পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ॥ ইতিবাচক সাড়া- ০ বিশ্বব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত- ০ এবার অর্থমন্ত্রী চিঠি দিচ্ছেন- ০ পদ্মা সেতুর ঋণ পাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র জাপান ভারত ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করছে মজেনা by মিজান চৌধুরী
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর ঋণের বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ওই সিদ্ধান্তের মেসেজ সরকারের উর্ধতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ইতিবাচক মনোভাবে সরকার নতুন করে ঋণ পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি তৈরি করছে। বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বুধবার চিঠির ড্রাফট প্রস্তুত করেছে। এটি অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে করা হয়েছে। ভাষাগত দিকগুলোও ঠিক করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বা আগামীকাল এ চিঠি বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, বুধবার নির্ধারিত সময়ে পদ্মা সেতু নিয়ে পূর্ব ঘোষিত অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি এ কারণেই বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পর পদ্মা সেতুর বিষয় নতুন মোড় নিয়েছে। বুধবার অর্থমন্ত্রী দিনভর পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তবে সাংবাদিকদের জানান এখন ক্রুসিয়াল মোমেন্ট চলছে। এখন কথা বলা ঠিক হবে না। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পদ্মা সেতুর বিষয়ে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দিয়ে গেছেন অর্থমন্ত্রীকে। বুধবার শাহজালাল বিমানবন্দরে বিদায়কালে অর্থমন্ত্রীকে এ ক্ষমতা দিয়ে যান। প্রয়োজনে অর্থমন্ত্রীকে টেলিফোনে আলাপ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এটি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নিজেই।
এছাড়া বুধবার পদ্মা সেতুর ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনাও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে টানা এক ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে পদ্মা সেতু নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। ওই বৈঠক শেষে ড্যান মজেনা সাংবাদিকদের জানান, আমি আশা করি পদ্মা সেতু নিয়ে একটি সফল সমাধান হবে। বাংলাদেশের পক্ষে বন্ধুপ্রতিম দেশ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত এক সঙ্গে কাজ করছে। আশা করি এর সন্তোষজনক সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থন রয়েছে। সমর্থনের বিষয়টি আজ অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, পদ্মা সেতুর বিষয়ে আমরা সমর্থন পেয়েছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। এছাড়া জাপান, যুক্তরাজ্য ও ভারত সমর্থন দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণপ্রাপ্তি বিষয়ে কাগজে যা-ই লেখা হোক না কেন আমি সমর্থন পাচ্ছি।
বুধবার পদ্মা সেতু নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি দেয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সংবাদকর্মীরা বিবৃতির জন্য ভিড় জমায়। কিন্তু সকাল বেলা অফিসে না এসে অর্থমন্ত্রী বিমানবন্দরে চলে যান প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কোন দিকনির্দেশনা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমকে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি এখনও আশাবাদী। এ বিষয়ে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়েছেন। যদি কোথাও আটকে যাই সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী আমাকে টেলিফোন করতে বলেছেন।
বিমানবন্দর থেকে অর্থমন্ত্রী সরাসরি চলে আসেন সচিবালয়ে। এ সময় তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ও কাল শুক্রবার সময় আছে। এর আগে আমি কোন কথা বলব না। বিবৃতি দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, হাতে আরও দু’দিন সময় আছে। আলোচনা চলছে। সময় শেষ হওয়ার পরে কথা বলা হবে।
এর কিছুক্ষণ পরে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলে ড্যান মজেনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে সময় সময় বৈঠক করা হয়েছে। পদ্মা সেতু হোক এ ব্যাপারে আমেরিকার জোরাল সমর্থন রয়েছে।
ড্যান মজেনা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। আমি আশা করছি পদ্মা সেতুর বিষয়ে একটা সন্তোষজনক সমাধান হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, পদ্মা সেতু হলে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার এক শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চীন, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি নতুন রুট তৈরি হবে।
মার্কিন এই রাষ্ট্রদূত জানান, বিশ্বব্যাংকের বোর্ডের মিত্র দেশগুলোর নির্বাহী পরিচালকরা পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ প্রত্যাহার ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা পালন করছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে এবং বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। তিনি আরও বলেন, পদ্মা প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলে ওয়াশিংটনও হতাশ হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এরপর তিনি বৈঠক করেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে। দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে বৈঠকে মজেনা জানান, পদ্মা সেতুর জন্য যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যান্য বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাজ করছে।
