ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে দেশের চ্যানেলে চ্যানেলে ছিল ঈদের আয়োজন। কেমন ছিল সেসব অনুষ্ঠান, জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার দর্শকেরা -দর্শকের কথা

 ফরিদা নাজমীন প্রধান শিক্ষক অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া অন্য সময়ের চেয়ে টিভিতে ঈদের অনুষ্ঠানগুলো দেখার চেষ্টা করি। সন্তানদের সঙ্গে মিলে দেখেছি কয়েকটি টেলিফিল্ম। আর ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান আমার খুব ভালো লাগে। এবারের ইত্যাদি, আনন্দ মেলা, কৃষকের ঈদ আনন্দ ইত্যাদি মজার ছিল।


তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, বিটিভি অনেকটা আধুনিক হয়েছে। এবার তাদের অনুষ্ঠানের মান ভালো ছিল। নাটকগুলোও দেখে মজা পেয়েছি। তবে একসঙ্গে একাধিক চ্যানেলে একই অভিনেতার অভিনয়ে বিরক্ত লেগেছে।

 মলিনা
গার্মেন্টস-কর্মী
ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি নাটোরে গিয়েছিলাম। সেখানে বসে টিভিতে নাটক দেখেছি। সব নাটক ভালো লাগেনি। প্রেমের নাটক দেখতে ভালো লাগে, হা হা হা। আমাদের দেশের টিভিতে ঈদে বেশি বিজ্ঞাপন দেখায়। তাই ঈদের দিন ভারতীয় বাংলা চ্যানেলের রাশি, মা, টাপুরটুপুর দেখেছি। আমাদের গ্রামে বাংলাদেশি সব চ্যানেল আসে না। তাই দেখা হয় না।

 সৈয়দা মাফতুহা খাতুন
শিক্ষার্থী
ব্যবস্থাপনা বিভাগ, সরকারি বাঙলা কলেজ
ঈদের নাটকগুলো বেছে বেছে দেখার চেষ্টা করি। আগে থেকে বিজ্ঞাপন দেখে ঠিক করে রাখি কোনটা কোনটা দেখব। এবার ঈদের দিন বৃষ্টি হওয়ায় বাইরে যাইনি। তাই নাটক দেখেছি। কিন্তু বিজ্ঞাপনের কারণে ঠিকমতো দেখা হয়নি। বিজ্ঞাপন এলেই চ্যানেল ঘুরাই। তবে কিছু কিছু চ্যানেল বিজ্ঞাপন টাইম লিখে দেওয়ায় দেখতে সুবিধা হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে যে চ্যানেল অনুষ্ঠান দেখিয়েছে, খুব বেশি মিস করিনি। দু-একটি ছাড়া কোনো বাংলা সিনেমা ভালো ছিল না। তারকাদের টক শো দেখে ভালো লেগেছে।

 সামসুন নাসরীন খান
গৃহিণী, গেন্ডারিয়া, ঢাকা
অন্যবারের ঈদের চেয়ে এবার টিভি দেখার সময়টা বেশি পেয়েছি। তবে অধিকাংশ নাটকই সম্পন্ন করতে পারিনি। বিজ্ঞাপন দিলেই চ্যানেল ঘুরাই, তাই আগের চ্যানেলে আর ফিরে আসা হয় না। এমনটি হয়েছে বেশি। হুমায়ূন আহমেদের ছবিগুলো দেখার চেষ্টা করেছি। তবে তাঁর শুরুর দিকের পুরোনো নাটকগুলো দেখালে ভালো লাগত। আমি ঈদে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানগুলো দেখেছি। ইত্যাদি ও কৃষকের ঈদ আনন্দ অনুষ্ঠান দুটি দেখে ভালো লেগেছে। বাচ্চাদের অনুষ্ঠান দেখেছি নাতিদের সঙ্গে নিয়ে। বেশ মজা পেয়েছি। আমার মনে হয়, বাচ্চাদের এমন অনুষ্ঠান নিয়মিত হলে তাদের কার্টুন বা ডোরেমন দেখা কমে আসত। বিজ্ঞাপনের জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দিলে ভালো হতো। তা না হলে সময় বেশি নষ্ট হয়। ঈদের দিনের সময়ের মূল্য অন্য সময়ের চেয়ে বেশি, এটি টিভি কর্তৃপক্ষকে ভাবা উচিত। নতুনত্ব লেগেছে মা এবং মেয়েকে নিয়ে একটি বিশেষ নাচের অনুষ্ঠান।

