মার্কিন কাপট্য by এম আবদুল হাফিজ
ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন, বিশ্ব কী ভাবছে এ নিয়ে। তার ২৮ মার্চের ভাষণে ওবামা লিবিয়াতেও তার বিমান হামলাকে যথাযথ বলেছেন। এই যুক্তিতে লিবিয়ার গাদ্দাফিও তো বিমান আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে অবদমনে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, অনেক আগ থেকেই গাদ্দাফি একটি 'ব্লাক হ্যাট'।
যদি আমরা এই প্রবচনে বিশ্বাস করি যে, 'যেখানেই ধোঁয়া সেখানেই আগুনের সংকেত বহন করে।' গাদ্দাফি সম্ভত কোনো ভালো লোক নয়। তার উদভ্রান্ত এবং সময়ে নিষ্ঠুর আচরণ অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। কিন্তু এতে কোনো সংশয় নেই যে, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং তার পূর্বসূরি বুশ-চেনি জুটি ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইয়েমেন এবং সোমালিয়ায় গাদ্দাফির চেয়ে অনেকগুণ মানুষ ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করেছে। তাছাড়া গাদ্দাফি তো একটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের পক্ষ থেকে একটি অবৈধ এবং বেআইনি বিদ্রোহকেই দমন করতে সচেষ্ট। কিন্তু বুশ বা চেনি যা করেছেন তা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী আগ্রাসনে যার ভিত্তি ছিল মিথ্যাচার ও প্রতারণায়। এটি সত্ত্বেও শুধু গাদ্দাফিকেই পিশাচ প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা অন্যায় নয় কি? পক্ষান্তরে ওবামা, বুশ বা চেনির মতো ঘাতকরা অশ্বারোহী এবং যাদের আবৃত করে রাখা হয়েছে নৈতিকতার চাদরে। অদ্ভুত নয় কি?
ওবামা নিজেকে লিবীয়দের সহিংসতার অন্তরাল করে রেখেছেন বলে দাবি করেন। একই সময়ে তিনি আফগান, পাকিস্তানি এবং অনেকেরই ঘাতক। ওবামা প্রশাসন নায়ক নাকি ব্র্যাডলে ম্যানিং নামে একজন মার্কিন সৈন্যকে নির্যাতন করছে, কেননা সে আচরণে নৈতিকতা ও বিবেকের প্রকাশ ঘটিয়েছে। আসলে আমেরিকার এতটাই মর্যাদাগত অধঃপতন ঘটেছে, যেখানে নৈতিকতা বা বিবেককে মার্কিন বিরোধিতা গণ্য করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের সাবেক চেয়ারম্যান জোসেফ স্টিগলিৎস উল্লেখ করেছেন, শুধু ইরাক যুদ্ধে অপচিত অর্থ বন্ধকি সম্পত্তির দায়গ্রস্তদের দায় নিবারণ করতে পারত, সব নাগরিককে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারত এবং কর্মসংস্থানে অক্ষমদের শিক্ষা-ঋণ পরিশোধ করতে পারত। কিন্তু বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারের পছন্দ মুসলিম বিশ্বকে খুন-হত্যায় রক্ত রঞ্জিত করা, যাতে তাদের সামরিক ও নিরাপত্তা স্টাবলিশমেন্ট লাভবান হয়। এ সরকার দেশের বিমান ভ্রমণকারীদের সাংবিধানিক অধিকার তুচ্ছ করে তাদের প্রদত্ত করের অর্থও সামরিক খাতে ব্যয় করে।
পাশ্চাত্যের নৈতিক কর্তৃত্ব এর ফলে দ্রুত ভেঙে পড়ছে। যখন রাশিয়া, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকা ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার দিকে দৃষ্টিপাত করে তারা একথা অনুধাবন না করে পারে না যে, আমেরিকার সাক্ষীগোপাল দেশগুলো সাম্রাজ্যের স্থিতি বহাল রাখতে সব আক্রমণাত্মক যুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করে। এসব সাক্ষীগোপাল দেশ অহরহ সস্তা দরে তাদের জনগণের স্বার্থ এবং কল্যাণ বিকিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য বিনিময়ে এ শাসকরাও ভালো বকশিশই পেয়ে যাচ্ছেন। লিবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওবামা স্বেচ্ছাচার প্রতিষ্ঠায় রোম সম্রাট সিজারের অনুসৃত নীতির দিকে আমেরিকাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছেন। বুশ তবু তার স্বেচ্ছাচারিতায় কংগ্রেসকে তার সঙ্গে রাখত। ওবামা কংগ্রেসের কর্তৃত্বকেও উপেক্ষা করে লিবিয়ায় বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। ওবামা দাবি করেন, এ ব্যাপারে তার নৈতিক কর্তৃত্ব মার্কিন সংবিধানের ওপর তুরুপের তাস।
