নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী-যেন ভাগ্যবিপর্যয় না ঘটে

পরীক্ষা ছাড়াই জিপিএর ভিত্তিতে কলেজগুলোয় একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার। সেই মতে, ছাত্রভর্তি হয়েছে সর্বত্র। কিন্তু কিছু বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব নীতিমালা অনুসরণ করাতে শিক্ষার্থীরা অসুবিধার মুখে পড়েছে। এর মধ্যে নটর ডেম কলেজ অন্যতম।


এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সরকারি নিয়মনীতি মেনে চললেও কিছু ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব নীতিমালাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কাছ থেকে সেই সুবিধা পেয়ে আসছে। কিন্তু এবার সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সেই সুবিধা থেকে সরে আসার জন্য বলা হয়েছে। এর পরও আইনের সুবিধা নিয়ে তারা ছাত্র ভর্তি করেছে। ভর্তির বিষয়টি নিয়ে আদালতেও রিট হয়েছে। বোর্ডের পক্ষে আবার আপিল করা হয়েছে। এদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষ নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্ত করা থেকেও বিরত রয়েছে। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে মারাত্মক অনিশ্চয়তা। 'এর শেষ দেখতে চাই'- এমন মন্তব্য করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নটর ডেম কলেজের ভর্তি-প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁদের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের এমন বিরোধপূর্ণ অবস্থান কাম্য নয়। দেশের সেরা কলেজগুলোর অন্যতম নটর ডেম তার ঐতিহ্যকে ধারণ করে এগিয়ে যাবে- এমন প্রত্যাশা সবারই। একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সংগত কারণেই সবার সহযোগিতাও প্রত্যাশা করতে পারে তারা। কিন্তু নটর ডেম কলেজ ও শিক্ষা বোর্ডের বিপরীতমুখী অবস্থান তার ব্যতিক্রম।
ভর্তির বিষয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয়। অনলাইন ভর্তি-প্রক্রিয়ায় ৩৮৯টি কলেজ অংশ নিয়েছে এবার। নটর ডেম কলেজ ভর্তি পদ্ধতি থেকে শিক্ষাদান পদ্ধতি- সব ক্ষেত্রেই নিজস্ব ধারা অবলম্বন করে থাকে। তাদের গৃহীত পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে এবং সে কারণেই তারা বছরের পর বছর দেশের সেরা কলেজ হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলেছে, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের বেশি সুবিধা দেওয়ার জন্যই নটর ডেম কলেজ পুরনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে চাইছে। এটা প্রণিধানযোগ্য যে কলেজটি বরাবরই খ্রিস্টান, মফস্বল, উপজাতির জন্য কিছু কোটা মেনে চলে। প্রশ্ন আসে, তাহলে এমন বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ?
দেশের বুদ্ধিজীবীদের বড় একটি অংশ নটর ডেম কলেজের নিজস্ব পদ্ধতিকে মেনে চলার সুবিধা প্রদানের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। সরকার যে সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি, তা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে সরকারি বক্তব্য থেকে। সরকার এই আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর ভাগ্য বিপর্যয় ডেকে আনার মতো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

No comments

Powered by Blogger.