কালজয়ী সঙ্গীতেও আধুনিকতার আলখাল্লা! by সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু
গত কয়েক মাস ধরে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় টিভি চ্যানেল তাদের নির্ধারিত সংবাদ সম্প্রচারের আগে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের (ডিএল রায়) 'ধন ধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এ বসুন্ধরা' গানটির 'মিউজক ভিডিও' প্রচার করছে। হয়তো লক্ষ্য মহৎ, কিন্তু লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথ মহৎ বলার অবকাশ নেই।
কালজয়ী এ গানটির গায়ে বাজারচলতি আধুনিকতার একটি আলখাল্লা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভ্রান্তি এবং আপত্তিটা এখানেই। প্রশ্ন থেকেই যায়, আধুনিকতার নামে সবকিছু বদলে দেওয়া, বিকৃতির চেষ্টা কি সঙ্গত, না অনিবার্য?
ডিএল রায়ের এ গানটি বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতিসত্তার প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য দলিল। এটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নয় সত্য, কিন্তু এ গানটি আমাদের মনোজগতে জাতীয় সঙ্গীতের মতো শ্রদ্ধাজাগানিয়া আবহ সৃষ্টি করে, অন্তরাত্মায় ছড়িয়ে পড়ে দেশাত্মবোধের সুবর্ণ ছায়া। চ্যানেলটি ডিএল রায়ের এ গানটি চিত্রায়নের জন্য বাংলাদেশের কোনো শ্যামল প্রান্তর, নদী-মাঠ-ঘাসফুল বেছে নেয়নি; বেছে নিয়েছে বাস্কেটবল খেলার অত্যাধুনিক একটি ঝলমলে ইনডোর কোর্ট। ডিএল রায়ের এ গান প্রকৃতিনিষ্ঠ, বাস্কেটবল কোর্টে বেমানান। নির্মাতাদের বোধে এটা কেন এলো না তা চরম বিস্ময়কর। এ মিউজিক ভিডিওতে গ্রামীণ জীবনাচারে অভ্যস্ত একটি বাঙালি মুখেরও ঠাঁই হয়নি। এখানেই শেষ নয়, ডিএল রায়ের অমর এ সঙ্গীতটির কালজয়ী সুর এবং গায়কীর মধ্যেও আমূল বদল ঘটানো হয়েছে। গানের সূচনা হয়েছে কোরাস আবৃত্তির ঢঙে। এরপর তুড়ি আর তালির সংমিশ্রণে তাল তুলে মূল সুরে যাওয়ার চেষ্টা। চ্যানেলটি হয়তো বলবে, আমাদের কালজয়ী সঙ্গীতগুলো নবপ্রজন্মের চাহিদামাফিক আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, ডিএল রায়ের এ গানটি তথাকথিত আধুনিক ফর্মে গাওয়ার জোর তাগিদ কি বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ছিল? নাকি বাঙালি সংস্কৃতির মুক্তির জন্য এছাড়া ভিন্ন কোনো পথ খোলা ছিল না? আমরা অবশ্যই বদলাব, তবে তা অসুন্দর থেকে সুন্দরে, অকল্যাণ থেকে কল্যাণে, অসত্য থেকে সত্যে, রক্ষণশীলতা থেকে প্রগতিতে। তাই বলে ডিএল রায়, অতুলপ্রসাদ, রবীন্দ্র-নজরুলেও হাত দিতে হবে! এদের আমরা বিব্রত, বিকৃত করি কেন, কোনো দুঃখে? আমরা হয়তো ভুলে গেছি ১৯৪৭-এর পর কবি নজরুলের বিখ্যাত একটি কবিতার একটি চরণে ব্যবহৃত 'মহাশ্মশান' শব্দটি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে 'গোরস্তান' হিসেবে বদলে ফেলা হয়েছিল। দেশের প্রগতিশীল মানুষ কিন্তু কবির অনুমতি ছাড়া কবিতার ওই শব্দবদল করার শাসকশ্রেণীর প্রয়াস মেনে নেয়নি। প্রতিবাদে মাঠেও নেমেছিল।
ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় চ্যানেলটি আদর্শস্থানীয় বলে তাদের এমন চেষ্টায় অনেকেই অনুপ্রাণিত হবেন, তা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে কেউ যদি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ...' তুড়ি আর তালি বাজিয়ে যখন যেখানে, যেভাবে খুশি গাইতে শুরু করে তখন তা থামাবে কে? চিরন্তন কিছু বিষয়কে শ্রদ্ধার সঙ্গে অবিকৃত রাখাই শোভন।
হ মানিকগঞ্জ
ডিএল রায়ের এ গানটি বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতিসত্তার প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য দলিল। এটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নয় সত্য, কিন্তু এ গানটি আমাদের মনোজগতে জাতীয় সঙ্গীতের মতো শ্রদ্ধাজাগানিয়া আবহ সৃষ্টি করে, অন্তরাত্মায় ছড়িয়ে পড়ে দেশাত্মবোধের সুবর্ণ ছায়া। চ্যানেলটি ডিএল রায়ের এ গানটি চিত্রায়নের জন্য বাংলাদেশের কোনো শ্যামল প্রান্তর, নদী-মাঠ-ঘাসফুল বেছে নেয়নি; বেছে নিয়েছে বাস্কেটবল খেলার অত্যাধুনিক একটি ঝলমলে ইনডোর কোর্ট। ডিএল রায়ের এ গান প্রকৃতিনিষ্ঠ, বাস্কেটবল কোর্টে বেমানান। নির্মাতাদের বোধে এটা কেন এলো না তা চরম বিস্ময়কর। এ মিউজিক ভিডিওতে গ্রামীণ জীবনাচারে অভ্যস্ত একটি বাঙালি মুখেরও ঠাঁই হয়নি। এখানেই শেষ নয়, ডিএল রায়ের অমর এ সঙ্গীতটির কালজয়ী সুর এবং গায়কীর মধ্যেও আমূল বদল ঘটানো হয়েছে। গানের সূচনা হয়েছে কোরাস আবৃত্তির ঢঙে। এরপর তুড়ি আর তালির সংমিশ্রণে তাল তুলে মূল সুরে যাওয়ার চেষ্টা। চ্যানেলটি হয়তো বলবে, আমাদের কালজয়ী সঙ্গীতগুলো নবপ্রজন্মের চাহিদামাফিক আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, ডিএল রায়ের এ গানটি তথাকথিত আধুনিক ফর্মে গাওয়ার জোর তাগিদ কি বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ছিল? নাকি বাঙালি সংস্কৃতির মুক্তির জন্য এছাড়া ভিন্ন কোনো পথ খোলা ছিল না? আমরা অবশ্যই বদলাব, তবে তা অসুন্দর থেকে সুন্দরে, অকল্যাণ থেকে কল্যাণে, অসত্য থেকে সত্যে, রক্ষণশীলতা থেকে প্রগতিতে। তাই বলে ডিএল রায়, অতুলপ্রসাদ, রবীন্দ্র-নজরুলেও হাত দিতে হবে! এদের আমরা বিব্রত, বিকৃত করি কেন, কোনো দুঃখে? আমরা হয়তো ভুলে গেছি ১৯৪৭-এর পর কবি নজরুলের বিখ্যাত একটি কবিতার একটি চরণে ব্যবহৃত 'মহাশ্মশান' শব্দটি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে 'গোরস্তান' হিসেবে বদলে ফেলা হয়েছিল। দেশের প্রগতিশীল মানুষ কিন্তু কবির অনুমতি ছাড়া কবিতার ওই শব্দবদল করার শাসকশ্রেণীর প্রয়াস মেনে নেয়নি। প্রতিবাদে মাঠেও নেমেছিল।
ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় চ্যানেলটি আদর্শস্থানীয় বলে তাদের এমন চেষ্টায় অনেকেই অনুপ্রাণিত হবেন, তা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে কেউ যদি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ...' তুড়ি আর তালি বাজিয়ে যখন যেখানে, যেভাবে খুশি গাইতে শুরু করে তখন তা থামাবে কে? চিরন্তন কিছু বিষয়কে শ্রদ্ধার সঙ্গে অবিকৃত রাখাই শোভন।
হ মানিকগঞ্জ
No comments