ঢাকায় অটোরিকশা চার্জের কয়েক হাজার স্টেশন! by নাজমুল হুদা

অবৈধ অটোরিকশার নগরে পরিণত হয়েছে ঢাকা। লাখ লাখ অটোরিকশা সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব অটোরিকশা চার্জ দিতে ঢাকায় কয়েক হাজার চার্জিং স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনে দৈনিক চার্জ দেয়া হয় এসব অটোরিকশা। গ্যারেজে গড়ে ওঠা চার্জিং স্টেশনের বাইরেও অসংখ্য অবৈধ চার্জিং পয়েন্ট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে শহরের আনাচে কানাচে। মানুষের বাসা-বাড়িতেও চার্জ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু  ঢাকাতেই এসব অবৈধ অটোরিকশা চার্জ করতে দৈনিক অন্তত ৩০০-৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। সারা দেশে দৈনিক খরচ হচ্ছে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যা ঢাকা জোনের পিক আওয়ারে খরচ হওয়ার বিদ্যুতের এক তৃৃতীয়াংশ।

খিলগাঁও থানার সাহেরনবাগ রিকশা গ্যারেজ মো. উজ্জ্বলের। সেখানে ৫০-৬০টা রিকশা রাখা যায়। প্রতিদিন ১০-১২টি অটোরিকশা তার গ্যারেজে চার্জ করা হয়। এতেই প্রত্যেক মাসে তার ২৫-২৬ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল চলে আসে বলে জানান তিনি। বলেন, কেউ এখন প্যাডেল রিকশা চালাতে চায় না। অটোরিকশা চালায়। এগুলো চার্জ দেয়ার চাহিদাও অনেক। আমার এখানে ১০-১২টার চার্জ দেই প্রতিদিন। জায়গা থাকলে আরও চার্জ দেয়া যেতো। শুধু উজ্জ্বলের গ্যারেজই নয়, ঢাকায় ছোট-বড় এমন কয়েক হাজারের অধিক গ্যারেজে চার্জিং স্টেশন রয়েছে। তবে ২০২১ সালে ট্রাফিক পুলিশের একটি তালিকায় ৭৫২ স্টেশনের নাম রয়েছে। এরমধ্যে ট্রাফিকের ওয়ারি, তেজগাঁও, মতিঝিল, লালবাগ, গুলশান ও উত্তরা বিভাগে সবচেয়ে বেশি চার্জিং স্টেশন রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সড়কে প্রায় ৪০ লাখ অটোরিকশা চলাচল করে। এসব অটোরিকশা ৫-১০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। যদি ৫০ শতাংশ অটোরিকশাও দৈনিক সড়কে চলাচল করে সে হিসাবে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। গ্যারেজে গড়ে ওঠা চার্জিং স্টেশন ছাড়াও আবাসিক সংযোগ দিয়েও রিকশা ব্যাটারি চার্জ করা হচ্ছে। এতে সরকারও রাজস্ব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার লোডশেডিং-এর ওপর চাপ পড়ছে। বর্তমানে ঢাকার অটোরিকশার চিত্র তুলে ধরে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২ হাজার অটোরিকশা চলছে। পুরো ঢাকায় ৬-৭ লাখ অবৈধ অটোরিকশা রয়েছে। তারা দৈনিক ৩০০-৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে। চার্জিং স্টেশন ছাড়াও অনেকে বাসা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে চার্জ করে। তিনি বলেন, এত বড় গ্যারেজ এটা চোখের সামনে দেখা যায়। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ খাচ্ছে। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধুরাও এখানে জড়িত রয়েছে।
অটোরিকশাগুলো রাতে ১০-১২ ঘণ্টা চার্জে রাখা হয়। অনেকে দিনেও চার্জ করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের পরিচালক (ম্যানেজমেন্ট) শেখ মুনির আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, এই রিকশাগুলো সাধারণত মধ্যরাতে চার্জ হয়। আগে মধ্যরাতে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা তেমন ছিল না। কিন্তু এখন মধ্যরাতে চাহিদা বেড়ে যায়। ওই সময় এই লোডটা এখান (ব্যাটারি চার্জ) থেকে আসে। আগে রাত ১২টা থেকে ৩টার দিকে অফ পিক আওয়ার ছিল। এটা কিন্তু এখন অফ পিক আওয়ারের প্যাটার্নে নাই। এই সময়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও তুলনামূলক বেশি বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে।

অটোরিকশায় সয়লাব ঢাকার সড়ক, বিশৃঙ্খলা, যানজট:
হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই ঢাকায় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে অটোরিকশা। পাড়া-মহল্লার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এসব অটোরিকশা। সড়ক, মহাসড়ক এমনকি ফ্লাইওভারেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে সড়কের গতিরোধ সৃষ্টি হয়ে যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। ব্যাটারিচালিত এসব রিকশার হটস্পট ওয়ারি, মতিঝিল, তেজগাঁও, লালবাগ, গুলশান ও উত্তরার জোনগুলো। লাখ লাখ অটোরিকশা এসব এলাকায় দেদারছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তুলনামূলক ভাড়া কম ও দ্রুত চলায় এই রিকশাগুলোতে করে প্রধান সড়কে ওঠার ক্ষেত্রে যাত্রীদের সায়ও রয়েছে। এসব রিকশার কারণে গতি হারাচ্ছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট ও মোটরবাইকের মতো উচ্চ গতির যানবাহনগুলো। এতে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে যানজট বাড়ছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.