ঈদ-অনুষ্ঠান হোক ৩ দিনের!
এতগুলো টিভি অথচ একটি টিভি—আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবার নানা কারণে তেমন কোনো অনুষ্ঠান দেখা হয়নি। ইচ্ছাও হয়নি। আগে বিটিভিতে ঈদের অনুষ্ঠান প্রচার হতো একদিন। বেসরকারি চ্যানেলগুলো চালু হলো, ঈদের অনুষ্ঠানমালার দিন বাড়াতে লাগল।
আমরা যখন অনুষ্ঠান করতাম, তখন সারা জাতি একটা মাত্র পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকত। এখন সবাই হতবিহ্বল। মানুষ ভালো-মন্দের ভেদাভেদ করতে পারছে না। এক অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি দর্শক। উদ্দেশ্যহীনভাবে সবাই টিভি দেখে। দেশে এখন এত টিভি চ্যানেল, অসংখ্য অনুষ্ঠান। কিন্তু এতগুলো অনুষ্ঠানের জন্য আমরা কি ততগুলো যোগ্য শিল্পী তৈরি করতে পেরেছি? যোগ্য লেখক কিংবা নির্মাতা আছে? যোগ্য দর্শক আছে? সমাজ তো তা তৈরি করতে পারেনি। তাই যে যার মতো পারছে, তৈরি করছে, তা প্রচার হচ্ছে। গুণগত মান দেখার কেউ নেই। একসময় বলা হতো, টিভি দর্শক তৈরি করে, দর্শকের রুচি তৈরি করে। অথচ টিভি খুললেই একই মুখ দর্শককে বারবার দেখতে হচ্ছে। আজ এতগুলো টিভি অথচ যেন একটি টিভি। আবার তার মানও ভালো না। সব জায়গায় যেন একই অনুষ্ঠান। টিভির বিকল্প নানা কিছু এসে পড়েছে দর্শকের কাছে। টিভির একসময়ের একচ্ছত্র আধিপত্য আর নেই।
অকারণে বেশি অনুষ্ঠান হচ্ছে—মুস্তাফা মনোয়ার
এখন তো ছোটদের জন্য তেমন কোনো অনুষ্ঠান হয় না। সবাই ব্যস্ত বড়দের নিয়ে। এবার ঈদে আমি ছোটদের জন্য চারটি পাপেট অনুষ্ঠান করেছি। দেশের পুরোনো চারটি গল্প নতুন করে পাপেট আয়োজনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছি। এখন অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। সব দেখা সম্ভব নয়। অকারণে বেশি অনুষ্ঠান হচ্ছে। মানুষকে হাসানোর জন্য দেখছি অতি চটুল ও অতিসাধারণ মানের নাটক তৈরি হচ্ছে। এগুলো কোনো বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নয়, চিন্তাহীন মস্তিষ্কের জন্য তৈরি হচ্ছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, পাঁচ দিন, সাত দিন, আট দিন নয়; ঈদের অনুষ্ঠান হওয়া উচিত তিন দিন। দর্শক যে বিরক্ত হচ্ছে, এটা চ্যানেলের মানুষজনকে বুঝতে হবে। ঈদের অনুষ্ঠানের নামে যা ইচ্ছা তা প্রচার করার প্রয়োজন আছে কি?
ঈদের অনুষ্ঠান তিনদিন হওয়া উচিৎ—মোস্তফা কামাল সৈয়দ
ঈদ হয় একদিন, কিন্তু ঈদের অনুষ্ঠান হচ্ছে সাতদিন, আটদিন। একসময় ছিল শুধু বিটিভি। তখন বিটিভিকে ঘিরেই ছিল সবার আগ্রহ। এখন অনেক চ্যানেল। সব চ্যানেলের অনুষ্ঠানের ধরন খুব কাছাকাছি। ভাবনা এবং পরিকল্পনার জায়গায় এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। নতুন শিল্পী তৈরি হচ্ছে না। একই মুখ বারবার দেখতে হচ্ছে। আমরা অনুষ্ঠান তৈরি করি দর্শককে বিনোদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা কি একটু খোঁজ করে দেখেছি—আসলেই দর্শক তা কতটা দেখছেন? নাকি ওই সময় দর্শক ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়ালের মাঝেই বিনোদন খুঁজছেন? আমাদের এখানে যে সম্ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে, তা যেন নষ্ট না হয়। ঈদের অনুষ্ঠানের দিনের ব্যাপারে এখনই সবগুলো চ্যানেলকে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে কদিন আমরা ভালো অনুষ্ঠান দিতে পারব, ঠিক সেই কদিনই ঈদের অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে। আমি মনে ঈদের অনুষ্ঠান তিনদিন হওয়া উচিৎ।
