রফতানি খাত-বিশ্ববাজারের চ্যালেঞ্জ জয়
এ বছর অর্থবছরের নয় মাসেই রফতানি খাতে আয় গত অর্থবছরের মোট আয় ছাড়িয়ে গেছে_ এ তথ্য উৎসাহব্যঞ্জক। ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশের পণ্য বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা মিলেছিল এক হাজার ৬২০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।
এ বছরের প্রথম নয় মাসেই তার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ২৩ লাখ ডলার। আরেকভাবেও বিষয়টি তুলে ধরা যায়। এ বছর প্রথম নয় মাসে রফতানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, প্রকৃত আয় তার চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি হয়েছে। আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য নিট ও ওভেন পোশাক বিশ্ববাজারে তার হিস্যা বাড়াতে পেরেছে। এ খাত গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রফতানি আয়ের প্রধান উৎস। কর্মসংস্থানেও এ খাতের অবদান বিপুল। বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি ধনবান দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মুখেও তৈরি পোশাক শিল্পে বাজার ধরে রাখতে পারা এ খাতের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তা ও কর্মী, সবারই কৃতিত্ব। আমাদের এ অর্জনের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে চীন ও ভারতের মতো বস্ত্রশিল্পে সমৃদ্ধ দেশ। তবে সবচেয়ে খুশির বার্তা এসেছে পাট ও পাটজাতদ্রব্যের খাত থেকে। বলা যায়, আমাদের সোনালি আঁশ গৌরবের আসন ফিরে পেয়েছে। এ খাত থেকে অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আয় হয়েছে ৮৩ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি আমাদের বিজ্ঞানীরা পাটের জিন রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন। এর সুফল কাজে লাগিয়ে কৃষকরা আরও উন্নত মানের কাঁচা পাট উৎপাদন করতে পারবেন। এ জন্য গবেষণা কাজ জোরদার করা চাই। গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাতদ্রব্যের চাহিদা বাড়তির দিকে। কৃষকরা বাড়তি জোগান দিতে পারলে দেশে ও বিদেশে বাজারের সমস্যা হবে না। আর চাহিদা থাকলে সোনালি আঁশ গলার ফাঁস হওয়ার শঙ্কা থাকবে না, বরং ঘরে ঘরে নিয়ে আসবে খুশির বার্তা। তৈরি পোশাক ও পাটের মতো হিমায়িত খাদ্য ও চামড়াজাত পণ্য থেকেও মিলেছে বাড়তি আয়। রফতানি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধির এ ধারা বজায় রাখতে হলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মতো অবকাঠামো সুবিধার জোগান বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে চাই শিল্প ও ব্যবসায় সহায়ক পরিবেশ। বৃহস্পতিবার জাতীয় রফতানি ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেছেন। তিনি হিসাব দিয়েছেন, গত দুই বছরে জাতীয় গ্রিডে ১৪শ' মেগাওয়াটের বেশি নতুন বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে। আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর ওপরও জোর পড়ছে। তিনি আশার কথা শুনিয়েছেন এবং তাতে রফতানির কর্মকাণ্ডে যুক্তরা উৎসাহিত হবেন। তবে মনে রাখা চাই, এ চাহিদা কিন্তু ক্রমাগত বাড়ছে। রফতানি খাত থেকে বাড়তি আয়ের অর্থ হচ্ছে শিল্পে বাড়তি উৎপাদন এবং এ কারণে অনেক বেশি লোকের কর্মসংস্থান। এ থেকে স্পষ্ট যে, সরকার এ খাতে যে সুবিধা দেয় তা নানাভাবে দেশের জন্য সুবিধা নিয়ে আসতে পারে। সরকার এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আরও সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে যাবে, এটাই প্রত্যাশিত।
No comments