সুদান সঙ্কট কোন পথে by মোস্তাফিজুর রহমান
সুদানের
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উমর আল-বশিরের রাজনৈতিক জীবনকে যুদ্ধ দিয়েই
সবচেয়ে ভালোভাবে বর্ণনা করা যায়। ১৯৮৯ সালে তিনি ক্ষমতায় আসেন এবং শক্ত
হাতে দেশ পরিচালনা করেছেন। ২০১১ সালে বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ সুদানের জন্ম না
হওয়া পর্যন্ত এ দেশটি ছিল আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশ। যখন তিনি ক্ষমতা দখল
করেন, সুদান তখন উত্তর আর দক্ষিণের মধ্যে ২১ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের মধ্যে
রয়েছে।
বশির শক্ত হাতে জবাব দিতে শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন এবং যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ ও ২০১০ সালে দু’টি আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তিনি ২০১০ ও ২০১৫ সালের দু’টি নির্বাচনে বিজয়ী হন। তার সর্বশেষ নির্বাচন বিরোধীরা বর্জন করে। গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে তার ওপর আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা সৃষ্টি হয়। তার পরও বশির মিসর, সৌদি আরব আর দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণ করেন। ২০১৫ সালের জুনে তিনি অনেকটা বিব্রতভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ক্ষমতা গ্রহণের আগে সেনাবাহিনীর একজন কমান্ডার ছিলেন বশির। তিনি বিদ্রোহী নেতা জন গ্যারাঙ্গের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ অভিযান পরিচালনা করেন। যখন তিনি সুদানিজ পিপলস লিবারেশন মুভমেন্টের পক্ষে গ্যারাঙ্গের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন, তখন তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন যাতে চুক্তিটি পরাজয় বলে মনে না হয়।
তার সবসময়েই লক্ষ্য ছিল একটি একীভূত সুদান রক্ষা করা, কিন্তু শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে দক্ষিণ সুদানের বিষয়ে একটি গণভোট আয়োজন করতে বাধ্য হন। ২০১১ সালের জানুয়ারির গণভোটে ৯৯ শতাংশ দক্ষিণ সুদানিজ ভোটার আলাদা হয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেন। ছয় মাস পরে স্বাধীন দক্ষিণ সুদান ঘোষিত হয়। যখন তিনি দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার পক্ষে সম্মত হন, তখনো দারফুরের প্রতি তার মনোভাব ছিল আগ্রাসী। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নির্যাতনের কারণে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আরব জানহাওয়েড মিলিশিয়াদের তিনি সমর্থন করেছেন বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেসব অভিযোগ করেছে, তা তিনি বরাবরই অস্বীকার করে গেছেন। ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে আইসিসির যেসব অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে আছে- গণহত্যা, হত্যা, জোর করে বাস্তুচ্যুত করা, ধর্ষণ, নির্যাতন, দারফুরে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা, গ্রাম ও শহরে লুটতরাজ করা।
সঙ্কট ও বিক্ষোভ
তেল ও রুটির দাম বাড়ানোর পর বশিরের ৩০ বছরব্যাপী শাসনামলের মধ্যে গত ডিসেম্বরে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয়। কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিকভাবে সঙ্কটে ভুগছে সুদান, বিশেষ করে দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়ে যাওয়ার পর। কারণ দেশের মোট উত্তোলিত তেলের চার ভাগের তিন ভাগই রয়েছে দক্ষিণ সুদানে। মুদ্রামান কমে যাওয়া ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়ে দেশের মানুষজন। বশিরের শাসনামলে দেশটি ২০১৮ সালের ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭২ নম্বরে।
সুদানে যে গণবিক্ষোভের কারণে গত এপ্রিলে ৩০ বছরের একনায়ক শাসনের অবসান হয় তার নেতৃত্ব এখন কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে নেই। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায়ই বিক্ষোভকারীসহ সাধারণ মানুষ নিহতের সংবাদ আসছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন সুদানের সদস্যপদ সাময়িকভাবে বাতিল করেছে। ইউনিয়ন বলছে, বেসামরিক নেতৃত্বাধীন একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন না করা পর্যন্ত সুদানকে ইউনিয়ন থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং এটাই এ সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ। কিন্তু সঙ্কট কমছে না, বেড়েই চলেছে।
