যে কথা কেউ জানত না by অমিত বসু
বর্ষার শাসনে মরিয়া টেমস। কূল ছাপিয়ে ঘরে ঢোকার ইচ্ছে। কোনো বাধাকেই আমল দিচ্ছে না। লন্ডন লণ্ডভণ্ড হলো বলে। রানি এলিজাবেথের হীরক জয়ন্তী উৎসবের প্রমোদ তরণী কম্পমান। বৃষ্টির সুতোয় বাঁধা আসমান-জমিন। অস্ত্র নিয়ে সতর্ক পাহারা নিরাপত্তা বাহিনীর। লাভ নেই। প্রকৃতির সঙ্গে লড়ার ক্ষমতা কার? কোনোক্রমে উৎসব অতিক্রান্ত।
স্বস্তির শ্বাস জনতার। ক্ষণিক বিরতির পরই বিস্ফোরণ। বারুদের লয় শব্দের। বেতার তরঙ্গে প্রচারিত দালাই লামার কোমল উচ্চারণ। নরম হলেও অবিস্মরণীয়। একি বলছেন তিনি। কোন ভাবনার ঢেউয়ে ভাসছেন। এত কথার মেঘ কোত্থেকে উড়ে এলো তাঁর মনে। বাক্-বৃষ্টি কি থামবে না? তিনি কি বুঝছেন না, তাঁর কথায় শুধু লন্ডন নয়, দুনিয়া ভাসছে?
শ্রমণ তিনি। তাই সংযমী অবশ্যই। নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষার ডানা ছেঁটে ফেলেছেন সেই কবেই। ভাবনা কেবল মানুষের কল্যাণের। সে কাজ তো কখনোই সম্পন্ন হওয়ার নয়। একাও করার নয়। মিলিত আবেগে বিশ্বমৈত্রীর বন্ধন কি কম কথা? সেটা কি কেবল ধর্মীয় চেতনায় হয়, না রাজনীতিরও দরকার পড়ে। পড়লে রাস্তা ভিন্ন হয়ে যায়। এগোতে বাধা আসে। প্রতিপক্ষ প্রতিরোধে শাণ দেয়। সহজ কাজ জটিল হয়ে যায়। মিত্র শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের ভালো চেয়ে সে কারণেই নির্বাসিত হতে হয়েছে তাঁকে। স্বদেশ তিব্বত ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতের শৈল শহরের ধর্মশালায়। হিমাচল প্রদেশের মগ্ন মৈনাক পাহারা দিয়ে রেখেছে তাঁকে। কোনোভাবেই অশান্তির সর্পিল স্রোত যাতে প্রবেশ করতে না পারে। মৌন পরিবেশেও তাঁকে সময়-অসময়ে মুখর হতে হয়। চুপ করে থাকলে চলবে কেন? তিনি দেশনেতা আবার বিশ্বপথিক। আইন ভেঙে উল্টাপাল্টা ট্রাফিক রাস্তা জ্যাম করে থাকলে তিনি চলবেন কী করে। বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর মন্তব্য প্রখর। শব্দের চেয়ে আর বড় অস্ত্র কী হতে পারে? ঠিকমতো চালাতে পারলে কাজ হয় বইকি। স্থির হয়ে থাকা তাঁর ধাতে নেই। ছুটে বেড়ান পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। সব কথা সবাই যে মানে, তা নয়। তবু বলা তো চাই। তাঁর নীতি-আদর্শের কথা লোককে জানাতেই হবে। না জানালে কী করে তাঁর ভাবনার হদিস পাবে মানুষ।
১৯৫৯ থেকে তিনি ধর্মশালায় আছেন। আত্মিক ঐশ্বর্যে মনকে যতই শান্ত রাখার চেষ্টা করুন, অন্তরে রক্তক্ষরণ তো হবেই। পরবাসে থাকার গ্লানি তাঁকে কুরে কুরে খায়। মুক্তির জন্য নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ করেন। পছন্দ হলে রাখেন, নইলে আবার ভাঙেন। ভাঙা-গড়ার মধ্যে নিজেকে খোঁজেন। চিরন্তন সত্যকে উপলব্ধির চেষ্টা করেন। ভাবনাবিদ্ধ হয় সেই অনিবার্য প্রশ্নে- আগে মানুষ, না দেশ। মানুষ ছাড়া দেশ হয় না সবাই জানে। কিন্তু নিজের দেশে গণ্ডিবদ্ধ হয়ে থাকাটাই কি ভবিতব্য, না বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিযান অনিবার্য।
