জিরো ডার্ক থার্টি

লোকে মুখে কুলুপ এঁটে দেয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জেসিকা চ্যাস্টেইন কুলুপেই মুখ এঁটে দিয়েছেন। পেটে তাঁর পারমাণবিক বোমা মারলেও লাভ নেই। মুখ একেবারেই খুলবেন না। বিরাট এক মিশনের দায়িত্বে যে আছেন। সবুজ শান্তির পৃথিবীতে সন্ত্রাসবাদের কালো দৈত্যকে ডেকে আনা ওসামা বিন লাদেনকে নাশ করা।


জীবিত অথবা মৃত যেকোনো অবস্থায় ধরতে হবে জঙ্গিবাদের এই হোতাকে!
একটু গোলমেলে লাগছে? না, লাদেনকে তো আর আবার ধরার উপায় নেই। গত বছরই পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে লাদেনকে হত্যা করেছে অপারেশন নেপচুন স্পিয়ারে অংশ নেওয়া মার্কিন নৌবাহিনীর বিশেষ সেনারা। সেই মিশন নিয়ে অনেকের মনেই গভীর কৌতূহল। অনেকেরই সাধ ছিল সেই মিশন চাক্ষুষ করার। সেই সুবর্ণ সুযোগ মিলে যাচ্ছে। অপারেশন নেপচুন স্পিয়ারের গল্প নিয়ে আসছে নতুন ছবি জিরো ডার্ক থার্টি। সেই ছবিরই অন্যতম চরিত্রে অভিনয় করেছেন চ্যাস্টেইন। ছবির গল্প তো দূরের কথা, চ্যাস্টেইনের চরিত্রটির নামই এখনো জানা যায়নি!
অপারেশন নেপচুন স্পিয়ার ছিল বিশেষ গোপন এক মিশন। বারবার মার্কিন বাহিনীর পাতানো ফাঁদ গলে সুকৌশলে বেরিয়ে গেছেন লাদেন। ফলে অপারেশন নেপচুন স্পিয়ারের সময় নেওয়া হয় বিশেষ গোপনীয়তা। সেই একই রকম গোপনীয়তায় বানানো হয়েছে এই ছবিও। ছবির চিত্রনাট্য মার্ক বোয়ালের, পরিচালনা ক্যাথরিন বিগেলোর। সিনেমাপ্রেমীরা নাম দুটো শুনে নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন। যোগ্য জুটিই বানাচ্ছে ছবি। এই জুটিরই বানানো আরেকটি ছবি মিলিটারি অ্যাকশন থ্রিলার দ্য হার্ট লকার ২০০৯ সালের অস্কারে বাজিমাত করেছিল।
জিরো ডার্ক থার্টি মুক্তি পেতে পেতে সেই ডিসেম্বর। কিন্তু হুট করে সেই ছবি আলোচনার পেয়ালায় কেন? কারণ, চ্যাস্টেইনের আরেকটি ছবি মুক্তি পেতে যাচ্ছে এ সপ্তাহে। ট্রান্সফরমারস-তারকা শিয়া লেবিওফের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন ললেস ছবিতে। সেই ছবি নিয়ে কথা বলতেই সংবাদমাধ্যমের সামনে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়েছে চ্যাস্টেইনকে। স্বাভাবিকভাবেই জিরো ডার্ক থার্টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চ্যাস্টেইন ঝানু খেলোয়াড়ের মতো বেরিয়ে গেছেন সাংবাদিকদের পাতানো প্রশ্নের রক্ষণভাগ গলে।
জিরো ডার্ক থার্টি নিয়ে গোপনীয়তা সেই ছবির নাম দেওয়া থেকেই। প্রথমে ছবিটিকে অভিহিত করা হচ্ছিল আনটাইটেলড ক্যাথরিন বিগেলো ওসামা বিন লাদেন ফিল্ম বা আনটাইটেলড ইন্টারন্যাশনাল থ্রিলার নামে। কেউ কেউ বলছিলেন, ছবির নাম কিল বিন লাদেন অথবা হান্ট। অবশেষে ছবির প্রথম ট্রেলারে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম নিয়ে দেখা দেওয়া কৌতূহলের অবসান হয়।
ছবি বানাতে গিয়েও দেখা দিয়েছে নানা ঝক্কি। পাকিস্তান সুবিধাজনক লোকেশন মনে না হওয়ায় শুটিং হয়েছে ভারতের চণ্ডীগড়ে। চণ্ডীগড়ের কিছু কিছু অংশ নকশা করে লাহোর আর অ্যাবোটাবাদ বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। দক্ষিণপন্থী হিন্দু মৌলবাদীদের একটা অংশ এ নিয়ে মহাআপত্তি করে বসে। ভারতে কি না বানানো হচ্ছে ‘পাকিস্তান’।
যুক্তরাষ্ট্রেও বেশ বিতর্ক হয়। ছবির নির্মাতাদের রাষ্ট্রীয় অনেক গোপন স্পর্শকাতর তথ্য দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয় ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বিগেলো অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, সেই সময় এই ছবি নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলে ওবামাবিরোধীরা। জর্জ বুশ নিজে নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছিলেন লাদেনের হুমকি দেওয়া ভিডিও টেপে ভর করে। ওবামাও কি সেই পথে হাঁটছেন?
অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনের একদম আগ মুহূর্তে এ বছর অক্টোবরে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে ছবিটির। সনি দ্রুত গুঞ্জন শেষ করে দিতে ঘোষণা দেয়, ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে ডিসেম্বরে। অক্টোবরে ছবি মুক্তি দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কোনো ইচ্ছাই তাদের ছিল না। তবে সনির আরেকটি ইচ্ছা কিন্তু ফাঁস হয়ে গেছে। সনি সাধারণত ডিসেম্বরে সেই ছবিই মুক্তি দেয়, অস্কার জেতার যার সমূহ সম্ভাবনা!
 রাজীব হাসান
হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.