দীপ্ত টিভি’র কর্মকর্তা খুন: গ্রেপ্তার ৫, ওসি প্রত্যাহার

রাজধানীর রামপুরার মহানগর প্রজেক্ট এলাকায়  দীপ্ত টেলিভিশনের সম্প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহতের বাবা সুলতান আহমেদ বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় হত্যা মামলা করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আব্দুল লতিফ (৪৬), কুরবান আলী (২৪), মাহিন (১৮), মোজাম্মেল হক কবির (৫২) ও বাঁধন (২০)। ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন তামিম। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ডেভেলপার কোম্পানির মালিক এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক কর্মকর্তা ও বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলমের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. রুহুল কবির খান।

বলেন, ডেভেলপার জমির মালিককে ফ্ল্যাটটি বুঝিয়ে দেয়ার পরেও তৃতীয়পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। বৃহস্পতিবার সকালে জমির মালিক ভবনের সাত তলায় নিজের ফ্ল্যাটে কাজ করতে যায়। মামুনের সহযোগিতায় ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল লতিফসহ ২০ থেকে ২৫ জনকে নিয়ে দীপ্ত টিভি’র সম্প্রচার কর্মকর্তা ও জমির মালিকের ছেলে তানজিল জাহান ইসলাম তামিমের ওপর হামলা করে। আহত অবস্থায় তামিমকে মনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সুলতান আহমেদ বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. আব্দুল লতিফ (৪৬). কুরবান আলী (২৪), মাহিন (১৮), মোজাম্মেল হক কবির (৫২) ও বাঁধন (২০)।

বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতার ডেভেলপার কোম্পানির মালিকের ইন্ধনে তামিমের ওপর হামলার অভিযোগ তুলেছে নিহতের পরিবার। এ ছাড়া এ ঘটনায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির খান বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় দেখছি না। আমরা অপরাধ ও অপরাধী হিসেবে দেখছি। সে যে ই হোক তার দায় থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট দেবো। আমরা প্রাথমিকভাবে তার সম্পৃক্ততা পাচ্ছি। এই ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল তা তদন্তে উঠে আসবে। এ ছাড়া, মাদকের ওই কর্মকর্তাকে মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমরা তার সম্পৃক্ততার বিষয় তদন্ত করে দেখবো। বিএনপি নেতা রবিউল তিন নম্বর আসামি।

তিনি বলেন, জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্ব, সুতরাং তার তো দায় থাকবে। বাকিটা তদন্তে উঠে আসবে। এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। এ প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবীর বলেন, হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ইতিমধ্যে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তার অবহেলা পেয়েছি। ওই জমির মালিক নিহত তামিমের বাবা। সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজের সঙ্গে তাদের যে চুক্তি হয়, তাতে জমির মালিককে পাঁচটি ফ্ল্যাট দেয়ার কথা ছিল। এ পর্যন্ত ডেভেলপার কোম্পানির দুটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে, বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুনের শ্বশুরের কাছে বিক্রি করে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ। এ নিয়েই গত তিন বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের জন্য গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ড আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এজাহারনামীয় অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.