১৬ বছর দেশের ১৮ কোটি মানুষ মজলুম ছিলেন -সিলেটে আমীরে জামায়াত

শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, গত ১৬ বছর দেশের ১৮ কোটি মানুষ মজলুম ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন; এই সময়ে দেশের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু যারা এসব করেছে তারা এখন মুখ দেখাতে পারে না। প্রশ্ন রেখে ডা. শফিকুর রহমান বলেন- যদি মুখ দেখাতে না পারেন তাহলে এই জীবনের মূল্য কি? একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে  তাদের কর্মকাণ্ডে আমিও লজ্জিত। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে সিলেট জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সুধী সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন- আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের সবার উচিত জাতিকে ভালোবাসা। জাতির ভালোবাসা বাদ দিয়ে যদি নিজেদের আত্মতুষ্টি নিয়ে থাকি তাহলে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে সবাইকে এক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি উপস্থিত সুধী সমাজকে আহ্বান জানিয়ে বলেন- ঐক্যমতের জাতিকে কোনো ষড়যন্ত্রকারী পরাস্থ করতে পারবে না। এজন্য দেশের মানুষের মধ্যেও ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ার প্রয়াস থাকতে হবে। জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রেরণা যোগাতে হবে। তিনি বলেন- বর্তমানে যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় আছেন তারা কিছু সংস্কার করবেন। সংস্কারের পর একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া প্রধান কাজ।

সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত সুধী সমাবেশে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সিলেটের বিভিন্ন পর্যায়ের সুধীজনরা অংশ নেন। সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম। নগরের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলীর পরিচালনায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন, মজলিস শূরার সদস্য ও ইবনে সিনার চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, সিলেট দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, উত্তরের আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসেন খানসহ দলের সিনিয়র নেতারা। এর আগে বিকাল ৩টায় একইসঙ্গে কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। এতে জামায়াতের আমীর বলেন- ৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের ক্রেডিট কোনো দলের নয়, এর ক্রেডিট শুধু ছাত্র-জনতার। ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে। যদিও এর পেছনে আমাদের অনেক শহীদের ত্যাগ রয়েছে। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন মেধাবী সেনা অফিসারের ত্যাগ দিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ৫ই আগস্ট হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে। ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশে একটি সাময়িক পরিবর্তন হয়েছে। একে স্থায়ী রূপ দিতে হলে প্রয়োজন সৎলোকের শাসন ও আল্লাহর আইন। যেখানে দল-মতের ঊর্ধ্বে সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। আমরা কাজের মাধ্যমে দেশবাসীর প্রকৃত ভালোবাসা অর্জন করতে চাই। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু ভেদাভেদ চাই না। এমন সমাজ গঠন করতে চাই যেখানে মসজিদের মতো মন্দিরেও পাহারার প্রয়োজন হবে না।

যদি কেউ আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায় তাহলে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের রুখে দিতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হলে প্রথমে নিজেকে বদলাতে হবে। দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে কর্মী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সিলেট মহানগর জামায়াতের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। বেলা ৩টার আগেই কুশিয়ারা কনভেনশন হলের ভেতর লোকে লোকারণ্য হয়। উপস্থিত কর্মীদের জনস্রোতে এক সময় হলের বাহিরও কানায় কানায় পরিপূর্ণ হতে দেখা গেছে। মাজেদ মাহফুজের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সূচিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের সিলেট অঞ্চল টিম সদস্য হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আলিম হোসেন খান, সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, ড. নুরুল ইসলাম বাবুল ও জাহেদুর রহমান চৌধুরী, সাবেক ছাত্রশিবির নেতা সুলতান আহমদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শরীফ মাহমুদ প্রমুখ। সম্মেলনে একক ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রাসেদুল হাসান রাসেল। সম্মিলিত কণ্ঠে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন সিলেট সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীবৃন্দ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, দেড় যুগ পর দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ গঠনে আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে চাই। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ৫ই আগস্ট পরবর্তী দেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জামায়াত নেতৃবৃন্দ যেখানেই যাচ্ছেন মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছি।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.