে থাকা মন্দার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা যদি রফতানি বাড়াতে পারে তবে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকার কতটা আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেয় তার ওপর।
বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা যে ভালো নয়, এ তিক্ত সত্য অস্বীকার করা যাবে না। সেনাসমির্থত জরুরি সরকারের তুঘলকি কর্মকাণ্ড এবং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার অভিঘাত আমাদেরকে বেশ ভালোরকম কাহিল করে ফেলেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও ব্যাপক তত্পরতা দরকার তার অনুপস্থিতিই অর্থনৈতিক স্থবিরতাকে প্রায় স্থায়ী করে ফেলেছে। এ কারণে দেশ-বিদেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশকে নিয়ে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা সফল হলে আমাদের অর্থনীতি অনেক আগেই ভেঙে পড়ার কথা ছিল। যেমন, আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো গেল অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে বলেছিল যে, জিডিপি যদি কোনোক্রমে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে তবে যেন আমরা নিজেদের ধন্য মনে করি। কিন্তু বাস্তবে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এখন যারা বলছেন যে সে সময়কার পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে ছিল, তারাই কিন্তু তখন নানান প্রতিকূলতা একেবারে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কেন এমনটি হয়েছিল তা বিশ্লেষণ করলে একাধিক কারণের খোঁজ পাওয়া যায়। যেমন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অকল্পনীয় স্ফীতমূল্য অতিদ্রুত এক-তৃতীয়াংশের নিচে নেমে আসে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ খাদ্যপণ্যের দামও সহনীয় পর্যায়ে এসে স্থিতিশীল হয়। এর পাশাপাশি আমাদের কঠোর পরিশ্রমী কৃষক শ্রেণী পরপর দু’মৌসুমে ফসল মার খাবার পর বোরো মৌসুমে সোনা ফলান। সেই সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা পূরণ ও অভ্যন্তরীণ ক্রয়ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সব মিলিয়ে পণ্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যর্থ করে দিয়ে আমরা টিকে যাই।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি বাড়ার পরিবর্তে কমেছে, একথা ঠিক। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে ধীরে ধীরে হলেও চাঙ্গাভাব ফিরে আসছে। রেমিট্যান্সে ধস নামার যে আশঙ্কা ছিল তার অনেকটাই কেটে গেছে বলা যায়। আমন ফলন মার খায়নি। বোরো উত্পাদন মার খাওয়ার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। ব্যাংকে জমে থাকা অলস তারল্য অনুত্পাদনশীল খাতে হু হু করে বেরিয়ে না পড়লে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টির কোনো হেতু নেই। তাই, অবস্থা যতটা খারাপ বলে এডিবি ধারণা করছে, বাস্তবতা তার চেয়ে ভিন্ন। এখন জরুরি হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়নখাতে সরকারের ব্যাপক বিনিয়োগ। প্রয়োজনে ব্যাংকের অলস তারল্য থেকে ঋণ নিয়ে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করা যায়। শুধু কঠোরভাবে ঠেকাতে হবে অপচয় আর দুর্নীতি। সরকারি উদ্যোগে উন্নয়ন কাজে গতি আসলে প্রচুর লোক কাজ পাবে, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। শিল্প ও কৃষি উত্পাদনে এই চাহিদা বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে কাটতে থাকা মন্দার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা যদি রফতানি বাড়াতে পারে তবে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকার কতটা আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেয় তার ওপর।
No comments