যেভাবে সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হতে পারে-ভূমি ব্যবহার আইন by শমশের আলী
এই আইনের খসড়া ২০১১ সালের প্রথম দিকে তৈরি হলেও সর্বস্তরের মতামত সংগ্রহ করা হয়নি। দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এটি ২০১২ সালের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হবে আশা করছ কালো টাকার দৌরাত্ম্য, অশুভ শক্তির প্রভাব ও চাপে দেশের কৃষি, মৎস্য ও ভূমি ব্যবস্থায় অনেকখানি নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে ভূমি, জলাশয় ও জঙ্গল গ্রাস, ভূমি ও জলাশয় দূষণ, ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির ব্যাপকতা বৃদ্ধিসহ খুন-রাহাজানি বেড়েই চলেছে।
এসব রোধকল্পে অনেক দেরিতে হলেও সরকার দেশে ভূমি ব্যবহার আইন প্রণয়নে উদ্যোগী হয়েছে। ২০০১ সালে ভূমি ব্যবহার নীতিমালা প্রণয়নকালে এ ধরনের আইন তৈরির প্রস্তাবও ছিল। অজ্ঞাত কারণে তখন আইনটি প্রণয়ন হয়নি। বর্তমান সময়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। 'কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে আইন' শিরোনামে মোট ৫৮টি ধারা ও উপধারা সংবলিত এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আইন। এই আইনের খসড়া ২০১১ সালের প্রথম দিকে তৈরি হলেও সর্বস্তরের মতামত সংগ্রহ করা হয়নি। দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এটি ২০১২ সালের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হবে আশা করছি।
প্রস্তাবিত আইনের অনেক ভালো দিক আছে, যেমন_ ১৯৫০ সালের আইনের ৮৩ ধারার পরিবর্তন, ভূমি জোনিং মানচিত্র তৈরি এবং তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ, জমির ১১টি শ্রেণীবিন্যাস, পরিবেশ, জলাশয়-মৎস্য ও কৃষি জমির সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া, জমির ঊর্ধ্বমুখী ব্যবহারে গুরুত্ব আরোপ, আইন অমান্যকারীর শাস্তির বিধান ইত্যাদি। ওই আইনের খসড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সর্বস্তরের মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়া দরকার।
এই খসড়া আইনের কিছু কিছু বিষয়ে আমার মতামত তুলে ধরছি; ৪নং ধারায়_ কৃষি বলতে ধান-পাট-সবজি নাকি কোন ধরনের বাগানকে বোঝাবে তা নির্দিষ্ট করা দরকার। তা না হলে জমির সিলিং বাস্তবায়নের মতো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। ধারা-১২-তে আইন অমান্যকারীর শাস্তির বিধান খুবই স্বল্প (কারাদণ্ড মাত্র দুই বছর এবং অর্থদণ্ড মাত্র ১০ লাখ টাকা), তা ১০ গুণ বৃদ্ধি করা উচিত। জমির পূর্বাবস্থায় ফিরে আনার সব ব্যয় শাস্তির বিধানে থাকা দরকার। আইন ২০০১ সালের কোন নীতিমালা অনুসরণে করা হয়েছে তার উল্লেখ থাকা বাঞ্ছনীয়।
খসড়া আইনের মুখবন্ধে উলি্লখিত অধিক জনসংখ্যার চাপ কথাটি প্রাসঙ্গিক নয়। যখন ভূমিগ্রাসী-সন্ত্রাসীদের দ্বারা দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবার বাস্তুভিটাহীন, জনসংখ্যার চাপ কীভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনা বা কৃষিজমি হ্রাস বা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে তার গ্রহণযোগ্য কোনো গবেষণা প্রতিবেদন নেই। জনসংখ্যার চাপে সরকারি-বেসরকারি আধুনিক শহর, কলকারখানা, শিল্প স্থাপিত হয়নি বরং এগুলোর চাপে জনসংখ্যা নিষ্পেষিত। উপরন্তু কালো টাকা, ভূমিগ্রাসী, সন্ত্রাস, অধিক মুনাফা, সরকারি নীতি-আইনের তোয়াক্কা না করা এবং দুর্নীতির