লিমন, মানবাধিকার, মাইলাম এবং ভাইয়াহীন বিএনপি by মমতাজ লতিফ
দেশে এবং বিদেশেও বেশ ক’টি ঘটনা ঘটেছে যা জনমানুষকে ঈদের ছুটির মধ্যে, এর কিছু আগে তীব্রভাবে আন্দোলিত করেছে। প্রথমটি, ঝালকাঠির সেই দরিদ্র, অসহায় কলেজ ছাত্র র্যাবের গুলিতে পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা লিমন ও তার মায়ের দ্বিতীয়বার র্যাবের সোর্স কর্তৃক আক্রান্ত হবার ঘটনা।
জনগণ একই, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ দরিদ্র লিমনের ওপর আক্রমণ আবার তার বিরুদ্ধেই পুলিশের তদন্ত ও মামলা দায়ের করার ঘটনাকে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেখছে। একেই র্যাব বা পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্ত গ্রহণযোগ্য নয়, আবার দোষীর বিরুদ্ধে মামলা না হয়ে আক্রান্তের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার প্রয়াস বলেই অনেকে মনে করেন। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারও চলছে যেটিতে তারেক রহমান মুজাহিদদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে, আবার ১০ ট্রাক অস্ত্র চালান মামলাও চলছে। দেশে এ মুহূর্তে বিচার ব্যবস্থা যখন মজবুত হচ্ছে, তখন ব্যবস্থাটি যদি ভেঙ্গে পড়ে এবং প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে, তাহলে লিমনের আঘাতকারীরা এবং তাদের নেপথ্য ব্যক্তিরা, যুদ্ধাপরাধীরা, ২১ আগস্ট ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার অপরাধীরা খুশী হবে। ন্যায় বিচার, সুশাসন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে এরা বিপদগ্রস্ত হবে। তাছাড়া, র্যাবকে দিয়ে র্যাবের ভাবমূর্তি ধ্বংস করা গেলে দেশের বড় বড় চাঁদাবাজ, অন্যের ভূমি সম্পদ দখলকারী, নিরীহ মানুষ হত্যাকারী, এবং মৌলবাদী উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর গ্রেফতারে র্যাব যে বিশাল ভূমিকা রাখছে, তাদের এই দৃঢ় অবস্থান দুর্বল হয়ে যেতে পারে,তাতে জঙ্গী ও দুর্বৃত্তরা আরার মাথা চাড়া দেবার সুযোগ পাবে। এই সাথে সম্ভবত তারা লিমনের পাশে দাঁড়ানো জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানকেও কি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে? ওরা কি জানতে চাইছে মানবাধিকার কমিশন নখ-দন্তহীন বাঘ মাত্র? ওরা মানুষকে সুরক্ষা দিতে অপারগ, অক্ষম?
সরকারকে দ্রুত লিমনের নিরাপত্তা ও মামলা প্রত্যাহার করে নেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন দেশ বিরোধী শক্তি যেন এ সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে। দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছেÑ একটি বিদেশী মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধির বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উচ্চ হারের জন্য সরকারকে সবক দেয়া, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ‘লাস্ট’ হওয়া, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় রেটিংয়ে সর্বনিম্নে থাকা। ষোলো কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারে বন্যা, দুর্যোগ কবলিত মাত্র পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের একটি রাষ্ট্র, এটি কয়টি দেশ পারে, তা ঐ খাদ্য বিষয়ক প্রতিবেদনের সম্পাদককে জিজ্ঞেস করা দরকার। