স্বামীর অপরাধের দায় যখন স্ত্রীর by মোর্শেদ নোমান
অলংকরণ: শাকিলা খান |
স্বামী
সাবেক সচিব। স্ত্রী গৃহিণী। কিন্তু স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ প্রায় পাঁচ
গুণ বেশি। তবে সেই সম্পদের সুনির্দিষ্ট কোনো উৎস নেই। তাই দুজনের
বিরুদ্ধেই মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৭ জুলাই করা মামলার
এজাহারে দুদক বলছে, স্বামীর ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ নিজের বলে
ঘোষণা করেছেন স্ত্রী। আয়ের উৎস দেখাতে না পারায় তাঁকেও মামলায় আসামি করা
হয়েছে।
চট্টগ্রামের কাস্টমস ও বন্দরের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গৃহিণী স্ত্রীর সম্পদের অনুসন্ধান শেষে স্ত্রীদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। দুদক দেখেছে, এই স্ত্রীদের সবাই বাড়ি-গাড়ির মালিক। সম্পদের দিক থেকে সবাই কোটিপতি।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের করা বেশির ভাগ মামলায় মন্ত্রী, আমলা ব্যবসায়ীসহ নানা পর্যায়ের ব্যক্তিদের স্ত্রীরা রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ রক্ষা বা আইনকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য অর্জিত সম্পত্তি নিজের নামে না রেখে পরিবারের অন্য সদস্য বিশেষ করে স্ত্রীর নামে রাখার কৌশল অবলম্বন করেন দুর্নীতিবাজেরা। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী এ বিষয়ে জানেনই না, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রী এ সম্পর্কে জানেন ও তাঁর সম্মতি থাকে। এ ধরনের প্রবণতার ফলে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয় ও সম্পদের পারিবারিক দায় নারীর ওপর বর্তায়। আবার নারীকে ওই অবৈধ আয় ও সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ বা অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে আইনের আওতায় আনা হয়।
গত বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক কার্যপত্রের তথ্য বলছে, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দুদকের করা ২৯টি মামলায় বিচারিক আদালত স্বামীর দুর্নীতির কাজে সহায়তা বা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন বা সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২৯ জন স্ত্রীকে কারাদণ্ড বা আর্থিক জরিমানা বা উভয় দণ্ড দিয়েছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুদকে স্বামীর অবৈধ আয়ের অর্থে স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জনসংক্রান্ত ১১৮টি অভিযোগ অনুসন্ধানের পর্যায়ে ছিল। এ–সংক্রান্ত ৩০টি মামলা তদন্তাধীন এবং ১৪টি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল।
নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু সচেতনতার অভাবে বা দুর্নীতিমনষ্ক পারিবারিক প্রধানের নানা অনৈতিক চাপে না জেনেই অপরাধের অংশীদার হয়ে যাচ্ছেন নারীরা। আবার পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ–প্রক্রিয়ায় নারীর সীমিত ক্ষমতা, প্রতিবাদে বা বিরুদ্ধাচরণে নারীর সামাজিক বাধা-বিপত্তি, প্রতিবাদের অপর্যাপ্ত স্বাধীনতার ফলে বেশির ভাগ নারীই এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারছেন না।
দুদকের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অনুসন্ধান ও তদন্তের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত নারীরা স্বামীর কথামতো কাগজে সই করেই সম্পদের মালিক হয়েছেন, ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেন স্বামীরাই। স্বামীর অবৈধ সম্পদ বা আয়ের উৎস স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রী জবাব দিতে ব্যর্থ হন কিংবা দেন না। অনেক সময় স্ত্রীকে রক্ষা করার বদলে স্বামী নিজেকে বাঁচাতে দাবি করেন যে স্ত্রীর সম্পদের হিসাব তিনি জানেন না।
তবে কেউ কেউ বলেছেন, যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে, তাঁদের স্ত্রীরাও শিক্ষিত। কিছু না জেনে তাঁরা কাগজপত্রে সই করছেন বা সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছেন, তা বলার উপায় নেই।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি তুলে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানালেও সেভাবে এগোয়নি। ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি, নিরপরাধ কেউ যাতে শাস্তি না পান। অপরাধ সংগঠনের ক্ষেত্রে সত্যিকারের পরিস্থিতি, আমাদের সংস্কৃতিসহ নানা দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত দিই।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনেকে না জেনেই দুর্নীতির দায় নিচ্ছেন। আবার কেউ জেনেও তার প্রতিবাদ করতে পারছেন না সামাজিক অবস্থার কারণে। তবে কেউ কেউ জেনেশুনেই যে দুর্নীতির অংশ হচ্ছেন, সেটাও পরিষ্কার।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দায় সম্পর্কে নারীদের সজাগ ও সচেতন করতে সচেতনতামূলক প্রচারের বিকল্প নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের যে দায় নারীকে বহন করতে হচ্ছে, তার সঙ্গে নারীরা আসলেই কতটা সজ্ঞানে জড়িত, তা বের করতে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।