পাখি আকাশ ভালোবাসে। নীড়টাও তার কাছে জরুরি। উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে যখন সেখানে ফেরে, স্বস্তি পায়। নিজের ঘরের নিশ্চিন্ত আশ্রয় আছে বলেই আকাশে ওড়ার এত সাহস। দালাই লামার সেটা নেই। পর্বত আর মালভূমির দেশ তিব্বত তাঁর জন্মভূমি। প্রথম আলো দেখা, পৃথিবীকে চেনার শুরু সেখানেই। মাতৃভূমির কোল আঁকড়ে থাকতে চেয়েছেন চিরদিন। পারেননি। লামা শাসনের কর্ণধার হয়ে স্বদেশ শাসন করেছেন দীর্ঘদিন। অধিকার স্থায়ী হয়নি। চীন বিচ্ছিন্ন করেছে তাঁদের। ১৯৫৩-তে তিব্বতে বৌদ্ধ লামাদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে কমিউনিস্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। লামারা হাল ছাড়েননি। বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। আন্দোলনে অচল তখন তিব্বত। চীনের সেনাবাহিনী তাঁদের দমন করেছে কড়া হাতে। দালাই লামা এক লাখ তিব্বতিসহ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
নির্বাসিত তিব্বতিদের আশা ছিল, একদিন তারা ঘরে ফিরবে। নিজেদের নীড়ে আশ্রয় নেবে। মায়ের কোলে থাকার পুরনো পুলক ফিরে পাবে। সেটা হয়নি। চীনের মুঠো থেকে স্বদেশকে বার করে আনা যায়নি। বরং স্বভূমির সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। চীন ক্রমেই জেঁকে বসেছে। চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। রেলপথ চালু হয়েছে। পণ্য আদান-প্রদানের অসুবিধা কমেছে। এতে তিব্বতের লাভই হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ডানায় জোর এসেছে। দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ ঘটেছে।
স্ট্র্যাটেজিক কারণে তিব্বতের গুরুত্ব বেশি। তিব্বত চাইলে বাংলাদেশ ও ভারতকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদের উৎস সেখানে। বিদ্যুৎ আর সেচের আশায় সেখানে বাঁধের পর বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ও ভারতে ব্রহ্মপুত্রের স্রোত কমছে। ভারত কূটনৈতিক চাপ দিয়েও সুবিধা করতে পারছে না। নদী এমন একটা বস্তু, যাকে ঘিরে সারা বিশ্বে কোলাহল। অন্তহীন বিবাদ-বিসংবাদ। সমাধান দূরস্থ। উজানে যে দেশ থাকে, তার হাতেই নদীর নিয়ন্ত্রণ। ব্রহ্মপুত্র এখন চীনের অস্ত্র। কোনো অবস্থায়ই এ অস্ত্র ত্যাগে রাজি নয় তারা। ভারত জোর দিয়ে কিছু বলতে গেলেই চীন তিস্তার কথা তুলছে। বলছে, তোমরা বাংলাদেশকে তিস্তার ন্যায্য ভাগ দিতে ইতস্তত করছ, আবার আমাদের কাছে ব্রহ্মপুত্রের অতিরিক্ত ভাগ চাইছ।
বাংলাদেশের ওপর দালাই লামার দুর্বলতা যথেষ্ট। তাঁর ধারণা, এই দেশ একদিন বিশ্বের সেরা দেশ হবে। কারণ তারা ভালোবাসায় মানুষকে জয় করতে জানে। সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেয়। জীবন-সায়াহ্নেও তাঁর স্বপ্ন ফুরোয়নি। বিশ্বভ্রাতৃত্বের রক্ষাকবচ হিসেবে বাঁচতে চান। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা কোথায়? শক্তি বলতে আধ্যাত্মিকতা। তা দিয়ে হিংসার আগুন কতটা নেভাতে পারবেন তিনি।
কী হবে আর কী হবে না- ভেবে বসে নেই তিনি। শান্তির দূতের দায়িত্ব পালন করছেন নিবিষ্ট চেতনায়। লন্ডনে তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। চীনকেও তিনি আর শত্রু মনে করেন না। যাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করায় তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল, সেই প্রয়াত চীনের চেয়ারম্যান মাও দে জংকে পিতার আসনে বসিয়েছেন। বলেছেন, মাও ছিলেন আমার বাবার মতো। আমাকে পুত্রস্নেহে বেঁধেছিলেন। ছোট-বড় সব অনুষ্ঠানে আমায় পাশে নিয়ে ঘুরতেন। খাবার টেবিলের পাশে বসে যত্ন করে খাওয়াতেন। সে আদর ছিল তুলনাহীন। তাঁর সঙ্গে সফর করার একটা অসুবিধা অবশ্য ছিল। তিনি ছিলেন চেন স্মোকার। সর্বক্ষণ কাশতেন। ভয় হতো, ভাইরাস না আমার মধ্যে ঢুকে পড়ে। তাহলে এটাই দাঁড়ায়, দালাই লামা একসময় বিদ্রোহী হয়েছিলেন পিতার বিরুদ্ধে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে যুযুধানজনক এবং সন্ত্রাসী বিশ্ব কিন্তু জানত না তাঁদের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা। জানল তাঁর বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে। চীন এখন কী করবে? শেষ বেলায় দালাই লামাকে কি তাঁর ঘরে পৌঁছে দেবে, না পুরনো অভিমানে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