সৌদি আরবসহ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সুদানের প্রতিবেশী দেশ মিসর খার্তুমের সামরিক শাসককে বড় ধরনের সমর্থন দিচ্ছে। সৌদি আরব, আমিরাত ও মিসরের অবস্থানের বিপরীতে আছে তুরস্ক ও কাতার। সৌদি আরব, আমিরাত ও মিসর এবং কাতার ও তুরস্ক এই দু’টি পক্ষের কারো সাথেই সুদানের সরকারবিরোধীদের সম্পর্ক নেই। সুদানে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তারা কেউই আগ্রহী নয়।
বর্তমানে দেশটিতে গণতন্ত্রের দাবিতে যে আন্দোলন বিক্ষোভ চলছে তাতে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন। এদের মধ্যে মধ্যপন্থী, বামপন্থী ও প্যান-আরব দলগুলোও রয়েছে। সমর্থন রয়েছে দক্ষিণ সুদানের বিদ্রোহীদেরও। এই আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন। দেশটিতে বেসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে না দিলে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথাও জানিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলোর এই জোট। কিন্তু এই জোটের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিসরের সাথেই সুদানের সামরিক কাউন্সিলের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সমর্থন।
সৌদি আরবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সুদানের ওপর কিছু চাপ সৃষ্টি করেছে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করার জন্য। তবে সুদানের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহ তেমন একটা নেই বললেই চলে। সুদানের সামরিক বাহিনী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। রাশিয়া ও চীন ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। কয়েক দশক ধরেই মস্কো সুদানের কাছে সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি বিক্রি করে আসছে। চীনের সাথেও সুদানের সম্পর্ক বহু দশকের পুরনো। সুদানের তেল-ক্ষেত্রের উন্নয়নে বড় ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে চীন। বর্তমানে দেশটিতে সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণেও বেইজিং সহযোগিতা করছে।
সব মিলে এক জটিল সমীকরণে চলছে সুদানের শাসন ও বিক্ষোভ। শিগগিরই এর সমাধান হবে কিনা এখনোই বলা যাচ্ছে না।
বশির শক্ত হাতে জবাব দিতে শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন এবং যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ ও ২০১০ সালে দু’টি আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তিনি ২০১০ ও ২০১৫ সালের দু’টি নির্বাচনে বিজয়ী হন। তার সর্বশেষ নির্বাচন বিরোধীরা বর্জন করে। গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে তার ওপর আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা সৃষ্টি হয়। তার পরও বশির মিসর, সৌদি আরব আর দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণ করেন। ২০১৫ সালের জুনে তিনি অনেকটা বিব্রতভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ক্ষমতা গ্রহণের আগে সেনাবাহিনীর একজন কমান্ডার ছিলেন বশির। তিনি বিদ্রোহী নেতা জন গ্যারাঙ্গের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ অভিযান পরিচালনা করেন। যখন তিনি সুদানিজ পিপলস লিবারেশন মুভমেন্টের পক্ষে গ্যারাঙ্গের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন, তখন তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন যাতে চুক্তিটি পরাজয় বলে মনে না হয়।
তার সবসময়েই লক্ষ্য ছিল একটি একীভূত সুদান রক্ষা করা, কিন্তু শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে দক্ষিণ সুদানের বিষয়ে একটি গণভোট আয়োজন করতে বাধ্য হন। ২০১১ সালের জানুয়ারির গণভোটে ৯৯ শতাংশ দক্ষিণ সুদানিজ ভোটার আলাদা হয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেন। ছয় মাস পরে স্বাধীন দক্ষিণ সুদান ঘোষিত হয়। যখন তিনি দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতার পক্ষে সম্মত হন, তখনো দারফুরের প্রতি তার মনোভাব ছিল আগ্রাসী। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নির্যাতনের কারণে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আরব জানহাওয়েড মিলিশিয়াদের তিনি সমর্থন করেছেন বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেসব অভিযোগ করেছে, তা তিনি বরাবরই অস্বীকার করে গেছেন। ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে আইসিসির যেসব অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে আছে- গণহত্যা, হত্যা, জোর করে বাস্তুচ্যুত করা, ধর্ষণ, নির্যাতন, দারফুরে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা, গ্রাম ও শহরে লুটতরাজ করা।