 খবির উদ্দিন
রিকশাচালক
এবার ঈদে বাড়ির জন্য একটি রঙিন টিভি কিনেছি। ছেলেমেয়ে নিয়ে ছবি (সিনেমা) দেখেছি। খবর দিলে ভালো লাগে না। মারামারির ছবি দেখতে ভালো লাগে। গান হলে দেখি। মমতাজের গান আমি ও আমার বউয়ের খুব পছন্দের। সারা দিন টিভি চালানো থাকে। অ্যাডব্যাটাইজ (বিজ্ঞাপন) সব সময় ভালো লাগে না। ছেলেমেয়েরা খালি নাচ-গান পছন্দ করে। নতুন টিভি কিনছি তাই ডিশ লাইন নেই।

 সাঈক সাফায়েত
শিক্ষার্থী, চতুর্থ শ্রেণী, মণিপুর উচ্চবিদ্যালয়
ঈদের সময় ভাইয়া, মা-বাবার জন্য ঠিকমতো টিভি দেখতে পারি নাই। কার্টুন ভালো লাগে। ঈদের সময় ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে জাদুর অনুষ্ঠান ভালো লাগে। বাচ্চাদের জোকসের অনুষ্ঠান দেখেছি। ছোটদের অভিনয়ও আমার অনেক ভালো লেগেছে। বাসায় একটা আলাদা টিভি থাকলে ভালো হতো। আমার ইচ্ছামতো সব অনুষ্ঠান দেখতে পারতাম। সাকিব আল হাসানের অনুষ্ঠান দেখেছি আমরা সবাই মিলে।

 শারমিন যূথী
চিকিৎসক
এবার ঈদের দিন বাইরে বাইরে কেটেছে। কিন্তু পরদিন থেকে ঈদের অনুষ্ঠান দেখার চেষ্টা করেছি। নাটক দেখেছি অনেকগুলো। বিটিভির নাটকও দেখেছি। তা ছাড়া তারকা আড্ডাগুলো মজার ছিল। আসিফের বাসায় আরও কয়েকজন তারকার একটা আড্ডার অনুষ্ঠান দেখলাম। সরাসরি গানের অনুষ্ঠানগুলো ভালো লেগেছে। মীর ও ব্যান্ডের শোটা খুব মজার ছিল। পুরোনো দিনের তারকাদের খোঁজখবর দেখালে ভালো লাগত।

 খালেদ আহমেদ
শিক্ষার্থী
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অনেকগুলো নাটক দেখেছি। টেলিফিল্ম দেখেছি কয়েকটা। বিজ্ঞাপনের ভিড়ে নাটকের গল্পই ভুলে গেছি। তবে সবচেয়ে বাজে লেগেছে একটি দেশি চ্যানেল (চ্যানেল নাইন) ভারতীয় চলচ্চিত্র অ্যাওয়ার্ড আইফা-২০১১ দেখানো হয়েছে। একজন অভিনেতার ২০-৩০টা নাটক ছিল বিভিন্ন চ্যানেলে। মনে হচ্ছিল অভিনেতার সংকটে আমাদের পরিচালকেরা। নতুনদের খুব একটা দেখি নাই। কিকঅফ টেলিফিল্মটা অনেক ভালো লেগেছে। ঈদের সময়ের মতো সারা বছর এমন ভালো ভালো নাটক প্রচার হলে বিদেশি সিরিয়াল দেখা বন্ধ হতে বাধ্য। তবে বিজ্ঞাপনের দিকটা একটা নীতিমালার মধ্যে আসা উচিত।