শ্রমণ তিনি। তাই সংযমী অবশ্যই। নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষার ডানা ছেঁটে ফেলেছেন সেই কবেই। ভাবনা কেবল মানুষের কল্যাণের। সে কাজ তো কখনোই সম্পন্ন হওয়ার নয়। একাও করার নয়। মিলিত আবেগে বিশ্বমৈত্রীর বন্ধন কি কম কথা? সেটা কি কেবল ধর্মীয় চেতনায় হয়, না রাজনীতিরও দরকার পড়ে। পড়লে রাস্তা ভিন্ন হয়ে যায়। এগোতে বাধা আসে। প্রতিপক্ষ প্রতিরোধে শাণ দেয়। সহজ কাজ জটিল হয়ে যায়। মিত্র শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের ভালো চেয়ে সে কারণেই নির্বাসিত হতে হয়েছে তাঁকে। স্বদেশ তিব্বত ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন ভারতের শৈল শহরের ধর্মশালায়। হিমাচল প্রদেশের মগ্ন মৈনাক পাহারা দিয়ে রেখেছে তাঁকে। কোনোভাবেই অশান্তির সর্পিল স্রোত যাতে প্রবেশ করতে না পারে। মৌন পরিবেশেও তাঁকে সময়-অসময়ে মুখর হতে হয়। চুপ করে থাকলে চলবে কেন? তিনি দেশনেতা আবার বিশ্বপথিক। আইন ভেঙে উল্টাপাল্টা ট্রাফিক রাস্তা জ্যাম করে থাকলে তিনি চলবেন কী করে। বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর মন্তব্য প্রখর। শব্দের চেয়ে আর বড় অস্ত্র কী হতে পারে? ঠিকমতো চালাতে পারলে কাজ হয় বইকি। স্থির হয়ে থাকা তাঁর ধাতে নেই। ছুটে বেড়ান পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। সব কথা সবাই যে মানে, তা নয়। তবু বলা তো চাই। তাঁর নীতি-আদর্শের কথা লোককে জানাতেই হবে। না জানালে কী করে তাঁর ভাবনার হদিস পাবে মানুষ।
১৯৫৯ থেকে তিনি ধর্মশালায় আছেন। আত্মিক ঐশ্বর্যে মনকে যতই শান্ত রাখার চেষ্টা করুন, অন্তরে রক্তক্ষরণ তো হবেই। পরবাসে থাকার গ্লানি তাঁকে কুরে কুরে খায়। মুক্তির জন্য নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ করেন। পছন্দ হলে রাখেন, নইলে আবার ভাঙেন। ভাঙা-গড়ার মধ্যে নিজেকে খোঁজেন। চিরন্তন সত্যকে উপলব্ধির চেষ্টা করেন। ভাবনাবিদ্ধ হয় সেই অনিবার্য প্রশ্নে- আগে মানুষ, না দেশ। মানুষ ছাড়া দেশ হয় না সবাই জানে। কিন্তু নিজের দেশে গণ্ডিবদ্ধ হয়ে থাকাটাই কি ভবিতব্য, না বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিযান অনিবার্য।
পাখি আকাশ ভালোবাসে। নীড়টাও তার কাছে জরুরি। উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে যখন সেখানে ফেরে, স্বস্তি পায়। নিজের ঘরের নিশ্চিন্ত আশ্রয় আছে বলেই আকাশে ওড়ার এত সাহস। দালাই লামার সেটা নেই। পর্বত আর মালভূমির দেশ তিব্বত তাঁর জন্মভূমি। প্রথম আলো দেখা, পৃথিবীকে চেনার শুরু সেখানেই। মাতৃভূমির কোল আঁকড়ে থাকতে চেয়েছেন চিরদিন। পারেননি। লামা শাসনের কর্ণধার হয়ে স্বদেশ শাসন করেছেন দীর্ঘদিন। অধিকার স্থায়ী হয়নি। চীন বিচ্ছিন্ন করেছে তাঁদের। ১৯৫৩-তে তিব্বতে বৌদ্ধ লামাদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে কমিউনিস্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। লামারা হাল ছাড়েননি। বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। আন্দোলনে অচল তখন তিব্বত। চীনের সেনাবাহিনী তাঁদের দমন করেছে কড়া হাতে। দালাই লামা এক লাখ তিব্বতিসহ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