খারাপের ভিড়ে ভালো কাজ হারিয়ে যাচ্ছে—রোকেয়া প্রাচী
ঈদের অনুষ্ঠানের জন্য দিনের সংখ্যা বাড়ানো আমার কাছে একেবারেই হাস্যকর বলে মনে হয়। ঈদের এক দিন পরই নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। ঈদের উৎসব তৃতীয় দিন পর্যন্ত মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সাত দিন, আট দিন! আমি তো মনে করি এগুলো সবই ঈদকে ঘিরে বাণিজ্য করার প্রয়াস। সবকিছুকেই সস্তা বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে। ফলে দর্শক প্রতারিত হচ্ছে। দর্শকের রুচি বদলে দেওয়া হচ্ছে। একজন শিল্পী যদি শুধু একটা ঈদের জন্য ২০ থেকে ২৫টা কাজ করেন, তাহলে তিনি কীভাবে নিজের কাজের মান ধরে রাখবেন? নির্মাতাদের ক্ষেত্রেও সেই একই প্রশ্ন। প্রায় অর্ধসহস্রাধিক কাজের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন নির্মাতার কাজ ভালো হচ্ছে। অনেক খারাপের ভিড়ে সেগুলো হারিয়ে যায়। আর সম্প্রচারের মাঝে যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, তাতে কেউই এখন আর স্বস্তির সঙ্গে ঈদের অনুষ্ঠান দেখতে পারে না।
বিপণন বিভাগের আধিপত্য বেড়েছে—বিপাশা হায়াত
যতটুকু বুঝেছি, কোন চ্যানেলে কী অনুষ্ঠান হচ্ছে, তা নিয়ে খুব বেশি মানুষের মাথাব্যথা নেই। যাদের আছে, তারা খুঁজে খুঁজে ভালো অনুষ্ঠানটি দেখানোর চেষ্টা করেন। তবে কিছু কিছু চ্যানেলে কিছু ভালো মানুষ আছেন, যাঁরা নিজেদের চ্যানেলে ভালো নাটক, ভালো অনুষ্ঠান প্রচার করতে চান। কিন্তু এ ধরনের মানুষের সংখ্যা কম বলেই ওই মানের অনুষ্ঠানের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। একটা ভালো অনুষ্ঠান ঢোকাতে হলে এই মানুষগুলোকে অনেক যুদ্ধ করতে হয়। আগে অনুষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মানুষজন অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করতেন। এখন সেই স্থান দখল করেছে চ্যানেলগুলোর বিপণন বিভাগ। কোন শিল্পীকে নেওয়া হলে ওই অনুষ্ঠানটির বিপণনে তাদের সুবিধা হবে, সেই দিকটিই তারা বেশি বিবেচনা করে। এই অনুষ্ঠানগুলো দেখে দর্শক বিভ্রান্ত হচ্ছে কিনা, সেটা দেখারও কেউ নেই। টিভি যে একটা গণমাধ্যম, গণমানুষের প্রতি যে চ্যানেলগুলোর দায়বদ্ধতা আছে, তা অনেকেই ভুলে গেছে। টিভি চ্যানেলগুলো এখন দর্শক তৈরি কিংবা দর্শকের রুচি তৈরির বদলে বাণিজ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। মূল্যবোধ থেকে এখন তারা অনেক দূরে সরে গেছে।
অকারণে বেশি অনুষ্ঠান হচ্ছে—মুস্তাফা মনোয়ার
এখন তো ছোটদের জন্য তেমন কোনো অনুষ্ঠান হয় না। সবাই ব্যস্ত বড়দের নিয়ে। এবার ঈদে আমি ছোটদের জন্য চারটি পাপেট অনুষ্ঠান করেছি। দেশের পুরোনো চারটি গল্প নতুন করে পাপেট আয়োজনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছি। এখন অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। সব দেখা সম্ভব নয়। অকারণে বেশি অনুষ্ঠান হচ্ছে। মানুষকে হাসানোর জন্য দেখছি অতি চটুল ও অতিসাধারণ মানের নাটক তৈরি হচ্ছে। এগুলো কোনো বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নয়, চিন্তাহীন মস্তিষ্কের জন্য তৈরি হচ্ছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, পাঁচ দিন, সাত দিন, আট দিন নয়; ঈদের অনুষ্ঠান হওয়া উচিত তিন দিন। দর্শক যে বিরক্ত হচ্ছে, এটা চ্যানেলের মানুষজনকে বুঝতে হবে। ঈদের অনুষ্ঠানের নামে যা ইচ্ছা তা প্রচার করার প্রয়োজন আছে কি?