মার্কিন কাপট্য, কপটতা বা ভণ্ডামি_ সব ক্ষেত্রেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। এও এক প্রকার রহস্য যে, মার্কিন জনগণ কী করে তা সয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যার বিমান ও ড্রোন বহর বছরের প্রতিটি দিন বেসামরিক জনগণকে হত্যা করে। তিনি আবার এও বলেন যে, লিবিয়া একাই বিশ্বকে প্রচণ্ডতম সহিংসতার পথ দেখিয়েছে। স্বভাবতই ওবামা মনে করেন যে, ইরাকে ১০ লাখ লোকের হত্যা, ৪০ লাখ লোকের আবাসনচ্যুতি এবং এক অজ্ঞাত সংখ্যার নিহত আফগান তো শক্তিধর আমেরিকার জন্য মামুলি ব্যাপার।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
ওবামা নিজেকে লিবীয়দের সহিংসতার অন্তরাল করে রেখেছেন বলে দাবি করেন। একই সময়ে তিনি আফগান, পাকিস্তানি এবং অনেকেরই ঘাতক। ওবামা প্রশাসন নায়ক নাকি ব্র্যাডলে ম্যানিং নামে একজন মার্কিন সৈন্যকে নির্যাতন করছে, কেননা সে আচরণে নৈতিকতা ও বিবেকের প্রকাশ ঘটিয়েছে। আসলে আমেরিকার এতটাই মর্যাদাগত অধঃপতন ঘটেছে, যেখানে নৈতিকতা বা বিবেককে মার্কিন বিরোধিতা গণ্য করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্সের সাবেক চেয়ারম্যান জোসেফ স্টিগলিৎস উল্লেখ করেছেন, শুধু ইরাক যুদ্ধে অপচিত অর্থ বন্ধকি সম্পত্তির দায়গ্রস্তদের দায় নিবারণ করতে পারত, সব নাগরিককে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারত এবং কর্মসংস্থানে অক্ষমদের শিক্ষা-ঋণ পরিশোধ করতে পারত। কিন্তু বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারের পছন্দ মুসলিম বিশ্বকে খুন-হত্যায় রক্ত রঞ্জিত করা, যাতে তাদের সামরিক ও নিরাপত্তা স্টাবলিশমেন্ট লাভবান হয়। এ সরকার দেশের বিমান ভ্রমণকারীদের সাংবিধানিক অধিকার তুচ্ছ করে তাদের প্রদত্ত করের অর্থও সামরিক খাতে ব্যয় করে।
পাশ্চাত্যের নৈতিক কর্তৃত্ব এর ফলে দ্রুত ভেঙে পড়ছে। যখন রাশিয়া, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকা ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার দিকে দৃষ্টিপাত করে তারা একথা অনুধাবন না করে পারে না যে, আমেরিকার সাক্ষীগোপাল দেশগুলো সাম্রাজ্যের স্থিতি বহাল রাখতে সব আক্রমণাত্মক যুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করে। এসব সাক্ষীগোপাল দেশ অহরহ সস্তা দরে তাদের জনগণের স্বার্থ এবং কল্যাণ বিকিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য বিনিময়ে এ শাসকরাও ভালো বকশিশই পেয়ে যাচ্ছেন। লিবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওবামা স্বেচ্ছাচার প্রতিষ্ঠায় রোম সম্রাট সিজারের অনুসৃত নীতির দিকে আমেরিকাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছেন। বুশ তবু তার স্বেচ্ছাচারিতায় কংগ্রেসকে তার সঙ্গে রাখত। ওবামা কংগ্রেসের কর্তৃত্বকেও উপেক্ষা করে লিবিয়ায় বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। ওবামা দাবি করেন, এ ব্যাপারে তার নৈতিক কর্তৃত্ব মার্কিন সংবিধানের ওপর তুরুপের তাস।
মার্কিন কাপট্য, কপটতা বা ভণ্ডামি_ সব ক্ষেত্রেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। এও এক প্রকার রহস্য যে, মার্কিন জনগণ কী করে তা সয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যার বিমান ও ড্রোন বহর বছরের প্রতিটি দিন বেসামরিক জনগণকে হত্যা করে। তিনি আবার এও বলেন যে, লিবিয়া একাই বিশ্বকে প্রচণ্ডতম সহিংসতার পথ দেখিয়েছে। স্বভাবতই ওবামা মনে করেন যে, ইরাকে ১০ লাখ লোকের হত্যা, ৪০ লাখ লোকের আবাসনচ্যুতি এবং এক অজ্ঞাত সংখ্যার নিহত আফগান তো শক্তিধর আমেরিকার জন্য মামুলি ব্যাপার।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
No comments