ইলিয়াসকে ফিরে পেতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন স্ত্রী লুনা

আবারও চালকসহ নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে ফিরে পেতে সরকারের সহায়তা কামনা করলেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহ্সীনা রুশদী লুনা। ছোট্ট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়ালসহ পুরো পরিবার ইলিয়াস আলীর অপেক্ষায় রয়েছে। সামনে ঈদ। কবে আসবেন ইলিয়াস আলী?


দীর্ঘ ৪ মাস পরেও হদিস মেলেনি চালক আনসার আলীসহ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর। তাই ঈদের আনন্দ সারাজীবনের জন্য মাটি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ইলিয়াস আলী আর চালক আনসার আলীর পরিবার।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলী রাজধানীর বনানী থানাধীন মহাখালীর আমতলীর কাছে ২/১ নম্বর বনানী সড়কের সাউথ পয়েন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের কাছ থেকে রাত সোয়া ১২টার দিকে চালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হয়ে যান। পরে জানা যায়, ইলিয়াস আলী পরিকল্পিতভাবে অপহৃত হতে পারেন। তবে কারা বা কি কারণে অপহরণের ঘটনাটি ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে কিছুই জানা যায়নি। ইলিয়াস আলীর পরিত্যক্ত গাড়িটি রাস্তায় জ্যাম সৃষ্টি করে। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত সোয়া একটার দিকে বনানী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে। পরে গাড়িটি এম ইলিয়াস আলীর বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চালকসহ ইলিয়াস আলীকে র‌্যাব অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করেন। যদিও র‌্যাবের তরফ থেকে বরাবরই তা অস্বীকার করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট চালকসহ ইলিয়াস আলীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের দাবিতে হরতালসহ নানা কর্মসূচী পালন করে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ইলিয়াস আলীকে জীবিত ফেরত পাওয়া এবং আন্দোলন কর্মসূচীতে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে অনশন করেন। পানি পান করিয়ে খালেদা জিয়ার অনশন ভাঙ্গান নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর একমাত্র মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল।
ঘটনার পর থেকেই ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও পরিবারের একটি দাবি, ইলিয়াস আলীকে চালকসহ ফেরত চাই। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহ্সীনা রুশদী লুনা জানিয়েছেন, আজো তাদের পরিবারে আতঙ্ক কাজ করে। নিতান্তই প্রয়োজন ব্যতীত তারা কেউ সাধারণত বাইরে যাতায়াত করেন না। পুলিশ দাবি করেছে, ঘটনার পর থেকেই দুই পরিবারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদী লুনা জনকণ্ঠকে জানান, ঘটনার পর থেকে আজো তাদের আতঙ্ক কাটেনি। সামনে ঈদ। তাই নানা শ্রেণীপেশার মানুষ যাচ্ছে ইলিয়াস আলীর বাড়িতে। এরমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এবার ইলিয়াস আলী আর চালক আনসার আলীকে ছাড়াই ঈদ করতে হচ্ছে দুইটি পরিবারকে। এ যে কত কষ্টের, কত বেদনার, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। দুই পরিবারে তাই ঈদের আনন্দ যেন বিষাদে পরিণত হয়েছে। ঈদের আনন্দ সারা জীবনের জন্য মাটি হয়ে গেছে তাদের জন্য।
তাই ঈদের কোন আমেজ নেই। আমেজ পাচ্ছি না। দলীয় নেতাকর্মীরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। অনেকেই একমাত্র ছোট্ট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়ালকে সান্ত¡না দিচ্ছেন। কিন্তু কোন সান্ত¡নাই সাইয়ারাকে শান্ত করতে পারছে না। অনেকেই ভিড় করছেন তাদের বাড়িতে। নানা ধরনের উপহার সামগ্রীও নিয়ে আসছেন অনেকেই। কিন্তু কোন উপহারই মনের জ্বালা দূর করতে পারছে না। তাই তিনি আবারও সরকারের কাছে ইলিয়াস আলীকে চালকসহ উদ্ধার করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান জোনের উপ-কমিশনার লুৎফুল কবীর জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ির সামনে নিয়মিত পুলিশের টহল থাকছে। বাড়ির সামনে ছাড়াও মহাখালী আমতলী ক্রসিংয়ের বনানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের ২/১ নম্বর রোডের প্রবেশ পথে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ইলিয়াস আলীর সিলেট হাউজের আশপাশে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ইলিয়াস আলীর পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উপর নিরাপত্তাজনিত নজরদারি অব্যাহত আছে।

No comments

Powered by Blogger.