কারণে যথেচ্ছভাবে ভূমি ব্যবহার হওয়ার অন্যতম কারণ। এই আইনটি বাস্তবায়নে বর্তমান সিলিং ব্যবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান সিলিং ব্যবস্থায় কৃষি ও খামারের সংজ্ঞায় তারতম্য থাকায় ভূমি মালিকানার সীমা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জমি সিলিংয়ের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি, তা না হলে দেশের খাদ্যের জোগান ঠিক রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশের চাহিদা পূরণ না করে রফতানিমুখী খামার দেশের অর্থনীতিতে কুফল বয়ে আনছে। আমি মনে করি, খামারসহ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত জমি কৃষি জমি হিসেবে বিবেচনায় এনে সীমা ঠিক করা হোক অথবা খামারের ক্ষেত্রে একই সীমা ঘোষণা করা হোক। এ জন্য ১৯৫০ সালের আইনের ২০ (২) ধারার (১৯৮৪ সালে সংশোধিত অংশের) সংশোধন করা প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত আইনে ৪নং ধারায় উলি্লখিত এক বা দুই ফসলি বলতে কী বোঝায় তার ব্যাখ্যা থাকা জরুরি। কারণ জলাভূমি সংলগ্ন বা বছরে কিছু সময় জলমগ্ন থাকার কারণে যেখানে দু'একবার ধান, পাট, সবজি হয় তা অবশ্যই তিন ফসলি হবে। যেহেতু জলমগ্ন থাকার কারণে সেখানে মৎস্য চাষ হয়। অতএব, দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকা জরুরি।
এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের আরও চারটি মন্ত্রণালয়ের যোগসূত্র আছে, তা হচ্ছে : কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই আইনের সঙ্গে সরকারের ভূমি ব্যবহার নীতি, কৃষিনীতি, পানিনীতি, মৎস্যনীতি, পরিবেশ নীতির যোগসূত্র স্থাপন জরুরি। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার অপরিহার্যতা বিবেচনা করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আবাসিক, শিল্প, চিংড়ি ও জাহাজ ভাঙার এলাকা চিহ্নিত করার উল্লেখ আছে। তবে কীভাবে বা কী নীতি অনুসরণে তা নির্ধারণ হবে, উল্লেখ থাকা জরুরি।
ধারা-১১-তে উল্লেখ আছে : বিধি দ্বারা ভূমি জোনিং বাস্তবায়ন কমিটি গঠন ও কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে। তবে কোন কোন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি কমিটিতে থাকবেন তার উল্লেখ করা যেতে পারে।
এ ছাড়াও রাজস্ব কর্মকর্তারা এই আইন বাস্তবায়নের সঠিক মনিটরিং কীভাবে করবেন তার একটি মনিটরিং ফরমেট ও নিয়মিত মনিটরিং করার বিধান থাকা জরুরি।
শমশের আলী : গবেষক
প্রস্তাবিত আইনের অনেক ভালো দিক আছে, যেমন_ ১৯৫০ সালের আইনের ৮৩ ধারার পরিবর্তন, ভূমি জোনিং মানচিত্র তৈরি এবং তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ, জমির ১১টি শ্রেণীবিন্যাস, পরিবেশ, জলাশয়-মৎস্য ও কৃষি জমির সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া, জমির ঊর্ধ্বমুখী ব্যবহারে গুরুত্ব আরোপ, আইন অমান্যকারীর শাস্তির বিধান ইত্যাদি। ওই আইনের খসড়া মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সর্বস্তরের মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়া দরকার।
এই খসড়া আইনের কিছু কিছু বিষয়ে আমার মতামত তুলে ধরছি; ৪নং ধারায়_ কৃষি বলতে ধান-পাট-সবজি নাকি কোন ধরনের বাগানকে বোঝাবে তা নির্দিষ্ট করা দরকার। তা না হলে জমির সিলিং বাস্তবায়নের মতো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। ধারা-১২-তে আইন অমান্যকারীর শাস্তির বিধান খুবই স্বল্প (কারাদণ্ড মাত্র দুই বছর এবং অর্থদণ্ড মাত্র ১০ লাখ টাকা), তা ১০ গুণ বৃদ্ধি করা উচিত। জমির পূর্বাবস্থায় ফিরে আনার সব ব্যয় শাস্তির বিধানে থাকা দরকার। আইন ২০০১ সালের কোন নীতিমালা অনুসরণে করা হয়েছে তার উল্লেখ থাকা বাঞ্ছনীয়।
