যুদ্ধাপরাধী বিচার- ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবাতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। প্রসিকিউশনই নয়, আসামি পক্ষের আইনজীবীরাও সমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। বিদেশে অনেক ট্রাইব্যুনালেই আসামি পক্ষ এভাবে সুযোগ পান না।
আইনপ্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি এ কথা বলেছেন। বর্তমানে দুই ট্রাইব্যুনালে ৮ জনের বিচার কাজ চলছে। যদিও গ্রেফতার হয়েছেন ৯ জন। আরেক জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
ঈদের ছুটির পর পরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আসামি পক্ষের এবং প্রসিকিউশন পক্ষের
সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। ২৬ আগস্ট জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মহিলা সাক্ষী নূরজাহান বেগমকে জেরা করবে আসামি পক্ষের আইনজীবী। অন্যদিকে এই প্রথম আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করা হবে ২৮ আগস্ট। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২৮ আগস্ট সাফাই সাক্ষী প্রদান করা হবে। ২৬ আগস্ট আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী প্রদান করবেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। এ তিন জন ছাড়াও দুটি ট্রাইব্যুনালে এখন ৮ জনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৪র্থ সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করবেন টিআইবি চেয়ারম্যান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল তাঁর জবানবন্দী প্রদান করবেন ১০ সেপ্টেম্বর।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে যাদের বিচার চলছে তাদের মধ্যে একমাত্র ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করা হবে ২৮ আগস্ট থেকে। এ জন্য আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বলা হয়েছে, ২৩ আগস্টের মধ্যে ২০ জন সাক্ষীর নাম জমা দিতে। ১৩ আগস্ট মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে মোট ৪৮ দিন এক শ’ ৯৩ পৃষ্ঠা সংবলিত জেরায় এক লাখ ৫২ হাজার ছয় শ’ ৮০টি শব্দের জেরা করেছেন। এ পর্যন্ত সাঈদীর বিরুদ্ধে তালিকাভুক্ত মোট ১৮ জন এবং জব্দ তালিকা থেকে আরও ৯ জন মিলিয়ে ২৭ এবং তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ২৮জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দী দিয়েছেন। পরে তাদের তার আইনজীবীরা জেরা করেছেন। এর বাইরেও প্রসিকিউটরদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথমে ১৫ জন পরে আরও একজন মোট ১৬ জনের জবানবন্দী আদালতে উপস্থিত হতে পারবে না বা তাদের আদালতে আদৌ আনা সম্ভব হবে না মর্মে আদালতের আদেশে (মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া) তাদের সাক্ষী জবানবন্দী হিসেবে গ্রহণ করেন আদালত।
এদিকে আইনপ্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় বিএনপি বাধা দিয়েছিল, এখন আবার যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মাঠ গরম করার জন্য ঈদের পর একটা মরণ কামড় দেবে। তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। কামরুল বলেন, পৃথিবীর আর কোন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে না, কিন্তু আমাদের দেশে করে। কারণ আমরা এখনও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বিতাড়িত করতে পারিনি। এখন পাকিস্তান নেই কিন্তু পাকিস্তানের সেই সব মদদাতারা আছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে।’
এ বছরের মধ্যেই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শেষ হবে আবারও এমন আশা প্রকাশ করে কামরুল বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। বিচার কাজ যেভাবে এগুচ্ছে তাতে এ বছরের মধ্যেই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শেষ হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস-২০১২’ উপলক্ষে শেখ রাসেল শিশু সংসদ আয়োজিত এক আলোচনাসভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কামরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট যেমন স্বাধীন, ট্রাইব্যুনালও স্বাধীন। এখানে প্রসিকিউশন বিভাগে যেভাবে কথা বলছে আসামি পক্ষেও একই ভাবে কথা বলছে। আমরা দেখেছি ট্রাইব্যুনাল আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বেশ কিছু পিটিশন শুনেছেন এবং তাদের পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। আমরা বলতে চাই প্রসাশনিক ও অর্থনীতিক ভাবে ট্রাইব্যুনালকে স্বাধীন করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন। তারা নিজেদের মতো কাজ করছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হবার পর একে একে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাশেম আলী, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুল আলীম। বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।
এদিকে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মামলা নিয়ে দেশে-বিদেশে একাধিক সিনিয়র আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছেন তার পক্ষের আইনজীবীরা। তার পক্ষে সাফাই সাক্ষীর সংখ্যা দুই হাজার ৯৩৯ জন। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে ৮৪ জন সাক্ষীর নাম আমরা দিলেও অভিযোগ (চার্জ) গঠনের পর অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক সাক্ষী দিয়েই মামলা পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইতোমধ্যেই সাক্ষ্য দিয়েছেন ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন এবং মুজিবনগর সরকারকে প্রথম গার্ড অব অনার প্রদানকারী পুলিশ সুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। পরবর্তী সাক্ষী তালিকায় রয়েছেন মানবাধিকার সংগঠক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এবং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান জেনারেল কেএম শফিউল্লাহসহ আরও অনেকে।
