প্রেমের নামে প্রতারণা- মিরপুরে নারীসহ ৬ প্রতারক আটক
রাজধানীর মিরপুরে প্রেমের নামে প্রতারণায়
জড়িত দোলা আক্তার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা আবু তালেবসহ ছয় জনকে আটক করেছে
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিরপুর
থানার মধ্য পাইকপাড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ
থেকে ওয়্যারলেস সেট, হ্যান্ডকাপ ও একটি ডিজিটাল ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ভুয়া ডিবি’র এসি আবু তালেব (৬৮), ভুয়া ডিবি ইন্সপেক্টর মো. আজাহার উদ্দিন খান (৪২), ভুয়া ডিবি’র সাব-ইন্সপেক্টর মোস্তফা (৪০), ভুয়া সাংবাদিক শামীম সিকদার (২৫), প্রতারক প্রেমিকা দোলা আক্তার (২০) ও তার খালা সালমা বেগম (৪৫)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রহমত উল্লাহ্ চৌধুরীর নেতৃত্বে রাজধানীর মিরপুর থানা এলাকার ৩৬/২-এ মধ্য পাইকপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
বুধবার দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) কৃষ্ণ পদ রায়, মিডিয়া সেন্টারের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান, ডিবি দক্ষিণের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ছানোয়ার হোসেন প্রমুখ।
উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় সাংবাদিকদের জানান. ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট মিরপুর বিআরটিএ’র সামনে থেকে লন্ডন প্রবাসী এক ব্যবসায়ীকে নারী দেহের প্রলোভন দেখিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় প্রতারক চক্র। পরে ওই চক্রের নারী সদস্য দোলার সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তারা।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারি এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে প্রতারক ও ভণ্ড প্রেমিকা দোলার মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে একটি বাড়িতে নিয়ে একই কায়দায় ১৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে প্রতারক চক্র।
সর্বশেষ ওই প্রতারক চক্রের শিকারে পরিণত হন একজন রাজনৈতিক নেতা। তার কাছ থেকে একই কায়দায় ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রতারকরা পালিয়ে যায়। পরে ওই রাজনীতিককে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের ছয় সদস্যকে ডিবি পুলিশ আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক চক্রের সদস্য দোলা জানায়, তাদের সদস্যরা বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিকে টার্গেট করে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। পরে দোলা তাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে কৌশলে নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে ফাঁদে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গেই ভুয়া এসি আবু তালেবের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি দল ভুয়া ফটোসাংবাদিকসহ প্রবেশ করে জোর করে দোলার সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেলিং করে। তারা প্রতারণার শিকার ব্যক্তিটির মোবাইলের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নানা কৌশলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের একজনকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে সামাজিকভাবে হেয় করার ভয় দেখানো হতো।
এভাবে বেশ কিছু টাকা পয়সা আদায় করার পরও তাদের কাছ থেকে দফায় দফায় চাঁদা আদায় করতো তারা। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আজাহার নিজেকে ডিবি ইন্সপেক্টর, মোস্তফা সাব-ইন্সপেক্টর, আবু তালেব নিজেকে পুলিশের এসি এবং শামিম শিকদার নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে।
প্রতারকদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে । তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
No comments