চট্টগ্রামের কাস্টমস ও বন্দরের অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গৃহিণী স্ত্রীর সম্পদের অনুসন্ধান শেষে স্ত্রীদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। দুদক দেখেছে, এই স্ত্রীদের সবাই বাড়ি-গাড়ির মালিক। সম্পদের দিক থেকে সবাই কোটিপতি।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের করা বেশির ভাগ মামলায় মন্ত্রী, আমলা ব্যবসায়ীসহ নানা পর্যায়ের ব্যক্তিদের স্ত্রীরা রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ রক্ষা বা আইনকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য অর্জিত সম্পত্তি নিজের নামে না রেখে পরিবারের অন্য সদস্য বিশেষ করে স্ত্রীর নামে রাখার কৌশল অবলম্বন করেন দুর্নীতিবাজেরা। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী এ বিষয়ে জানেনই না, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রী এ সম্পর্কে জানেন ও তাঁর সম্মতি থাকে। এ ধরনের প্রবণতার ফলে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয় ও সম্পদের পারিবারিক দায় নারীর ওপর বর্তায়। আবার নারীকে ওই অবৈধ আয় ও সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ বা অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে আইনের আওতায় আনা হয়।
গত বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক কার্যপত্রের তথ্য বলছে, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দুদকের করা ২৯টি মামলায় বিচারিক আদালত স্বামীর দুর্নীতির কাজে সহায়তা বা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন বা সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২৯ জন স্ত্রীকে কারাদণ্ড বা আর্থিক জরিমানা বা উভয় দণ্ড দিয়েছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুদকে স্বামীর অবৈধ আয়ের অর্থে স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জনসংক্রান্ত ১১৮টি অভিযোগ অনুসন্ধানের পর্যায়ে ছিল। এ–সংক্রান্ত ৩০টি মামলা তদন্তাধীন এবং ১৪টি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল।
নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু সচেতনতার অভাবে বা দুর্নীতিমনষ্ক পারিবারিক প্রধানের নানা অনৈতিক চাপে না জেনেই অপরাধের অংশীদার হয়ে যাচ্ছেন নারীরা। আবার পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ–প্রক্রিয়ায় নারীর সীমিত ক্ষমতা, প্রতিবাদে বা বিরুদ্ধাচরণে নারীর সামাজিক বাধা-বিপত্তি, প্রতিবাদের অপর্যাপ্ত স্বাধীনতার ফলে বেশির ভাগ নারীই এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারছেন না।
দুদকের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অনুসন্ধান ও তদন্তের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত নারীরা স্বামীর কথামতো কাগজে সই করেই সম্পদের মালিক হয়েছেন, ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেন স্বামীরাই। স্বামীর অবৈধ সম্পদ বা আয়ের উৎস স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রী জবাব দিতে ব্যর্থ হন কিংবা দেন না। অনেক সময় স্ত্রীকে রক্ষা করার বদলে স্বামী নিজেকে বাঁচাতে দাবি করেন যে স্ত্রীর সম্পদের হিসাব তিনি জানেন না।
তবে কেউ কেউ বলেছেন, যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে, তাঁদের স্ত্রীরাও শিক্ষিত। কিছু না জেনে তাঁরা কাগজপত্রে সই করছেন বা সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছেন, তা বলার উপায় নেই।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি তুলে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানালেও সেভাবে এগোয়নি। ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি, নিরপরাধ কেউ যাতে শাস্তি না পান। অপরাধ সংগঠনের ক্ষেত্রে সত্যিকারের পরিস্থিতি, আমাদের সংস্কৃতিসহ নানা দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত দিই।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনেকে না জেনেই দুর্নীতির দায় নিচ্ছেন। আবার কেউ জেনেও তার প্রতিবাদ করতে পারছেন না সামাজিক অবস্থার কারণে। তবে কেউ কেউ জেনেশুনেই যে দুর্নীতির অংশ হচ্ছেন, সেটাও পরিষ্কার।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দায় সম্পর্কে নারীদের সজাগ ও সচেতন করতে সচেতনতামূলক প্রচারের বিকল্প নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের যে দায় নারীকে বহন করতে হচ্ছে, তার সঙ্গে নারীরা আসলেই কতটা সজ্ঞানে জড়িত, তা বের করতে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।
No comments