নির্বাসিত তিব্বতিদের আশা ছিল, একদিন তারা ঘরে ফিরবে। নিজেদের নীড়ে আশ্রয় নেবে। মায়ের কোলে থাকার পুরনো পুলক ফিরে পাবে। সেটা হয়নি। চীনের মুঠো থেকে স্বদেশকে বার করে আনা যায়নি। বরং স্বভূমির সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। চীন ক্রমেই জেঁকে বসেছে। চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। রেলপথ চালু হয়েছে। পণ্য আদান-প্রদানের অসুবিধা কমেছে। এতে তিব্বতের লাভই হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ডানায় জোর এসেছে। দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ ঘটেছে।
স্ট্র্যাটেজিক কারণে তিব্বতের গুরুত্ব বেশি। তিব্বত চাইলে বাংলাদেশ ও ভারতকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদের উৎস সেখানে। বিদ্যুৎ আর সেচের আশায় সেখানে বাঁধের পর বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ও ভারতে ব্রহ্মপুত্রের স্রোত কমছে। ভারত কূটনৈতিক চাপ দিয়েও সুবিধা করতে পারছে না। নদী এমন একটা বস্তু, যাকে ঘিরে সারা বিশ্বে কোলাহল। অন্তহীন বিবাদ-বিসংবাদ। সমাধান দূরস্থ। উজানে যে দেশ থাকে, তার হাতেই নদীর নিয়ন্ত্রণ। ব্রহ্মপুত্র এখন চীনের অস্ত্র। কোনো অবস্থায়ই এ অস্ত্র ত্যাগে রাজি নয় তারা। ভারত জোর দিয়ে কিছু বলতে গেলেই চীন তিস্তার কথা তুলছে। বলছে, তোমরা বাংলাদেশকে তিস্তার ন্যায্য ভাগ দিতে ইতস্তত করছ, আবার আমাদের কাছে ব্রহ্মপুত্রের অতিরিক্ত ভাগ চাইছ।
বাংলাদেশের ওপর দালাই লামার দুর্বলতা যথেষ্ট। তাঁর ধারণা, এই দেশ একদিন বিশ্বের সেরা দেশ হবে। কারণ তারা ভালোবাসায় মানুষকে জয় করতে জানে। সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেয়। জীবন-সায়াহ্নেও তাঁর স্বপ্ন ফুরোয়নি। বিশ্বভ্রাতৃত্বের রক্ষাকবচ হিসেবে বাঁচতে চান। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা কোথায়? শক্তি বলতে আধ্যাত্মিকতা। তা দিয়ে হিংসার আগুন কতটা নেভাতে পারবেন তিনি।
কী হবে আর কী হবে না- ভেবে বসে নেই তিনি। শান্তির দূতের দায়িত্ব পালন করছেন নিবিষ্ট চেতনায়। লন্ডনে তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। চীনকেও তিনি আর শত্রু মনে করেন না। যাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করায় তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল, সেই প্রয়াত চীনের চেয়ারম্যান মাও দে জংকে পিতার আসনে বসিয়েছেন। বলেছেন, মাও ছিলেন আমার বাবার মতো। আমাকে পুত্রস্নেহে বেঁধেছিলেন। ছোট-বড় সব অনুষ্ঠানে আমায় পাশে নিয়ে ঘুরতেন। খাবার টেবিলের পাশে বসে যত্ন করে খাওয়াতেন। সে আদর ছিল তুলনাহীন। তাঁর সঙ্গে সফর করার একটা অসুবিধা অবশ্য ছিল। তিনি ছিলেন চেন স্মোকার। সর্বক্ষণ কাশতেন। ভয় হতো, ভাইরাস না আমার মধ্যে ঢুকে পড়ে। তাহলে এটাই দাঁড়ায়, দালাই লামা একসময় বিদ্রোহী হয়েছিলেন পিতার বিরুদ্ধে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে যুযুধানজনক এবং সন্ত্রাসী বিশ্ব কিন্তু জানত না তাঁদের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কথা। জানল তাঁর বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে। চীন এখন কী করবে? শেষ বেলায় দালাই লামাকে কি তাঁর ঘরে পৌঁছে দেবে, না পুরনো অভিমানে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবে।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
No comments