সহনীয় দ্রব্যমূল্য টকশোওয়ালাদের মুখে তালা by গোলাম কুদ্দুছ
রমজান শেষ হচ্ছে। রাত পোহালেই ঈদ। নির্বিঘেœ কিভাবে রমজান মাস প্রায় শেষ হল টেরই পাওয়া গেল না। মিডিয়া-টক্শো কোথাও কোন সাড়াশব্দ নেই। অথচ এমনটি সাধারণত হয় না। রমজান মাস মানেই সর্বত্র হইচই, টক্শো-মিডিয়া সবই মরিচের ঝালে পাগলপারা, বেগুন-শসা-হায় হায় মানুষের পকেট খালি, সাধারণ মানুষের জীবনে
নাভিশ্বাস, সরকার করে কি এ সবই রমজানের চেনাজানা ঘটনা। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই আলাদা। আর সে কারণেই আজকের এই লেখা।
আমাদের দেশে রোজা-রমজান, ঈদ-চাঁদ, পূজা-পার্বণ এলেই বাজার আর ঠিক থাকে না। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য চলে যায় সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারের সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। বর্তমান সরকার বিগত বছরগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিনিময়ে টাকার দরপতন, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া আচরণ- সরকারের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে গত প্রায় এক বছর ধরে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে এবং রমজান মাসেও সে ধারা অব্যাহত আছে। সয়াবিন তেল এবং লবণ ছাড়া প্রায় সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যই স্থিতিশীল এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার বাজারে মিনিকেট চালের মূল্য প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৮ টাকা, মোটা চাল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পেঁয়াজ বিদেশী ২০-২৫ টাকা এবং দেশী ৩০ টাকা। রসুন দেশী ৪০-৫০ টাকা এবং বিদেশী ৬০-৭০ টাকা। আদা ৪০-৫০ টাকা। মসুর ডাল বিদেশী ৭৫-৮০ টাকা এবং দেশী ৯০-১০০ টাকা। মুগ ডাল ১০০-১১০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩০-১৩৫ টাকা। চিনি ৫৫ টাকা ও লবণ ৩০ টাকা। সব ধরনের তরিতরকারী প্রতি কেজি ২০-৩০ টাকা। বেগুন ও করলা কোন কোন বাজারে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। গরুর মাংস ২৭০-২৮০ টাকা। ফার্মের মুরগি ১৪০-১৫০ টাকা থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের দাম ওঠা-নামা করছে। রমজান মাসে সরকার মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করায় সকল ধরনের মাছ-বিশেষ করে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। এতদসত্ত্বেও মাছের দাম বেশ চড়াই বলতে হবেÑ যদিও সামুদ্রিক টুনা ও সুরমা মাছের দাম তুলনামূলকভাবে বেশ কম।
এই যে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে তার কারণটা কি এবং এতে সরকারের কোন ভূমিকা আছে কিনা, তা একটু যাচাই করে দেখা দরকার। ব্যর্থতার দায়িত্ব যদি সরকারের হয়, তবে সফলতার কৃতিত্বও তো তাদেরই প্রাপ্য। চাল এবং আটার দাম কম হবার পেছনে সরকারের ভূমিকাই প্রধান। প্রসঙ্গত কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্যমূল্যে সার, নীটনাশক ওষুধ, উন্নতমানের বীজ, ডিজেল-ফার্নেসওয়েল সরবরাহ এবং সেচের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে এবং উৎপাদন খরচও তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। যার কারণে পণ্যমূল্য কম হলেও কৃষককে তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। আরেকটি বড় কাজ সরকার করছে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করে। প্রতি কেজি চাল ২৪ টাকা এবং আটা ২০ টাকা দরে কিনতে পারায় নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে। শুধু ঢাকা শহরেই বিভিন্ন পয়েন্টে প্রথম দিকে ২০০টি ট্রাক এবং পরবর্তীতে ৪০০টি ট্রাকের প্রতিটিতে ৪ টন করে প্রতিদিন মোট ১৬০০ টন চাল খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। ১৬ লাখ কেজি চাল প্রতিদিন অন্তত ৩২ লাখ মানুষ পাচ্ছে ২৪ টাকা দরেÑএ এক স্বস্তিদায়ক ঘটনা নিঃসন্দেহে। চাল এবং আটার মূল্য স্থিতিশীল থাকার পেছনে এটিই মূল কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন। অন্য কয়েকটি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য স্বাভাবিক থাকার পেছনে টিসিবির ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বারবার তাগিদ এবং পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির পর সরকার টিসিবিকে বিশেষভাবে সক্রিয় করে তোলে। সঠিক সময়ে এলসি খোলা এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পণ্য আমদানি করায় অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আর সুবিধা করতে পারেনি। এফবিসিসিআই এবং সরকারের বাজার মনিটরিং এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলতেই হবে।
চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সহনীয় মূল্য রমজান মাসেও অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষ স্বস্তিলাভ করেছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং রমজান মাসে ঢাকা শহরে প্রায় নেই বললেই চলে। বহু প্রত্যাশিত বিদ্যুৎ সেক্টরের এ উন্নতিতে মানুষ স্বস্তিবোধ করছে, তবে ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলাগুলোতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা এখনও সহনীয় পর্যায়ে নেই। মানুষের কষ্ট এবং আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সরকারকে যে কোন মূল্যে এ সঙ্কটের সমাধান করতেই হবে। সাধারণ মানুষ নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ এবং বড় বড় ভবন তৈরির চাইতেও বিদ্যুৎ সঙ্কটের সুরাহাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। একটি গণতান্ত্রিক দল ও সরকারের প্রধান করণীয় হচ্ছে জনমত ও জন-আকাক্সক্ষার সঙ্গে একাত্ম থাকাÑএর মধ্য দিয়ে জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হয়।
অফিস-আদালত, বাসা-বাড়িতে দ্রব্যমূল্য এবং বিদ্যুত নিয়ে সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা গেলেও আমাদের মিডিয়া এক্ষেত্রে প্রায় নির্বিকার ও উদাসীন। শুধু সরকারের ব্যর্থতা এবং ছিদ্র অন্বেষণ দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা বলে মেনে নেয়া যায় না। সরকারের অসফলতার দিক যেমনভাবে মিডিয়া তুলে ধরছে একইভাবে সফলতাকে সামনে আনাও কি উচিত নয়? একপক্ষীয় প্রচার কখনও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ নয়। আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাইÑঅথচ জনগণকে সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকব এবং ক্রমাগত নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত করবÑ এটা কখনও সৎ এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা হতে পারে না। আমরা দেশের অগ্রগতি ও উন্নতির কথা বলি অথচ ভাল কাজের প্রশংসা না করে শুধু অন্ধকারকে খুঁজে বেড়াই।
ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যাণে টক্শো এখন এক আলোচিত চরিত্র। নানা মতের উপস্থাপন এবং পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক দিয়ে মানুষকে সচেতন করবার ক্ষেত্রে টক্শো রাখতে পারে এক বিরাট ইতিবাচক ভূমিকা। আমাদের মিডিয়ায় টক্শো চালু হবার পর দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু অধিকাংশ উপস্থাপকের পক্ষপাতিত্ব এবং বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে বিশেষ বিশেষ কারণে পুনঃপুনঃ উপস্থাপনের ফলে টক্শো জনপ্রিয়তা ও নিরপেক্ষতা হারাতে বসেছে। সমাজে বিভিন্ন মত ও পথের অনেক জ্ঞানী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি থাকলেও উদ্দেশ্যপূর্ণ কারণে তাদেরকে না এনে গুটিকয়েক ব্যক্তিকে সমাজের বিবেক এবং সব জান্তা হিসেবে বার বার হাজির করায় টক্শোর জনপ্রিয়তা কমছে। বিগত দিনে দ্রব্যমূল্য নিয়ে টক্শোতে অনেক তীর্যক আলোচনা হতে দেখেছি। কাঁচামরিচের ঝাল কাঁচাবাজার ছাড়িয়ে টক্শোর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেও পৌঁছে গিয়েছিল। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এক বড় ঘটনা। কিন্তু এ ঘটনাটি টক্শোওয়ালাদের স্পর্শ করেনি। সরকারের সফলতা এবং ভালো কাজের আলোচনা কি তাদের জন্য নিষিদ্ধ? সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের যড়যন্ত্র ভেস্তে যাওয়ায় তারা কি খুশি হননি? তারা কি প্রত্যাশা করেছিলেন দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাক এবং সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হোক। আর তাই যদি না হবে, তবে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের ঘটনায় টক্শোওয়ালাদের মুখে তালা কেন? তাদের কি উচিত নয় সিন্ডিকেটওয়ালাদের পরাস্ত করার কারণে সরকারের ইতিবাচক কার্যক্রমকে আরও উৎসাহিত করা। সাকিব আল হাসানদের শূন্য রানে আউট হবার আলোচনার চাইতেও সেঞ্চুরির প্রশংসা অনেক জরুরীÑএ সত্য আমাদের মিডিয়া এবং টক্শোওয়ালারা আর বুঝবেন কবে?