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেস আলী এ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য সরকারী সূত্রে ২৫ মিলিয়ন ডলার, অন্য সূত্রে জানছি তিন বারে মোট ৭৫ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লবিস্ট নিয়োগ করেছে! সম্ভবত এরা সেই অঙ্কের ডলারের সুবিধাভোগী। তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেটে ফেসবুকে বা ব্লগে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী, ’৭৫-এর খুনী, ২০০১-২০০৬-এর খুনী ও জঙ্গী জন্মদাতা, লুটেরাদের কীর্তিকলাপ ছড়িয়ে দিলে ঐ প্রচারণা মিথ্যা হিসেবে পশ্চিমাদের কাছে প্রতিভাত হবে। এ কাছটিকে আন্তরিকতার সঙ্গে করতে হবে। এ কাজে ঢিলেমি করার কোন সুযোগ নেই। তৃতীয় ঘটনাটি চলমান গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি অংশের উদ্বেগ প্রকাশ ও সরকারকে যা সরকার করেনি, সেই দোষে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। সেদিন একজন অষ্ট্রেলীয় আমাকে এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে, সেসবের উত্তর আমি দিয়েছি। একটি উত্তর শুধু প্রকাশ করছি, যেহেতু গ্রামীণ নারী-শিশুদের নিয়ে কাজ করেছি, তার ফলে আমার গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর যে চিত্র দেখি, তার ভিত্তিতে বললাম, কিছু স্বাক্ষর, সামান্য লেখাপড়া জানা গ্রামীণের ঋণ গ্রহীতা নারীরা যারা স্বামী নয়, শাশুড়িকেও কোন ভিন্ন মত জানাতে পারে না, তারা পরামর্শক পরিষদে বসে অতি উচ্চ শিক্ষিত, দেশ-বিদেশ যার করায়ত্ত এমন ব্যক্তির সঙ্গে কোন কারণে ভিন্ন মত কি প্রকাশ করতে পারে! ওরা কি কোন রুল ভঙ্গ হচ্ছে তা উচ্চশিক্ষিত বসকে বলতে পারবে? যাক, এর মধ্যে মহাবিপদ সঙ্কেতের মতই উইলিয়াম বি, মাইলাম নামের এক প্রাক্তন কূটনীতিক, বর্তমানে কোন একটি ফাউন্ডেশনের সদস্য ওয়ালস্ট্রীট জার্নালে লিখিতভাবে ঘোষণা দেয়, পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকার যা করছে তার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা। মাইলাম নামটি বহু আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী হিসেবে যেন শুনেছিলাম। সে ব্যক্তি ঐ ২৫ মিলিয়নের মধ্যে সংযুক্ত হয়েছে কিনা জানি না, তবে, এ সময়ে, হঠাৎ এই ঈশান কোন থেকে ঝড় ওঠার আভাস যেন পাচ্ছি। কেন জানি না, ১৯৭৪-৭৫ এর কথা মনে পড়ে গেল। যখনই দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই ’৭১-৭৫-এর দেশী-বিদেশী শত্রুরা বাঙালীর উন্নয়নকে স্তব্ধ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক আঘাত হানে। এখনো মনে পড়ে, ‘৭৫-এর বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যখন মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছি, শুনলাম ফারুক-রশীদ-ডালিমরা মন্ত্রিসভা গঠন করছে, দেখলাম সাদা-কালো টিভি পর্দায় মন্ত্রিসভা গঠন আয়োজনকে নানা নির্দেশ দানরত রাষ্ট্রদূত বোস্টারকে। সে পর্দার অন্তরালে থাকার চেষ্টা করছিল, বাম দিকে ক্যামেরায় মাঝে মাঝে তাকে এক ঝলক করে দেখা গিয়েছিল বলে মনে পড়ে। সরকার বুদ্ধিজীবী তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধপন্থী সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য এইসব শত্রুদের মোকাবেলার জন্য ভীষণ জরুরী। আমরা কিছুতেই ’৭১-৭৫-এর মানবতাবিরোধীদের কাছে হারতে পারি না। আরেকটি ঘটনা হচ্ছে সম্প্রতি খালেদা জিয়া যুব দলের কমিটি গঠন নিয়ে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি যুবদলের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে প্রয়াসী যুবকদের প্রায় সতর্ক করে দিয়ে যা বলেছেন তার মর্মার্থ হচ্ছে ভাইয়ার লোক বলে তদবির করতে আসলে চলবে না, তারেক অসুস্থ, এখন ও রাজনীতিতে নামতে পারবে না, সুস্থ হলে আসবে, এখন যোগ্যতা ও আন্তরিকতা দেখে যে কমিটি গঠন করব, সেটা