খসড়া আইনের মুখবন্ধে উলি্লখিত অধিক জনসংখ্যার চাপ কথাটি প্রাসঙ্গিক নয়। যখন ভূমিগ্রাসী-সন্ত্রাসীদের দ্বারা দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবার বাস্তুভিটাহীন, জনসংখ্যার চাপ কীভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনা বা কৃষিজমি হ্রাস বা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে তার গ্রহণযোগ্য কোনো গবেষণা প্রতিবেদন নেই। জনসংখ্যার চাপে সরকারি-বেসরকারি আধুনিক শহর, কলকারখানা, শিল্প স্থাপিত হয়নি বরং এগুলোর চাপে জনসংখ্যা নিষ্পেষিত। উপরন্তু কালো টাকা, ভূমিগ্রাসী, সন্ত্রাস, অধিক মুনাফা, সরকারি নীতি-আইনের তোয়াক্কা না করা এবং দুর্নীতির কারণে যথেচ্ছভাবে ভূমি ব্যবহার হওয়ার অন্যতম কারণ। এই আইনটি বাস্তবায়নে বর্তমান সিলিং ব্যবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান সিলিং ব্যবস্থায় কৃষি ও খামারের সংজ্ঞায় তারতম্য থাকায় ভূমি মালিকানার সীমা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জমি সিলিংয়ের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি, তা না হলে দেশের খাদ্যের জোগান ঠিক রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। দেশের চাহিদা পূরণ না করে রফতানিমুখী খামার দেশের অর্থনীতিতে কুফল বয়ে আনছে। আমি মনে করি, খামারসহ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত জমি কৃষি জমি হিসেবে বিবেচনায় এনে সীমা ঠিক করা হোক অথবা খামারের ক্ষেত্রে একই সীমা ঘোষণা করা হোক। এ জন্য ১৯৫০ সালের আইনের ২০ (২) ধারার (১৯৮৪ সালে সংশোধিত অংশের) সংশোধন করা প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত আইনে ৪নং ধারায় উলি্লখিত এক বা দুই ফসলি বলতে কী বোঝায় তার ব্যাখ্যা থাকা জরুরি। কারণ জলাভূমি সংলগ্ন বা বছরে কিছু সময় জলমগ্ন থাকার কারণে যেখানে দু'একবার ধান, পাট, সবজি হয় তা অবশ্যই তিন ফসলি হবে। যেহেতু জলমগ্ন থাকার কারণে সেখানে মৎস্য চাষ হয়। অতএব, দুই বা তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকা জরুরি।
এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের আরও চারটি মন্ত্রণালয়ের যোগসূত্র আছে, তা হচ্ছে : কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই আইনের সঙ্গে সরকারের ভূমি ব্যবহার নীতি, কৃষিনীতি, পানিনীতি, মৎস্যনীতি, পরিবেশ নীতির যোগসূত্র স্থাপন জরুরি। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার অপরিহার্যতা বিবেচনা করে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আবাসিক, শিল্প, চিংড়ি ও জাহাজ ভাঙার এলাকা চিহ্নিত করার উল্লেখ আছে। তবে কীভাবে বা কী নীতি অনুসরণে তা নির্ধারণ হবে, উল্লেখ থাকা জরুরি।
ধারা-১১-তে উল্লেখ আছে : বিধি দ্বারা ভূমি জোনিং বাস্তবায়ন কমিটি গঠন ও কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে। তবে কোন কোন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি কমিটিতে থাকবেন তার উল্লেখ করা যেতে পারে।
এ ছাড়াও রাজস্ব কর্মকর্তারা এই আইন বাস্তবায়নের সঠিক মনিটরিং কীভাবে করবেন তার একটি মনিটরিং ফরমেট ও নিয়মিত মনিটরিং করার বিধান থাকা জরুরি।
শমশের আলী : গবেষক
No comments