এবিএম মূসার ইন্তেকাল
প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবিএম মূসা আর
নেই। আজ বুধবার দুপুর সোয়া একটার দিকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে
চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে...রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আজ দুপুর একটা ১৫ মিনিটে এবিএম মূসার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থা খুলে নেওয়া হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে রাখা হয়। তবে তাঁর অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় আজ তাঁর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থা খুলে নেওয়া হয়।
হাসপাতালের চিকিত্সক বরেণ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, এর আগেও এবিএম মূসার মূসা কয়েকবার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা কয়েক মাস ধরেই ভালো যাচ্ছিল না। সাত-আট মাস আগে তিনি মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম আক্রান্ত হন। এতে অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হয়। রোগটা প্রায় ক্যানসারের কাছাকাছি।
এবিএম মূসার পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। গত ২৯ মার্চ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তাঁকে কয়েকবার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে নেওয়া হয়। ৭ এপ্রিল রাতে তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হলে চিকিত্সকেরা তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে রাখেন।
প্রথিতযশা এ সাংবাদিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৯৩১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ফেনীর ফুলগাজী থানার ধর্মপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম সাংবাদিক এবিএম মূসার। তিনি ছয় দশকেরও বেশি সময় সাংবাদিকতা করেন। পাশাপাশি কলাম লেখক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবেও তাঁর সমান খ্যাতি ছিল।
বিশিষ্ট এ সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি চারবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফে কাজ করার মধ্য দিয়ে সাংবাদিক গোড়াপত্তন মূসার। পরে ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান অবজারভারে বার্তা সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
এবিএম মূসা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিবিসি, সানডে টাইমসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন করে এ দেশের মুক্তিসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিটিভির মহাব্যবস্থাপক হওয়া ছাড়াও মর্নিং নিউজ নামক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭৮ সালে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের (এসকাপ) এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদে যোগ দেন মূসা। দেশে ফিরে ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ছিলেন। পরে ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে তিনি কিছুদিন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলম লেখা ছাড়াও তিনি টকশোতে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলে বেশ জনপ্রিয় হন। পুরো সাংবাদিকতা জীবনেই তিনি গণমানুষের কথা বলে গেছেন।
No comments