 ওবায়দুর রহমান
ব্যবসায়ী (জুতার দোকান)
ঈদের আগে চাঁদরাত পর্যন্ত ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সকালে নামাজ পড়েই ঘুমিয়েছি। সন্ধ্যায় উঠে টিভির সামনে বসি। সারা দিন আত্মীয়স্বজনের ভিড় ছিল। টিভিও চালানোই ছিল। কাজের ফাঁকে, মেহমানদারির ফাঁকে একটু একটু টিভি দেখা হয়েছে। হাসির নাটক দেখেছি। এ ছাড়া মাঝরাতের গানের অনুষ্ঠান, টক শো এসব দেখা হয়েছে বেশি।

 বরকতউল্লাহ
দিনমজুুর
দেশের বাড়ি (গ্রামে) ঈদ করেছি। ঈদের সময় অনেক ছবি চলে টিভিতে। অনেকগুলো দেখেছি। মারামারি, কাহিনির ছবি দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু একসঙ্গে অনেক চ্যানেল ছবি ছাড়ে। তাই সবগুলো দেখা যায় না। বিজ্ঞাপন দিলে চ্যানেল পাল্টাই। বাড়িতে সবাই ভারতের নাটক দেখে। তাই বাজারে চায়ের দোকানে বসে ছবি দেখেছি।

 ফসিয়ার মোল্লা
বাসচালক
ঈদে ঢাকায় ছিলাম। হলে গিয়ে শাকিব খানের নতুন ছবি দেখেছি। রাতে বাসায় টিভি দেখি। মমতাজ, কুদ্দুস বয়াতি, এস ডি রুবেল, মনির খানের গান ভালো লাগে। নায়ক-নায়িকারা ঈদে টিভিতে আসে। বিভিন্ন কথা বলে. শুনতে ভালো লাগে। এক দিন সরাসরি কথা বলেছি মোবাইল ফোনে। নাটক দেখি। কিন্তু সব চ্যানেলে বিজ্ঞাপন অনেক বেশি থাকে।

 রাজিব ফয়সাল
মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, সেকনো ড্রাগস লি.
ঈদের সময় নিয়মিত সংবাদ দেখা হয়। নাটক দেখেছি বেশ কয়েকটি। এবার একটি নতুন দিক ভালো লেগেছে। তা হচ্ছে, পাঁচ বা ছয় পর্বের ধারাবাহিক নাটক। অনেক মজার ছিলো এগুলো। দেখার চেষ্টা করেছি নিয়মিত। বিজ্ঞাপনের কারণে ইচ্ছা থাকলেও বেশি নাটক দেখতে পারিনি। এ ছাড়া খেলার চ্যানেল ছাড়াও বিদেশি চ্যানেলের ইংলিশ সিনেমা দেখেছি বেশ কয়েকটি। ঈদের সময় টক শোগুলো আমার একদম ভালো লাগে না।

 শারমিন আক্তার
ব্যাংকার, প্রিমিয়ার ব্যাংক লি.
অফিস বন্ধ থাকায় বেশ মজা করে টিভি দেখা হয়েছে ঈদে। ঈদের অনুষ্ঠানে ছয় পর্বের ধারাবাহিক আরমান ভাই হাউজ হাজবেন্ড নাটকের নাম না বললেই নয়। অনেক মজার ছিল। টেলিফিল্মগুলো দেখেছি। কিছু কিছু নাটক দেখে বোরিং লেগেছে। ঠিক বুঝতে পারিনি। মনে হয়েছে তড়িঘড়ি করে গোঁজামিল দেওয়ার মতো অবস্থা। তা ছাড়া একজন অভিনয়শিল্পী বেশি কাজ করলে ভালো লাগে না। আর বিজ্ঞাপনের কথা কী বলব! মনে হয় বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে অনুষ্ঠান হচ্ছে। রাত সাড়ে ১১টায় একটা নাটক শুরু হলো, রাত দুইটা পর্যন্ত দেখেও শেষ করতে পারলাম না। তখন খারাপ লাগে।
 গ্রন্থনা: ইমাম হাসান

No comments

Powered by Blogger.