ঈদের অনুষ্ঠান তিনদিন হওয়া উচিৎ—মোস্তফা কামাল সৈয়দ
ঈদ হয় একদিন, কিন্তু ঈদের অনুষ্ঠান হচ্ছে সাতদিন, আটদিন। একসময় ছিল শুধু বিটিভি। তখন বিটিভিকে ঘিরেই ছিল সবার আগ্রহ। এখন অনেক চ্যানেল। সব চ্যানেলের অনুষ্ঠানের ধরন খুব কাছাকাছি। ভাবনা এবং পরিকল্পনার জায়গায় এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। নতুন শিল্পী তৈরি হচ্ছে না। একই মুখ বারবার দেখতে হচ্ছে। আমরা অনুষ্ঠান তৈরি করি দর্শককে বিনোদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা কি একটু খোঁজ করে দেখেছি—আসলেই দর্শক তা কতটা দেখছেন? নাকি ওই সময় দর্শক ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়ালের মাঝেই বিনোদন খুঁজছেন? আমাদের এখানে যে সম্ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে, তা যেন নষ্ট না হয়। ঈদের অনুষ্ঠানের দিনের ব্যাপারে এখনই সবগুলো চ্যানেলকে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে কদিন আমরা ভালো অনুষ্ঠান দিতে পারব, ঠিক সেই কদিনই ঈদের অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে। আমি মনে ঈদের অনুষ্ঠান তিনদিন হওয়া উচিৎ।
খারাপের ভিড়ে ভালো কাজ হারিয়ে যাচ্ছে—রোকেয়া প্রাচী
ঈদের অনুষ্ঠানের জন্য দিনের সংখ্যা বাড়ানো আমার কাছে একেবারেই হাস্যকর বলে মনে হয়। ঈদের এক দিন পরই নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। ঈদের উৎসব তৃতীয় দিন পর্যন্ত মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সাত দিন, আট দিন! আমি তো মনে করি এগুলো সবই ঈদকে ঘিরে বাণিজ্য করার প্রয়াস। সবকিছুকেই সস্তা বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে। ফলে দর্শক প্রতারিত হচ্ছে। দর্শকের রুচি বদলে দেওয়া হচ্ছে। একজন শিল্পী যদি শুধু একটা ঈদের জন্য ২০ থেকে ২৫টা কাজ করেন, তাহলে তিনি কীভাবে নিজের কাজের মান ধরে রাখবেন? নির্মাতাদের ক্ষেত্রেও সেই একই প্রশ্ন। প্রায় অর্ধসহস্রাধিক কাজের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন নির্মাতার কাজ ভালো হচ্ছে। অনেক খারাপের ভিড়ে সেগুলো হারিয়ে যায়। আর সম্প্রচারের মাঝে যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, তাতে কেউই এখন আর স্বস্তির সঙ্গে ঈদের অনুষ্ঠান দেখতে পারে না।
বিপণন বিভাগের আধিপত্য বেড়েছে—বিপাশা হায়াত
যতটুকু বুঝেছি, কোন চ্যানেলে কী অনুষ্ঠান হচ্ছে, তা নিয়ে খুব বেশি মানুষের মাথাব্যথা নেই। যাদের আছে, তারা খুঁজে খুঁজে ভালো অনুষ্ঠানটি দেখানোর চেষ্টা করেন। তবে কিছু কিছু চ্যানেলে কিছু ভালো মানুষ আছেন, যাঁরা নিজেদের চ্যানেলে ভালো নাটক, ভালো অনুষ্ঠান প্রচার করতে চান। কিন্তু এ ধরনের মানুষের সংখ্যা কম বলেই ওই মানের অনুষ্ঠানের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। একটা ভালো অনুষ্ঠান ঢোকাতে হলে এই মানুষগুলোকে অনেক যুদ্ধ করতে হয়। আগে অনুষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মানুষজন অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা করতেন। এখন সেই স্থান দখল করেছে চ্যানেলগুলোর বিপণন বিভাগ। কোন শিল্পীকে নেওয়া হলে ওই অনুষ্ঠানটির বিপণনে তাদের সুবিধা হবে, সেই দিকটিই তারা বেশি বিবেচনা করে। এই অনুষ্ঠানগুলো দেখে দর্শক বিভ্রান্ত হচ্ছে কিনা, সেটা দেখারও কেউ নেই। টিভি যে একটা গণমাধ্যম, গণমানুষের প্রতি যে চ্যানেলগুলোর দায়বদ্ধতা আছে, তা অনেকেই ভুলে গেছে। টিভি চ্যানেলগুলো এখন দর্শক তৈরি কিংবা দর্শকের রুচি তৈরির বদলে বাণিজ্যকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। মূল্যবোধ থেকে এখন তারা অনেক দূরে সরে গেছে।
No comments