এরপর দুপুরের শেষ দিকে অর্থমন্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা চলছে। এখন ‘ক্রুসিয়াল মোমেন্ট’ চলছে, কিছু বলা ঠিক হবে না। পদ্মা সেতু প্রকল্পের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এডিবি ও জাইকা’কে অনুরোধ জানানো হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুরোধ করা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে আমি এখনও নিশ্চিত নই। আবার অনুরোধ জানাব কি না, তা-ও জানি না।
এদিকে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের পদত্যাগের বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে আসছে। বুধবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পদত্যাগের কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে ড. মসিউর রহমানের পদত্যাগের আগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিশ্চিত দেখতে চায় সরকার। এ নিশ্চয়তা পাওয়া গেলেই কেবল সরকার এ চিন্তা করবে। তবে সরকার অর্থ উপদেষ্টাকে বহাল রেখেই অর্থ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে দুপুরে সচিবালয়ে পদ্মা সেতু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ বিষয়ে কাজ করছে। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে মালয়েশিয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী বলেন, কৌশলগত কারণে সবকিছু বলা যাচ্ছে না। তাদের প্রস্তাবটি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। মালয়েশিয়ার মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে ব্যয় বেশি হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, জনগণকে অতিরিক্ত অর্থের চাপ সইতে হবে এমন চুক্তি করা হবে না। তিনি আরও বলেন আগের তুলনায় বর্তমান মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে ব্যয় অনেক কম দেখিয়েছে।
উল্লেখ্য, পদ্মা প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক গত জুন মাসে সরে গেলেও প্রকল্পের অংশীদার এডিবি ও জাইকা তাদের ঋণচুক্তির মেয়াদ ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ায়। প্রকল্পটি রাখতে হলে এই সময়ের মধ্যে বিশব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে সরকারকে।
এডিবি ও জাইকার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। ২৯০ কোটি ডলারে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। বাকি অর্থের বেশিরভাগ দেয়ার কথা এডিবি, আইডিবি ও জাইকার। গত বছর সেপ্টেম্বরে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারকে কয়েকটি শর্ত দেয় বিশ্বব্যাংক। তা পালন হয়নি জানিয়ে গত জুনে অর্থায়ন বাতিল করে তারা।
সূত্র মতে, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বুধবার চিঠির ড্রাফট প্রস্তুত করেছে। এটি অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে করা হয়েছে। ভাষাগত দিকগুলোও ঠিক করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বা আগামীকাল এ চিঠি বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, বুধবার নির্ধারিত সময়ে পদ্মা সেতু নিয়ে পূর্ব ঘোষিত অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি এ কারণেই বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার পর পদ্মা সেতুর বিষয় নতুন মোড় নিয়েছে। বুধবার অর্থমন্ত্রী দিনভর পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তবে সাংবাদিকদের জানান এখন ক্রুসিয়াল মোমেন্ট চলছে। এখন কথা বলা ঠিক হবে না। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পদ্মা সেতুর বিষয়ে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দিয়ে গেছেন অর্থমন্ত্রীকে। বুধবার শাহজালাল বিমানবন্দরে বিদায়কালে অর্থমন্ত্রীকে এ ক্ষমতা দিয়ে যান। প্রয়োজনে অর্থমন্ত্রীকে টেলিফোনে আলাপ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য এটি জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নিজেই।
এছাড়া বুধবার পদ্মা সেতুর ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনাও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে টানা এক ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে পদ্মা সেতু নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। ওই বৈঠক শেষে ড্যান মজেনা সাংবাদিকদের জানান, আমি আশা করি পদ্মা সেতু নিয়ে একটি সফল সমাধান হবে। বাংলাদেশের পক্ষে বন্ধুপ্রতিম দেশ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত এক সঙ্গে কাজ করছে। আশা করি এর সন্তোষজনক সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থন রয়েছে। সমর্থনের বিষয়টি আজ অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, পদ্মা সেতুর বিষয়ে আমরা সমর্থন পেয়েছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। এছাড়া জাপান, যুক্তরাজ্য ও ভারত সমর্থন দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণপ্রাপ্তি বিষয়ে কাগজে যা-ই লেখা হোক না কেন আমি সমর্থন পাচ্ছি।