সবাইকে মানতে হবে। সংবাদ সূত্রে এটিও জানা গেছে, তারেকের মনোনীতি ব্যক্তিদের না নেয়ার সংবাদে তারেক তার মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই বলে তারেক চুপচাপ বসে থাকবার লোকও নয়। ২০০১-এর নির্বাচন থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়কালে খালেদা ও বিএনপি চলেছিল তারেক নির্দেশিত ও প্রভাবিত অপরাজনীতি চর্চার পথে। বর্তমানে ২০১২ সালে তারেকের কর্মকা-ের ফলে তারেক বিএনপির জন্য একটি রাজনৈতিক বোঝাস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালেদা ও বিএনপির মূল গোষ্ঠীকে এ সত্য উপলব্ধি করেছে যে, তারেকের নেতিবাচক রাজনীতি দেশী-বিদেশী, কাউকে পক্ষে টানতে অসমর্থ, বরং তারেকের প্রভাব উপেক্ষা করে মোটামুটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে অগ্রসর হলে বিএনপি দেশী-বিদেশী সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হবে। এর ফল আসন্ন নির্বাচনেও পড়বে অর্থাৎ তারেকবিহীন বিএনপি নির্বাচনে ভাল ফল করবে তারেক-প্রভাবিত বিএনপির তুলনায়। বিএনপিকে এই রাজনৈতিক হিসাবটি করে তবেই অগ্রসর হতে হবে এবং খালেদা এই পথেই অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান সৌদী আরব, জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ এবং তাদের মদদদাতা আশ্রয়-অর্থদাতা জামায়াতের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের কাছে বিএনপির কোন বিকল্প নেই। আবার বিএনপির অস্তিত্ব রক্ষা পাবে তারেকহীন বিএনপি দ্বারা। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং তাদের গোয়েন্দা বাহিনী শুধু যে তারেকের অন্যায় পথে বিপুল অর্থ আয় ও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনার প্রমাণ জানে, তা নয়, তাদের কাছে এর চাইতে বড় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় হচ্ছে উগ্র জঙ্গীদের জন্ম ও প্রসারে তারেক প্রভাবিত চারদলীয় জোটের সক্রিয় ভূমিকা রাখা, যা খালেদাকে বিবেচনা করতে হচ্ছে। এর পরিণতিতে খালেদা তাঁর আগের ভারত-বিরোধিতা এবং ভারতীয় জঙ্গীদের আশ্রয় প্রশ্রয়দান, ভারতে পাকিস্তানের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কাজে সহায়তাদান এই ইস্যুগুলোতে সম্ভবত বিএনপির অবস্থান পরিবর্তনের আভাস দিতে শীঘ্রই ভারত সফরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রকেও বিএনপি নেত্রীর গণতন্ত্রের শত্রু জঙ্গীদের দমনের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার দিতে হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। এর মধ্যে নাজমুল হুদার উদ্যোগ, কর্নেল অলি বা বি. চৌধুরীরা সম্ভবত ‘ওয়েট এ্যান্ড্ সি’ অবস্থানে রয়েছেন।
যাই হোক এবারের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন দলবা জোটকে জিতিয়ে আনতে না পারলে দেশ আবার মধ্য যুগের মগেরমুল্লুকে পরিণত হবে, সব অর্জন নিমিষে তারেক-নিজামী-ফারুকরা ধূলিসাত করে দেবে। সময়ের প্রদক্ষেপ সময়েই নিতে হবে।
সরকারকে দ্রুত লিমনের নিরাপত্তা ও মামলা প্রত্যাহার করে নেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন দেশ বিরোধী শক্তি যেন এ সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে। দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছেÑ একটি বিদেশী মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধির বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উচ্চ হারের জন্য সরকারকে সবক দেয়া, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ‘লাস্ট’ হওয়া, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় রেটিংয়ে সর্বনিম্নে থাকা। ষোলো কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারে বন্যা, দুর্যোগ কবলিত মাত্র পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের একটি রাষ্ট্র, এটি কয়টি দেশ পারে, তা ঐ খাদ্য বিষয়ক প্রতিবেদনের সম্পাদককে জিজ্ঞেস করা দরকার। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেস আলী এ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য সরকারী সূত্রে ২৫ মিলিয়ন ডলার, অন্য সূত্রে জানছি তিন বারে মোট ৭৫ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লবিস্ট নিয়োগ করেছে! সম্ভবত এরা সেই অঙ্কের ডলারের সুবিধাভোগী। তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেটে ফেসবুকে বা ব্লগে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী, ’৭৫-এর খুনী, ২০০১-২০০৬-এর খুনী ও জঙ্গী জন্মদাতা, লুটেরাদের কীর্তিকলাপ ছড়িয়ে দিলে ঐ প্রচারণা মিথ্যা হিসেবে পশ্চিমাদের কাছে প্রতিভাত হবে। এ কাছটিকে আন্তরিকতার সঙ্গে করতে হবে। এ কাজে ঢিলেমি করার কোন সুযোগ নেই। তৃতীয় ঘটনাটি চলমান গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি অংশের উদ্বেগ প্রকাশ ও সরকারকে যা সরকার করেনি, সেই দোষে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। সেদিন একজন অষ্ট্রেলীয় আমাকে এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে, সেসবের উত্তর আমি দিয়েছি। একটি উত্তর শুধু প্রকাশ করছি, যেহেতু গ্রামীণ নারী-শিশুদের নিয়ে কাজ করেছি, তার ফলে আমার গ্রামীণ সমাজ কাঠামোর যে চিত্র দেখি, তার ভিত্তিতে বললাম, কিছু স্বাক্ষর, সামান্য লেখাপড়া জানা গ্রামীণের ঋণ গ্রহীতা নারীরা যারা স্বামী নয়, শাশুড়িকেও কোন ভিন্ন মত জানাতে পারে না, তারা পরামর্শক পরিষদে বসে অতি উচ্চ শিক্ষিত, দেশ-বিদেশ যার করায়ত্ত এমন ব্যক্তির সঙ্গে কোন কারণে ভিন্ন মত কি প্রকাশ করতে পারে! ওরা কি কোন রুল ভঙ্গ হচ্ছে তা উচ্চশিক্ষিত বসকে বলতে পারবে? যাক, এর মধ্যে মহাবিপদ সঙ্কেতের মতই উইলিয়াম বি, মাইলাম নামের এক প্রাক্তন কূটনীতিক, বর্তমানে কোন একটি ফাউন্ডেশনের সদস্য ওয়ালস্ট্রীট জার্নালে লিখিতভাবে ঘোষণা দেয়, পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকার যা করছে তার বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা। মাইলাম নামটি বহু আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী হিসেবে যেন শুনেছিলাম। সে ব্যক্তি ঐ ২৫ মিলিয়নের মধ্যে সংযুক্ত হয়েছে কিনা জানি না, তবে, এ সময়ে, হঠাৎ এই ঈশান কোন থেকে ঝড় ওঠার আভাস যেন পাচ্ছি। কেন জানি না, ১৯৭৪-৭৫ এর কথা মনে পড়ে গেল। যখনই দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই ’৭১-৭৫-এর দেশী-বিদেশী শত্রুরা বাঙালীর উন্নয়নকে স্তব্ধ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক আঘাত হানে। এখনো মনে পড়ে, ‘৭৫-এর বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যখন মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছি, শুনলাম ফারুক-রশীদ-ডালিমরা মন্ত্রিসভা গঠন করছে, দেখলাম সাদা-কালো টিভি পর্দায় মন্ত্রিসভা গঠন আয়োজনকে নানা নির্দেশ দানরত রাষ্ট্রদূত বোস্টারকে। সে পর্দার অন্তরালে থাকার চেষ্টা করছিল, বাম দিকে ক্যামেরায় মাঝে মাঝে তাকে এক ঝলক করে দেখা গিয়েছিল বলে মনে পড়ে। সরকার বুদ্ধিজীবী তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধপন্থী সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য এইসব শত্রুদের মোকাবেলার