আবুল হোসেনকে ৩ সেপ্টেম্বর দুদকে তলব- পদ্মা সেতু দুর্নীতি by মহিউদ্দিন আহমেদ

পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে নোটিস দেয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা মীর জয়নুল আবদীন শিবলী ২৬ আগস্ট আবুল হোসেনের বাসার ঠিকানায় নোটিস প্রেরণ করেন। দুদকের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জনকণ্ঠকে খবরটি নিশ্চিত করে।


তদুদক আবুল হোসেনকে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে ডাকলেও তিনি ইচ্ছা করলে দুদকের বাইরেও তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে বক্তব্য দিতে পারবেন। তবে নোটিস প্রেরণ করার তৃতীয় দিন পর্যন্ত আবুল হোসেন এ বিষয়ে কোন আবেদন করেননি। তাই বুধবার পর্যন্ত দুদক কর্মকর্তা নিশ্চিত রয়েছেন আবুল হোসেন দুদক কার্যালয়ে এসে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরবেন।
দুদক কার্যালয়ের ভেতরে অথবা বাইরে যেখানেই আবুল হোসেন দুদক কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হন তাঁকে দুদকের কর্মকর্তাদের অনেক জটিল এবং কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। কারণ পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তাঁকে ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে। যে অভিযোগের কারণে প্রথমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু এতেও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা বিশ্বব্যাংক সন্তুষ্ট হয়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকেও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভলিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেতু ভবনে গোপন বৈঠক, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের কানাডা ভ্রমণের প্রকৃত কারণ এবং এসএনসি লাভালিন কর্মকর্তাদের ঘুষের প্রস্তাব তিনি পেয়েছেন কি না এসব বিষয়ে আবুল হোসেনের কাছ থেকে স্পষ্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। তাছাড়া এখন পর্যন্ত যে সকল অভিযুক্ত ব্যক্তি দুদকের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন তাদের অনেকের বক্তব্যে গরমিল ও অস্পষ্টতা পাওয়া গেছে। তৎকালীন মন্ত্রী হিসেবে অপর অভিযুক্তদের গরমিল এবং অস্পষ্ট বক্তব্য স্পষ্ট হবে আবুল হোসেনের বক্তব্যের মধ্য দিয়েই। এর আগে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী দুদকের কাছে স্বীকার করে গেছেন তিনি এসএনসি লাভালিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াউল হককে আবুল হোসেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আবার জিয়াউল হক নিজেও স্বীকার করেন সেতু ভবনে আবুল হোসেনসহ অপর কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা। গত বুধবার সেতু বিভাগের তিন প্রকৌশলী দুদকে বলে গেছেন কানাডা যাওয়ার ঘটনা। দুদক তদন্ত কর্মকর্তারা বিষয়গুলো পয়েন্ট আকারে আবুল হোসেনের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইবেন।
বিশ্বব্যাংক থেকে যে অভিযোগ আসে ওই অভিযোগে দেখা গেছে, এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ শাহ পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পেতে তদ্বির করার জন্য ব্যক্তিগত ডায়েরিতে একটি তালিকা করেন। তালিকার নিচে লেখা ছিল উপরোক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলে আর্থিক অথবা অন্য কোন সুবিধা দেয়া গেলে পদ্মা সেতুর পরামর্শক কাজ পাওয়া যেতে পারে। এ তালিকাটি রমেশের বাসা থেকে কানাডীয় পুলিশ উদ্ধার করেছিল। অভিযোগ অনুযায়ী ইতোমধ্যে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, ঠিকাদার নিক্সন চৌধুরী, এসএনসি লাভালিনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি জিয়াউল হক এবং সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী, সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ ও সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মর্তুজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সবশেষে একই বিষয়ে ঈদের আগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এ সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলি ও মির্জা জাহিদুল আলম। এরই ধারবাহিকতায় সর্বশেষ ব্যক্তি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নোটিস করা হয় আবুল হোসেনকে।

No comments

Powered by Blogger.