২০১০ সালের ১ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রসিকিউশন পক্ষের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু তার বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। প্রসিকিউশন পক্ষের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ সুবিন্যস্ত না থাকায় ২৬ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল এটি পুনর্দাখিলের নির্দেশ দেন। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ পুনর্দাখিল করলে ৯ জানুয়ারি অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পূর্ব নির্দেশ অনুসারে গোলাম আযম ১১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির হলে তার জামিনের আবেদন খারিজ করে হেফাজতে পাঠানো হয়।
অসুস্থ হওয়ায় গোলাম আযমকে পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ)। এরপর থেকে তিনি বিএসএমএমইউ’র কারা কক্ষে আছেন। সেখানে তিনি সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের তত্ত্ববাবধানে আছেন। শর্ত সাপেক্ষে তাকে বাড়িতে রান্না করা খাবার সরবরাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গত ১৩ মে মানবতাবিরোধী পাঁচ ধরনের অপরাধের ৬১টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে গোলাম আযমের বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এগুলো হলো, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও এর অনুরূপ আন্তর্জাতিক অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানি, সহযোগিতা এবং হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ। এসব অভিযোগে ৬১টি ঘটনার উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল, যার মধ্যে রয়েছে ষড়যন্ত্রের ছয়টি, পরিকল্পনার তিনটি, উস্কানির ২৮টি, সহযোগিতার ২৩টি এবং হত্যা ও নির্যাতনের একটি ঘটনা। অভিযোগ গঠনের আদেশে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গোলাম আযমের নেতৃত্বে নানা জায়গায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, পাইওনিয়ার ফোর্স, মুজাহিদ বাহিনী নামে পাকিস্তানপন্থী সংগঠন গঠন করা হয়। এসব সংগঠনকে অস্ত্র সরবরাহ করা এবং এ বিষয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাছে সুপারিশ করার দায়িত্বও ছিল তার।
গোলাম আযম ছাড়াও আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁরা হলেন, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রিরুদ্ধে ১৬টি, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭টি, নায়েবে আমির মাওলান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬টি, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭টি, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি এবং আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে। আব্দুল আলীম বর্তমানে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন।
ঈদের ছুটির পর পরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আসামি পক্ষের এবং প্রসিকিউশন পক্ষের
সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। ২৬ আগস্ট জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মহিলা সাক্ষী নূরজাহান বেগমকে জেরা করবে আসামি পক্ষের আইনজীবী। অন্যদিকে এই প্রথম আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করা হবে ২৮ আগস্ট। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২৮ আগস্ট সাফাই সাক্ষী প্রদান করা হবে। ২৬ আগস্ট আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী প্রদান করবেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। এ তিন জন ছাড়াও দুটি ট্রাইব্যুনালে এখন ৮ জনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৪র্থ সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করবেন টিআইবি চেয়ারম্যান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল তাঁর জবানবন্দী প্রদান করবেন ১০ সেপ্টেম্বর।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে যাদের বিচার চলছে তাদের মধ্যে একমাত্র ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করা হবে ২৮ আগস্ট থেকে। এ জন্য আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বলা হয়েছে, ২৩ আগস্টের মধ্যে ২০ জন সাক্ষীর নাম জমা দিতে। ১৩ আগস্ট মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবীরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে মোট ৪৮ দিন এক শ’ ৯৩ পৃষ্ঠা সংবলিত জেরায় এক লাখ ৫২ হাজার ছয় শ’ ৮০টি শব্দের জেরা করেছেন। এ পর্যন্ত সাঈদীর বিরুদ্ধে তালিকাভুক্ত মোট ১৮ জন এবং জব্দ তালিকা থেকে আরও ৯ জন মিলিয়ে ২৭ এবং তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ২৮জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দী দিয়েছেন। পরে তাদের তার আইনজীবীরা জেরা করেছেন। এর বাইরেও প্রসিকিউটরদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথমে ১৫ জন পরে আরও একজন মোট ১৬ জনের জবানবন্দী আদালতে উপস্থিত হতে পারবে না বা তাদের আদালতে আদৌ আনা সম্ভব হবে না মর্মে আদালতের আদেশে (মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া) তাদের সাক্ষী জবানবন্দী হিসেবে গ্রহণ করেন আদালত।
এদিকে আইনপ্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় বিএনপি বাধা দিয়েছিল, এখন আবার যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মাঠ গরম করার জন্য ঈদের পর একটা মরণ কামড় দেবে। তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। কামরুল বলেন, পৃথিবীর আর কোন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে না, কিন্তু আমাদের দেশে করে। কারণ আমরা এখনও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বিতাড়িত করতে পারিনি। এখন পাকিস্তান নেই কিন্তু পাকিস্তানের সেই সব মদদাতারা আছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে।’