সঙ্কট ও বিক্ষোভ
তেল ও রুটির দাম বাড়ানোর পর বশিরের ৩০ বছরব্যাপী শাসনামলের মধ্যে গত ডিসেম্বরে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয়। কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিকভাবে সঙ্কটে ভুগছে সুদান, বিশেষ করে দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়ে যাওয়ার পর। কারণ দেশের মোট উত্তোলিত তেলের চার ভাগের তিন ভাগই রয়েছে দক্ষিণ সুদানে। মুদ্রামান কমে যাওয়া ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়ে দেশের মানুষজন। বশিরের শাসনামলে দেশটি ২০১৮ সালের ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭২ নম্বরে।
সুদানে যে গণবিক্ষোভের কারণে গত এপ্রিলে ৩০ বছরের একনায়ক শাসনের অবসান হয় তার নেতৃত্ব এখন কোনো রাজনৈতিক দলের হাতে নেই। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায়ই বিক্ষোভকারীসহ সাধারণ মানুষ নিহতের সংবাদ আসছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন সুদানের সদস্যপদ সাময়িকভাবে বাতিল করেছে। ইউনিয়ন বলছে, বেসামরিক নেতৃত্বাধীন একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন না করা পর্যন্ত সুদানকে ইউনিয়ন থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং এটাই এ সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ। কিন্তু সঙ্কট কমছে না, বেড়েই চলেছে।
সৌদি আরবসহ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সুদানের প্রতিবেশী দেশ মিসর খার্তুমের সামরিক শাসককে বড় ধরনের সমর্থন দিচ্ছে। সৌদি আরব, আমিরাত ও মিসরের অবস্থানের বিপরীতে আছে তুরস্ক ও কাতার। সৌদি আরব, আমিরাত ও মিসর এবং কাতার ও তুরস্ক এই দু’টি পক্ষের কারো সাথেই সুদানের সরকারবিরোধীদের সম্পর্ক নেই। সুদানে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও তারা কেউই আগ্রহী নয়।
বর্তমানে দেশটিতে গণতন্ত্রের দাবিতে যে আন্দোলন বিক্ষোভ চলছে তাতে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন। এদের মধ্যে মধ্যপন্থী, বামপন্থী ও প্যান-আরব দলগুলোও রয়েছে। সমর্থন রয়েছে দক্ষিণ সুদানের বিদ্রোহীদেরও। এই আন্দোলনকে সমর্থন দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন। দেশটিতে বেসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে না দিলে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথাও জানিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলোর এই জোট। কিন্তু এই জোটের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মিসরের সাথেই সুদানের সামরিক কাউন্সিলের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও সমর্থন।
সৌদি আরবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সুদানের ওপর কিছু চাপ সৃষ্টি করেছে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করার জন্য। তবে সুদানের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের আগ্রহ তেমন একটা নেই বললেই চলে। সুদানের সামরিক বাহিনী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। রাশিয়া ও চীন ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। কয়েক দশক ধরেই মস্কো সুদানের কাছে সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি বিক্রি করে আসছে। চীনের সাথেও সুদানের সম্পর্ক বহু দশকের পুরনো। সুদানের তেল-ক্ষেত্রের উন্নয়নে বড় ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে চীন। বর্তমানে দেশটিতে সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণেও বেইজিং সহযোগিতা করছে।
সব মিলে এক জটিল সমীকরণে চলছে সুদানের শাসন ও বিক্ষোভ। শিগগিরই এর সমাধান হবে কিনা এখনোই বলা যাচ্ছে না।
গণবিক্ষোভের কারণে গত এপ্রিলে ৩০ বছরের একনায়ক শাসনের অবসান হয় - ছবি : সংগৃহীত |
No comments