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কলামিস্ট
আমাদের দেশে রোজা-রমজান, ঈদ-চাঁদ, পূজা-পার্বণ এলেই বাজার আর ঠিক থাকে না। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য চলে যায় সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকারের সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। বর্তমান সরকার বিগত বছরগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিনিময়ে টাকার দরপতন, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া আচরণ- সরকারের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে গত প্রায় এক বছর ধরে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে এবং রমজান মাসেও সে ধারা অব্যাহত আছে। সয়াবিন তেল এবং লবণ ছাড়া প্রায় সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যই স্থিতিশীল এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
বর্তমানে ঢাকার বাজারে মিনিকেট চালের মূল্য প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৮ টাকা, মোটা চাল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পেঁয়াজ বিদেশী ২০-২৫ টাকা এবং দেশী ৩০ টাকা। রসুন দেশী ৪০-৫০ টাকা এবং বিদেশী ৬০-৭০ টাকা। আদা ৪০-৫০ টাকা। মসুর ডাল বিদেশী ৭৫-৮০ টাকা এবং দেশী ৯০-১০০ টাকা। মুগ ডাল ১০০-১১০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩০-১৩৫ টাকা। চিনি ৫৫ টাকা ও লবণ ৩০ টাকা। সব ধরনের তরিতরকারী প্রতি কেজি ২০-৩০ টাকা। বেগুন ও করলা কোন কোন বাজারে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। গরুর মাংস ২৭০-২৮০ টাকা। ফার্মের মুরগি ১৪০-১৫০ টাকা থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছের দাম ওঠা-নামা করছে। রমজান মাসে সরকার মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করায় সকল ধরনের মাছ-বিশেষ করে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। এতদসত্ত্বেও মাছের দাম বেশ চড়াই বলতে হবেÑ যদিও সামুদ্রিক টুনা ও সুরমা মাছের দাম তুলনামূলকভাবে বেশ কম।
এই যে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আছে তার কারণটা কি এবং এতে সরকারের কোন ভূমিকা আছে কিনা, তা একটু যাচাই করে দেখা দরকার। ব্যর্থতার দায়িত্ব যদি সরকারের হয়, তবে সফলতার কৃতিত্বও তো তাদেরই প্রাপ্য। চাল এবং আটার দাম কম হবার পেছনে সরকারের ভূমিকাই প্রধান। প্রসঙ্গত কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্যমূল্যে সার, নীটনাশক ওষুধ, উন্নতমানের বীজ, ডিজেল-ফার্নেসওয়েল সরবরাহ এবং সেচের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে এবং উৎপাদন খরচও তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। যার কারণে পণ্যমূল্য কম হলেও কৃষককে তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। আরেকটি বড় কাজ সরকার করছে খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করে। প্রতি কেজি চাল ২৪ টাকা এবং আটা ২০ টাকা দরে কিনতে পারায় নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হয়েছে। শুধু ঢাকা শহরেই বিভিন্ন পয়েন্টে প্রথম দিকে ২০০টি ট্রাক এবং পরবর্তীতে ৪০০টি ট্রাকের প্রতিটিতে ৪ টন করে প্রতিদিন মোট ১৬০০ টন চাল খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। ১৬ লাখ কেজি চাল প্রতিদিন অন্তত ৩২ লাখ মানুষ পাচ্ছে ২৪ টাকা দরেÑএ এক স্বস্তিদায়ক ঘটনা নিঃসন্দেহে। চাল এবং আটার মূল্য স্থিতিশীল থাকার পেছনে এটিই মূল কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন। অন্য কয়েকটি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য স্বাভাবিক থাকার পেছনে টিসিবির ভূমিকা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বারবার তাগিদ এবং পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির পর সরকার টিসিবিকে বিশেষভাবে সক্রিয় করে তোলে। সঠিক সময়ে এলসি খোলা এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পণ্য আমদানি করায় অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট আর সুবিধা করতে পারেনি। এফবিসিসিআই এবং সরকারের বাজার মনিটরিং এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলতেই হবে।
চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সহনীয় মূল্য রমজান মাসেও অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষ স্বস্তিলাভ করেছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং রমজান মাসে ঢাকা শহরে প্রায় নেই বললেই চলে। বহু প্রত্যাশিত বিদ্যুৎ সেক্টরের এ উন্নতিতে মানুষ স্বস্তিবোধ করছে, তবে ঢাকার বাইরের জেলা ও উপজেলাগুলোতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা এখনও সহনীয় পর্যায়ে নেই। মানুষের কষ্ট এবং আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সরকারকে যে কোন মূল্যে এ সঙ্কটের সমাধান করতেই হবে। সাধারণ মানুষ নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ এবং বড় বড় ভবন তৈরির চাইতেও বিদ্যুৎ সঙ্কটের সুরাহাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। একটি গণতান্ত্রিক দল ও সরকারের প্রধান করণীয় হচ্ছে জনমত ও জন-আকাক্সক্ষার সঙ্গে একাত্ম থাকাÑএর মধ্য দিয়ে জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হয়।
অফিস-আদালত, বাসা-বাড়িতে দ্রব্যমূল্য এবং বিদ্যুত নিয়ে সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা গেলেও আমাদের মিডিয়া এক্ষেত্রে প্রায় নির্বিকার ও উদাসীন। শুধু সরকারের ব্যর্থতা এবং ছিদ্র অন্বেষণ দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা বলে মেনে নেয়া যায় না। সরকারের অসফলতার দিক যেমনভাবে মিডিয়া তুলে ধরছে একইভাবে সফলতাকে সামনে আনাও কি উচিত নয়? একপক্ষীয় প্রচার কখনও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ নয়। আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাইÑঅথচ জনগণকে সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকব এবং ক্রমাগত নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত করবÑ এটা কখনও সৎ এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা হতে পারে না। আমরা দেশের অগ্রগতি ও উন্নতির কথা বলি অথচ ভাল কাজের প্রশংসা না করে শুধু অন্ধকারকে খুঁজে বেড়াই।
ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যাণে টক্শো এখন এক আলোচিত চরিত্র। নানা মতের উপস্থাপন এবং পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক দিয়ে মানুষকে সচেতন করবার ক্ষেত্রে টক্শো রাখতে পারে এক বিরাট ইতিবাচক ভূমিকা। আমাদের মিডিয়ায় টক্শো চালু হবার পর দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু অধিকাংশ উপস্থাপকের পক্ষপাতিত্ব এবং বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে বিশেষ বিশেষ কারণে পুনঃপুনঃ উপস্থাপনের ফলে টক্শো জনপ্রিয়তা ও নিরপেক্ষতা হারাতে বসেছে। সমাজে বিভিন্ন মত ও পথের অনেক জ্ঞানী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি থাকলেও উদ্দেশ্যপূর্ণ কারণে তাদেরকে না এনে গুটিকয়েক ব্যক্তিকে সমাজের বিবেক এবং সব জান্তা হিসেবে বার বার হাজির করায় টক্শোর জনপ্রিয়তা কমছে। বিগত দিনে দ্রব্যমূল্য নিয়ে টক্শোতে অনেক তীর্যক আলোচনা হতে দেখেছি। কাঁচামরিচের ঝাল কাঁচাবাজার ছাড়িয়ে টক্শোর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষেও পৌঁছে গিয়েছিল। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এক বড় ঘটনা। কিন্তু এ ঘটনাটি টক্শোওয়ালাদের স্পর্শ করেনি। সরকারের সফলতা এবং ভালো কাজের আলোচনা কি তাদের জন্য নিষিদ্ধ? সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের যড়যন্ত্র ভেস্তে যাওয়ায় তারা কি খুশি হননি? তারা কি প্রত্যাশা করেছিলেন দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাক এবং সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হোক। আর তাই যদি না হবে, তবে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের ঘটনায় টক্শোওয়ালাদের মুখে তালা কেন? তাদের কি উচিত নয় সিন্ডিকেটওয়ালাদের পরাস্ত করার কারণে সরকারের ইতিবাচক কার্যক্রমকে আরও উৎসাহিত করা। সাকিব আল হাসানদের শূন্য রানে আউট হবার আলোচনার চাইতেও সেঞ্চুরির প্রশংসা অনেক জরুরীÑএ সত্য আমাদের মিডিয়া এবং টক্শোওয়ালারা আর বুঝবেন কবে?
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও কলামিস্ট
No comments