জন্য ভীষণ জরুরী। আমরা কিছুতেই ’৭১-৭৫-এর মানবতাবিরোধীদের কাছে হারতে পারি না। আরেকটি ঘটনা হচ্ছে সম্প্রতি খালেদা জিয়া যুব দলের কমিটি গঠন নিয়ে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি যুবদলের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে প্রয়াসী যুবকদের প্রায় সতর্ক করে দিয়ে যা বলেছেন তার মর্মার্থ হচ্ছে ভাইয়ার লোক বলে তদবির করতে আসলে চলবে না, তারেক অসুস্থ, এখন ও রাজনীতিতে নামতে পারবে না, সুস্থ হলে আসবে, এখন যোগ্যতা ও আন্তরিকতা দেখে যে কমিটি গঠন করব, সেটা সবাইকে মানতে হবে। সংবাদ সূত্রে এটিও জানা গেছে, তারেকের মনোনীতি ব্যক্তিদের না নেয়ার সংবাদে তারেক তার মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই বলে তারেক চুপচাপ বসে থাকবার লোকও নয়। ২০০১-এর নির্বাচন থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়কালে খালেদা ও বিএনপি চলেছিল তারেক নির্দেশিত ও প্রভাবিত অপরাজনীতি চর্চার পথে। বর্তমানে ২০১২ সালে তারেকের কর্মকা-ের ফলে তারেক বিএনপির জন্য একটি রাজনৈতিক বোঝাস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালেদা ও বিএনপির মূল গোষ্ঠীকে এ সত্য উপলব্ধি করেছে যে, তারেকের নেতিবাচক রাজনীতি দেশী-বিদেশী, কাউকে পক্ষে টানতে অসমর্থ, বরং তারেকের প্রভাব উপেক্ষা করে মোটামুটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে অগ্রসর হলে বিএনপি দেশী-বিদেশী সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হবে। এর ফল আসন্ন নির্বাচনেও পড়বে অর্থাৎ তারেকবিহীন বিএনপি নির্বাচনে ভাল ফল করবে তারেক-প্রভাবিত বিএনপির তুলনায়। বিএনপিকে এই রাজনৈতিক হিসাবটি করে তবেই অগ্রসর হতে হবে এবং খালেদা এই পথেই অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান সৌদী আরব, জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ এবং তাদের মদদদাতা আশ্রয়-অর্থদাতা জামায়াতের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের কাছে বিএনপির কোন বিকল্প নেই। আবার বিএনপির অস্তিত্ব রক্ষা পাবে তারেকহীন বিএনপি দ্বারা। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং তাদের গোয়েন্দা বাহিনী শুধু যে তারেকের অন্যায় পথে বিপুল অর্থ আয় ও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনার প্রমাণ জানে, তা নয়, তাদের কাছে এর চাইতে বড় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় হচ্ছে উগ্র জঙ্গীদের জন্ম ও প্রসারে তারেক প্রভাবিত চারদলীয় জোটের সক্রিয় ভূমিকা রাখা, যা খালেদাকে বিবেচনা করতে হচ্ছে। এর পরিণতিতে খালেদা তাঁর আগের ভারত-বিরোধিতা এবং ভারতীয় জঙ্গীদের আশ্রয় প্রশ্রয়দান, ভারতে পাকিস্তানের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কাজে সহায়তাদান এই ইস্যুগুলোতে সম্ভবত বিএনপির অবস্থান পরিবর্তনের আভাস দিতে শীঘ্রই ভারত সফরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রকেও বিএনপি নেত্রীর গণতন্ত্রের শত্রু জঙ্গীদের দমনের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার দিতে হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। এর মধ্যে নাজমুল হুদার উদ্যোগ, কর্নেল অলি বা বি. চৌধুরীরা সম্ভবত ‘ওয়েট এ্যান্ড্ সি’ অবস্থানে রয়েছেন।
যাই হোক এবারের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন দলবা জোটকে জিতিয়ে আনতে না পারলে দেশ আবার মধ্য যুগের মগেরমুল্লুকে পরিণত হবে, সব অর্জন নিমিষে তারেক-নিজামী-ফারুকরা ধূলিসাত করে দেবে। সময়ের প্রদক্ষেপ সময়েই নিতে হবে।
No comments