মুজিব অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন- লন্ডনে সুধী সমাবেশে তারেক রহমান
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক
রহমান বলেছেন, ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হবার পর শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২
সালের ১০ই জানুয়ারি পকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে ১২ই জানুয়ারি দেশের
প্রধানমন্ত্রীর যে দায়িত্ব নিলেন প্রকৃতপক্ষে তা ছিল অবৈধ, তিনি ছিলেন অবৈধ
প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭ টায় সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়েষ্ট মিনিষ্টার গ্রেট হলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তারেক রহমান ১৯৭১ সালের ১০ ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের খসড়ার (ঘোষণা পত্র) বক্তব্য তুলে ধরেন। বলেন, সেখানে লেখা রয়েছে ‘এতো দ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত করিতেছি যে, সংবিধান প্রণিত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপরাষ্ট্রপতি থাকিবেন’। কিন্তু ১০ই জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে শেখ মুজিব ১২ই জানুয়ারি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন? তখনওতো সংবিধান প্রণীত হয়নি। তিনি বলেন, আজ যেমন শেখ হাসিনা অবৈধভাবে জোর করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন, ঠিক তেমনি ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবও অবৈধভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ছিলেন।
সমাবেশে তারেক রহমান ২০১০ সালের ২৮ই অক্টোবরের ‘সাপ্তাহিক পত্রিকা’য় ড.কামাল হোসেনের একটি সাক্ষাতকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ১৯৭২ সালে পাকিস্তান থেকে শেখ মুজিব ও ড. কামাল হোসেন ইউনাইটেড নেশনের এয়ারক্রাফটে করে বাংলাদেশে ফিরলেন। কিন্তু তিনি ইউনাইটেড নেশনের ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে না এসে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে হয়ে গেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি জাতিসংঘের ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে ফিরতে পারতেন। তিনি সেটিও করেননি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কার্ডিফ বিশ্ব¦বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর এম এ মালিক, ঢাকা বিশ্ব¦বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর হাসনাত করিম এমবিই, বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুকিম আহমেদ, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট সাংবাদিক কে এম আবু তাহের, টাওয়ার হ্যামলেটসের ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ, কলামিষ্ট ড. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল, শিক্ষক ও গবেষক আলিয়ার হোসেন, যুক্তরাজ্য স্থানীয় সরকারের সাবেক কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান আলী, মাওলানা শামসুল হক চৌধুরী, আগামী জাতীয় নির্বাচনে হাউজ অব কমন্সে লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মুকিম আহমেদ, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নেতা শাহগীর বখত ফারুক, চার্টার্ড একাউন্টেট মুসাব্বির হোসাইন, কাউন্সিলার আয়েশা চৌধুরী, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান। ।
প্রায় ৫০ মিনিটব্যাপী বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, গত ২৫ই মার্চ যুক্তরাজ্যে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় তিনি জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে ঐতিহাসিক দলিল ও প্রমাণ দিয়ে কিছু প্রশ্ন উপস্থাপন করেছিলেন তার উত্তরে আওয়ামীলীগ কিছুই বলতে পারেনি। তারেক বলেন, ৭ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা হলে ১৭ই এপ্রিল কেন মুজিবনগর সরকার গঠিত হলো, কেন ৮ই মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীন সরকার গঠন হলো না, চট্রগ্রামে ২শ মাইল দুরে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠাতে পারলে কেন তার বাড়ি থেকে ৬/৭ মাইল দুরে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে খবর পাঠাতে পারলেন না। এসব কোন প্রশ্নের উত্তর শেখ হাসিনাসহ তার দলের কোন নেতৃবৃন্দ দিতে পারেনি বরং তার অগণতান্ত্রিক ভাষায় নানা কথা বলেছে। এটাই প্রমাণ করে আমরা যা বলেছি তা-ই ঠিক, জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক।
তারেক রহমান বলেন, আওয়ামীলীগের ওয়েবসাইট অনুযায়ী ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করে শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট করা হয়। আওয়ামীলীগ আবার বলে ৭ই মার্চ শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং ২৬ শে মার্চ শেখ মুজিবের নির্দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন ২৬ শে মার্চ থেকে ১০ই এপ্রিল তাহলে কি ছিলো? তাহলে, ২৬ শে মার্চ থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ কি নেতৃত্বশূন্য ছিলো?
তারেক রহমান বলেন, আমার বক্তব্যের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত জিয়াউর রহমানকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, কারো ঘোষণা-টোষনায় কোন স্বাধীনতা আসেনি। কিন্তু তিনি তার লেখা ‘বাংলাদেশ : ইর্মাজেন্সী অব এ নেশন’ বইয়ের ১৪৩ পৃষ্টায় লিখেছেন ‘মেজর জিয়াউর রহমান ওয়াজ দ্যা ফাস্ট এনাউন্স দ্যা ইন্ডিপেন্ডডেন্স অব বাংলাদেশ’ এবং একই বইয়ের ২২৭ পৃষ্টায় লিখেছেন ‘দ্যা নেক্সট ইভিনিং মেজর জিয়া এনাউন্স দ্যা ফরমিটিকা অব এ প্রবিনশিয়াল গর্ভমেন্ট.....’ তাহলে কি বর্তমান অবৈধ আওয়ামীলীগ সরকারের অবৈধ অর্থমন্ত্রী স্বীকার করে নেননি যে কে ছিলেন বাংলাদেশ প্রথম প্রেসিডেন্ট, প্রশ্ন রাখেন তারেক। বলেন, শেখ মুজিব সরকারের সেনাবাহিনীর প্রধান ও শেখ হাসিনা সরকারের এমপি মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল শফি উল্লাহ ( অব:) তার লেখা ‘বাংলাদেশ এট ওয়ার’ বইয়ের ৪৪ নম্বর পৃষ্টায় জিয়াউর রহমানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার কথা’ স্বীকার করেছেন।
৪শ টাকা বেতনের কোন মেজর স্বাধীনতার ঘোষণা করেননি শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের চরমভাবে অপমান করেছেন। তিনি বলেন, যারা সেদিন স্বাধীনতা যুদ্ধ স্বচক্ষে দেখেছেন, যারা প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন তারা বলতে পারবেন ৪শ টাকার মেজর, ২শ টাকার ক্যাপ্টেন, ১শ টাকার সিপাহী আর ৫০ টাকার ক্ষেত খামারের মজুর এক বেলা আধা বেলা খেয়ে, লুঙ্গী পরে অস্ত্র হাতে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ সেসময় যাদেরকে দেশের দায়িত্ব দিয়েছিলো, তারা সেদিন নিরাপদে কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ কথায় কথায় রাজাকারদের মন্ত্রী বানানোর জন্য বিএনপির উপর দোষ চাপায়। অথচ বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত রাজাকারদের প্রথমমন্ত্রী বানায় শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তার পিতার আমলের তালিকাভুক্ত রাজাকার মাওলানা নুরুল ইসলামকে মন্ত্রী বানিয়ে তার পতাকায় প্রথম জাতীয় পতাকা তোলার সুযোগ করে দেন। এমনকি শেখ হাসিনার পরিবারেও রাজাকারদের বংশ বিস্তার হচ্ছে বলে তারেক রহমান উল্লেখ করেন।
No comments