শিল্পে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চাই
সভ্যতার সংকট যেন চিরকালীন। শিল্পের প্রসার মানুষের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তি যেমন এনে দিয়েছে, তেমনি সৃষ্টি করেছে নতুন নতুন শৃঙ্খল। নতুন নতুন শিল্প গড়ে ওঠায় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি নতুন নতুন যেসব সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, সেসব সংকট থেকে মুক্তির কোনো পথ যেন খোলা নেই।
সংকট জটিল আকার ধারণ করার আগ পর্যন্ত বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের গোচরেও আসে না। আর এরই ফাঁকে নীরবে জীবনহানির মতো ঘটনাও ঘটে।
বাংলাদেশে 'সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা' নিশ্চিত করা যায়নি। আধুনিককালের শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে প্রয়োজনের তাগিদেই। বাংলাদেশেই এখন আন্তর্জাতিক মানের অনেক পণ্য তৈরি হচ্ছে। গড়ে উঠছে আধুনিক মানের শিল্প-কারখানা। নতুন নতুন কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে। কিন্তু এসব শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে কতটুকু দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে, সেটাই এখন একটি মুখ্য প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনিতেই অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা। বিষাক্ত রাসায়নিকের কারখানা ও গোডাউন আবাসিক এলাকাকেও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য শিল্পের কারণে কতটা ঝুঁকির মুখে পড়ছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা একান্ত আবশ্যক। কালের কণ্ঠে গতকাল বুধবার প্রকাশিত 'দেশে সিলিকোসিসের সংক্রমণ' শীর্ষক খবরে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বুড়িমারীতে এরই মধ্যে এই রোগে ১৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা নিতান্ত কম নয় এবং এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মৃত ও আক্রান্তরা সবাই পাথর ও সিরামিক কারখানার শ্রমিক। ওই এলাকায় গড়ে ওঠা পাথর ও সিরামিক কারখানা সেখানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন সৃষ্টি করেছে, তেমনি সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের ঠেলে দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে বিশেষভাবে চুনাপাথরের কারখানা, সিরামিক ও টাইলস কারখানা এবং শিল-পাটা তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মধ্যে সিলিকোসিসের ঝুঁকি রয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, সিলিকন ক্রিস্টাল ফুসফুসের কোষে ঢুকে জমা হয়। একপর্যায়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে মানুষকে তা নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা ও সিলিকোসিস দুটিই হতে পারে। সিলিকোসিস অসংক্রামক রোগ হলেও রোগটি বিপজ্জনক।
পাথর কাটা শিল্পের শ্রমিকরা সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের রোগটি তবু শনাক্ত করা গেছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে। জনগণ ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সচেতন করতে পারলে হয়তো একসময় রোগটি প্রতিরোধ করা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক শিল্পেই শ্রমিকরা কাজ করছেন ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই। এসব শ্রমিকের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি দেখারও যেন কেউ নেই। অথচ ২০০৬ সালের কারখানা আইন, যা আগে শ্রম আইন ছিল- সেখানে পেশাগত কারণে আক্রান্ত হওয়া অনেক রোগের তালিকা রয়েছে। এ তালিকায় সিলিকোসিসের নামও রয়েছে। আইন অনুসারে কারখানায় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কারখানার মালিকের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি কোনো শ্রমিকের কোনো কারখানায় কাজের কারণে বিশেষ কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধানও রয়েছে। বাংলাদেশে সে রকম কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেখানে শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে, সেখানে সামান্য জরিমানা কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হতে পারে না।
সিলিকোসিস শনাক্ত হওয়ায় এখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। এ রোগ যেসব কারখানার কারণে ছড়িয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, পাশাপাশি রোগটির বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। নতুন শিল্প আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য অবশ্যই জরুরি। তবে সব ক্ষেত্রেই শ্রমিকের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে 'সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা' নিশ্চিত করা যায়নি। আধুনিককালের শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে প্রয়োজনের তাগিদেই। বাংলাদেশেই এখন আন্তর্জাতিক মানের অনেক পণ্য তৈরি হচ্ছে। গড়ে উঠছে আধুনিক মানের শিল্প-কারখানা। নতুন নতুন কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে। কিন্তু এসব শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে কতটুকু দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে, সেটাই এখন একটি মুখ্য প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনিতেই অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা। বিষাক্ত রাসায়নিকের কারখানা ও গোডাউন আবাসিক এলাকাকেও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য শিল্পের কারণে কতটা ঝুঁকির মুখে পড়ছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখা একান্ত আবশ্যক। কালের কণ্ঠে গতকাল বুধবার প্রকাশিত 'দেশে সিলিকোসিসের সংক্রমণ' শীর্ষক খবরে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বুড়িমারীতে এরই মধ্যে এই রোগে ১৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা নিতান্ত কম নয় এবং এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মৃত ও আক্রান্তরা সবাই পাথর ও সিরামিক কারখানার শ্রমিক। ওই এলাকায় গড়ে ওঠা পাথর ও সিরামিক কারখানা সেখানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন সৃষ্টি করেছে, তেমনি সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের ঠেলে দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে বিশেষভাবে চুনাপাথরের কারখানা, সিরামিক ও টাইলস কারখানা এবং শিল-পাটা তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মধ্যে সিলিকোসিসের ঝুঁকি রয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, সিলিকন ক্রিস্টাল ফুসফুসের কোষে ঢুকে জমা হয়। একপর্যায়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে মানুষকে তা নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা ও সিলিকোসিস দুটিই হতে পারে। সিলিকোসিস অসংক্রামক রোগ হলেও রোগটি বিপজ্জনক।
পাথর কাটা শিল্পের শ্রমিকরা সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের রোগটি তবু শনাক্ত করা গেছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে। জনগণ ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সচেতন করতে পারলে হয়তো একসময় রোগটি প্রতিরোধ করা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের অনেক শিল্পেই শ্রমিকরা কাজ করছেন ঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। স্বাস্থ্যঝুঁকি তো আছেই। এসব শ্রমিকের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি দেখারও যেন কেউ নেই। অথচ ২০০৬ সালের কারখানা আইন, যা আগে শ্রম আইন ছিল- সেখানে পেশাগত কারণে আক্রান্ত হওয়া অনেক রোগের তালিকা রয়েছে। এ তালিকায় সিলিকোসিসের নামও রয়েছে। আইন অনুসারে কারখানায় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে কারখানার মালিকের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি কোনো শ্রমিকের কোনো কারখানায় কাজের কারণে বিশেষ কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধানও রয়েছে। বাংলাদেশে সে রকম কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দৃষ্টান্ত বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেখানে শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে, সেখানে সামান্য জরিমানা কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হতে পারে না।
সিলিকোসিস শনাক্ত হওয়ায় এখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। এ রোগ যেসব কারখানার কারণে ছড়িয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, পাশাপাশি রোগটির বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। নতুন শিল্প আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য অবশ্যই জরুরি। তবে সব ক্ষেত্রেই শ্রমিকের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
No comments