এ বছরের মধ্যেই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শেষ হবে আবারও এমন আশা প্রকাশ করে কামরুল বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। বিচার কাজ যেভাবে এগুচ্ছে তাতে এ বছরের মধ্যেই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শেষ হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস-২০১২’ উপলক্ষে শেখ রাসেল শিশু সংসদ আয়োজিত এক আলোচনাসভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কামরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
অন্যদিকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট যেমন স্বাধীন, ট্রাইব্যুনালও স্বাধীন। এখানে প্রসিকিউশন বিভাগে যেভাবে কথা বলছে আসামি পক্ষেও একই ভাবে কথা বলছে। আমরা দেখেছি ট্রাইব্যুনাল আসামি পক্ষের আইনজীবীদের বেশ কিছু পিটিশন শুনেছেন এবং তাদের পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। আমরা বলতে চাই প্রসাশনিক ও অর্থনীতিক ভাবে ট্রাইব্যুনালকে স্বাধীন করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন। তারা নিজেদের মতো কাজ করছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হবার পর একে একে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মীর কাশেম আলী, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আব্দুল আলীম। বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।
এদিকে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের মামলা নিয়ে দেশে-বিদেশে একাধিক সিনিয়র আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছেন তার পক্ষের আইনজীবীরা। তার পক্ষে সাফাই সাক্ষীর সংখ্যা দুই হাজার ৯৩৯ জন। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে ৮৪ জন সাক্ষীর নাম আমরা দিলেও অভিযোগ (চার্জ) গঠনের পর অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক সাক্ষী দিয়েই মামলা পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইতোমধ্যেই সাক্ষ্য দিয়েছেন ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন এবং মুজিবনগর সরকারকে প্রথম গার্ড অব অনার প্রদানকারী পুলিশ সুপার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। পরবর্তী সাক্ষী তালিকায় রয়েছেন মানবাধিকার সংগঠক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এবং মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান জেনারেল কেএম শফিউল্লাহসহ আরও অনেকে।
২০১০ সালের ১ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রসিকিউশন পক্ষের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু তার বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। প্রসিকিউশন পক্ষের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ সুবিন্যস্ত না থাকায় ২৬ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল এটি পুনর্দাখিলের নির্দেশ দেন। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ পুনর্দাখিল করলে ৯ জানুয়ারি অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পূর্ব নির্দেশ অনুসারে গোলাম আযম ১১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির হলে তার জামিনের আবেদন খারিজ করে হেফাজতে পাঠানো হয়।
অসুস্থ হওয়ায় গোলাম আযমকে পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ)। এরপর থেকে তিনি বিএসএমএমইউ’র কারা কক্ষে আছেন। সেখানে তিনি সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের তত্ত্ববাবধানে আছেন। শর্ত সাপেক্ষে তাকে বাড়িতে রান্না করা খাবার সরবরাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গত ১৩ মে মানবতাবিরোধী পাঁচ ধরনের অপরাধের ৬১টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে গোলাম আযমের বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এগুলো হলো, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও এর অনুরূপ আন্তর্জাতিক অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উস্কানি, সহযোগিতা এবং হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ। এসব অভিযোগে ৬১টি ঘটনার উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল, যার মধ্যে রয়েছে ষড়যন্ত্রের ছয়টি, পরিকল্পনার তিনটি, উস্কানির ২৮টি, সহযোগিতার ২৩টি এবং হত্যা ও নির্যাতনের একটি ঘটনা। অভিযোগ গঠনের আদেশে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গোলাম আযমের নেতৃত্বে নানা জায়গায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, পাইওনিয়ার ফোর্স, মুজাহিদ বাহিনী নামে পাকিস্তানপন্থী সংগঠন গঠন করা হয়। এসব সংগঠনকে অস্ত্র সরবরাহ করা এবং এ বিষয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাছে সুপারিশ করার দায়িত্বও ছিল তার।
গোলাম আযম ছাড়াও আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁরা হলেন, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রিরুদ্ধে ১৬টি, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৭টি, নায়েবে আমির মাওলান দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৬টি, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭টি, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি এবং আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে। আব্দুল আলীম বর্তমানে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে রয়েছেন।
No comments