বুধবার পদ্মা সেতু নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি দেয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সংবাদকর্মীরা বিবৃতির জন্য ভিড় জমায়। কিন্তু সকাল বেলা অফিসে না এসে অর্থমন্ত্রী বিমানবন্দরে চলে যান প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কোন দিকনির্দেশনা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমকে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি এখনও আশাবাদী। এ বিষয়ে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়েছেন। যদি কোথাও আটকে যাই সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী আমাকে টেলিফোন করতে বলেছেন।
বিমানবন্দর থেকে অর্থমন্ত্রী সরাসরি চলে আসেন সচিবালয়ে। এ সময় তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ও কাল শুক্রবার সময় আছে। এর আগে আমি কোন কথা বলব না। বিবৃতি দেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, হাতে আরও দু’দিন সময় আছে। আলোচনা চলছে। সময় শেষ হওয়ার পরে কথা বলা হবে।
এর কিছুক্ষণ পরে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলে ড্যান মজেনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে সময় সময় বৈঠক করা হয়েছে। পদ্মা সেতু হোক এ ব্যাপারে আমেরিকার জোরাল সমর্থন রয়েছে।
ড্যান মজেনা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। আমি আশা করছি পদ্মা সেতুর বিষয়ে একটা সন্তোষজনক সমাধান হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, পদ্মা সেতু হলে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার এক শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চীন, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি নতুন রুট তৈরি হবে।
মার্কিন এই রাষ্ট্রদূত জানান, বিশ্বব্যাংকের বোর্ডের মিত্র দেশগুলোর নির্বাহী পরিচালকরা পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ প্রত্যাহার ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা পালন করছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে এবং বিশ্বব্যাংক তাদের ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। তিনি আরও বলেন, পদ্মা প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলে ওয়াশিংটনও হতাশ হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এরপর তিনি বৈঠক করেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে। দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে বৈঠকে মজেনা জানান, পদ্মা সেতুর জন্য যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যান্য বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কাজ করছে।
এরপর দুপুরের শেষ দিকে অর্থমন্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা চলছে। এখন ‘ক্রুসিয়াল মোমেন্ট’ চলছে, কিছু বলা ঠিক হবে না। পদ্মা সেতু প্রকল্পের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এডিবি ও জাইকা’কে অনুরোধ জানানো হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুরোধ করা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে আমি এখনও নিশ্চিত নই। আবার অনুরোধ জানাব কি না, তা-ও জানি না।
এদিকে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের পদত্যাগের বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে আসছে। বুধবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পদত্যাগের কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে ড. মসিউর রহমানের পদত্যাগের আগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিশ্চিত দেখতে চায় সরকার। এ নিশ্চয়তা পাওয়া গেলেই কেবল সরকার এ চিন্তা করবে। তবে সরকার অর্থ উপদেষ্টাকে বহাল রেখেই অর্থ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে দুপুরে সচিবালয়ে পদ্মা সেতু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এ বিষয়ে কাজ করছে। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে মালয়েশিয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী বলেন, কৌশলগত কারণে সবকিছু বলা যাচ্ছে না। তাদের প্রস্তাবটি আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। মালয়েশিয়ার মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে ব্যয় বেশি হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, জনগণকে অতিরিক্ত অর্থের চাপ সইতে হবে এমন চুক্তি করা হবে না। তিনি আরও বলেন আগের তুলনায় বর্তমান মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে ব্যয় অনেক কম দেখিয়েছে।
উল্লেখ্য, পদ্মা প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক গত জুন মাসে সরে গেলেও প্রকল্পের অংশীদার এডিবি ও জাইকা তাদের ঋণচুক্তির মেয়াদ ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ায়। প্রকল্পটি রাখতে হলে এই সময়ের মধ্যে বিশব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে সরকারকে।
এডিবি ও জাইকার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। ২৯০ কোটি ডলারে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। বাকি অর্থের বেশিরভাগ দেয়ার কথা এডিবি, আইডিবি ও জাইকার। গত বছর সেপ্টেম্বরে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারকে কয়েকটি শর্ত দেয় বিশ্বব্যাংক। তা পালন হয়নি জানিয়ে গত জুনে অর্থায়ন বাতিল করে তারা।
No comments