ভালোবাসাতেই শিশুদের পৃথিবীঃ মাইকেল
মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। এক নামেই বিখ্যাত। অন্নভাবে বললে ‘কিং অব পপ’ বা পপ সঙ্গীতের কিংবদন্তি। আজ থেকে তিন বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ জুন মাইকেল জ্যাকসন বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে হঠাৎ করেই চলে যান না ফেরার দেশে।
বিশ্ব মাতানো এ কিংবদন্তি শিল্পীর জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গ্যারি নামের একটি নিভৃত পল্লীতে।
মাইকেল জ্যাকসন পাঁচ বছর বয়সে তার ভাইদের সঙ্গে জ্যাকসন(৫) মিউজিক্যাল গ্রুপে যোগ দেন। শুরু থেকেই মাইকেল জ্যাকসন তার দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে থাকেন। জ্যাকসনের(৫) প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডায়ানা রোজ’ প্রকাশ হয় ১৯৬৯ সালে। বছর শেষে তা টপচার্টে চলে আসে। অ্যালবামের প্রথম একক গান ‘আই ওয়ান্ট ইউ ব্যাক’১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে বিলবোর্ড হট ১০০ চার্টে ১ নম্বর পজিশনে স্থান করে নেয়।
২১ মার্চ, ২০০১। মাইকেল জ্যাকসন বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে একটি বক্তৃতা দেন। সেখানে জ্যাকসন ‘হিল দ্য কিডস’ নামে তার একটি প্রজেক্ট তুলে ধরেন। বিশ্বে শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা মাইকেলের সেই বক্তৃতা এখনও সারাবিশ্বে প্রসংশিত হচ্ছে। ২৯ আগস্ট এ মহান শিল্পীর জন্মদিনে সেই বক্তৃতার নির্বাচিত অংশের অনুবাদ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আমি মনে করি প্রতিটি শিশুকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। নতুন জায়গায় নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে দিতে হবে। এতে শিশুরা অনেক কিছু শিখতে পারবে। কারণ মানুষের জ্ঞান শুধু লাইব্রেরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এমনকি বই বা কলম সঙ্গে থাকলেও প্রকৃত শিক্ষিত হওয়া যায় না। একজন মানুষের হৃদয়ের আবেদন বোঝটাও এ ধরনের শিক্ষা।
আজ এখানে আমি পপ স্টার হয়ে আসিনি। আমি এসেছি ভবিষ্যতের স্টারদের মাঝে। যে প্রজন্মের অনেকেই জানে না ছেলেবেলার অনুভূতির কথা। অনেকে আবার ছোটবেলার কথা মনেই করতে চায় না।
এখানে সবাই ছোটবেলার প্রডাক্ট। কিন্তু আমার ছোটবেলাটা অন্য সবার মত কাটেনি। আমি অত্যন্ত মর্মান্তিক ছেলেবেলা কাটিয়েছি। যখন বাবা-মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার কথা তখন আমি তা পাইনি। আমি একটি মর্মান্তিক পরিবেশে বড় হয়েছি। এখানে অনেকের ছোটবেলা অন্যরকমও কেটেছে। যখন তোমাদের অনেকের ভালোবাসা পেয়ে বড় হওয়ার কথা, তখন অনেকেরই পড়াশোনার জন্য শাস্তি পেয়ে সময়টা চলে গেছে।
আমি মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে গান করি। এখনও আমি গানের সঙ্গেই নেচে যাচ্ছি। সময়ও দ্রুত যাচ্ছে। এখন আমার সফলতায় অনেকেই হিংসা করে। ছোটবেলায় আমারা পাগলের মত গান গাইতাম, নাচতাম। তখন আমারও ইচ্ছা হতো অন্যসব শিশুদের মত সাধারণ জীবন কাটাতে। আমারও ইচ্ছে হত অন্য সবার মত গাছে উঠে লাফাতে, বেলুন ওড়াতে, পার্কের বিভিন্ন রাইডে চড়তে। কিন্তু এগুলো করা আমার পক্ষে তখন সম্ভব হয়নি।
এজন্যই মনে হয় আমার শৈশবটা সত্যিকার অর্থে শৈশব ছিল না।
এখন শিশুদের দ্রুত বড় করে দেওয়ার চেষ্টা চলে। মনে হয় এ শৈশবটা যেন একটা বোঝা। আর এখানেই আমি কাজ করতে চাই। ওদের ছোট থাকতে দিন। ছোটবেলার অনুভূতিগুলো থেকে ওদের বঞ্চিত করবেন না।
মনোবিজ্ঞানীরা অসংখ্য বই লিখছেন। শিশুদের কীভাবে মানুষ করতে হবে এ বিষয়ে পিতা-মাতাকে শিক্ষা দিতে বইয়ের অভাব নেই। সেখানে তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা হয়। তাদের সঙ্গে কি ধরনের ব্যবহার করতে হবে এসব বিষয়েও সচেতন করে তোলার চেষ্টা করা হয়। আমি সেই সব মনোবিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ জানাই। অন্তত বইগুলো কেউ চাইলেই পড়তে পারবে। এ সুযোগটা তো অন্তত আছে।
আগের দিনে খুব ছোট্ট ঘরে মানুষ বাস করতো। আটোসাটো ভাবে বিদ্যুৎহীন ঘরে তারা থাকতো। খাওয়ার অভাব ছিল। অর্থের কষ্ট ছিল। এতো অভাবের মধ্যেও ভালোবাসার কোনো অভাব সে সব পরিবারে ছিল না।
কিন্তু আজকের সময়ে কেমন যেন একটা দূরত্বে থেকে শিশুরা বেড়ে উঠে। বাবা-মা তাদের সন্তানদের ব্যাপারে অনেক সচেতন। কিন্তু তারপরও কোথাও যেন একটা ঘাটতি থেকেই যায়। একটা শূন্যতা জায়গা করে নেয়। ভালোবাসার অভাবে প্রতিটি শিশুর হৃদয় কাতর হয়।
তবে আমি শিশুদের কিছু অধিকার সম্পর্কে প্রস্তাব দিতে চাই। প্রতিটি শিশু ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখে। সেটা যদি অর্জন করতে নাও পারে তারপরও তাকে ভালোবাসা দিতে হবে। প্রতিটি শিশু নিরাপত্তার অধিকার আছে।
সব শিশুকে বোঝাতে হবে এ পৃথিবীতে তাদের মূল্য অন্যসব কিছুর চেয়ে বেশি। পৃথিবী তাদের কাছে তুচ্ছ। তাদের কথা শুনতে হবে। সেটা যদি হাস্যকর হয় তারপরও সে কথার মূল্য দিতে হবে। তারা যদি রাতে স্কুলের বই না পড়ে গল্পের বই পড়তে চায়, তাহলে তার সে কাজ করার অধিকার দিতে হবে। পৃথিবীর কোনো সংবাদের প্রতি যদি তাদের আগ্রহ নাও থাকে তারপরও তাকে গল্পের বই পড়তে দিতে হবে। তাদের করুণার দৃষ্টিতে নয়, বরং ভালোবাসার চোখে দেখতে হবে।
আমার প্রিয় বন্ধুরা, একটি বিষয় মনে রাখবে, প্রতিটি মানব শিশুর সঙ্গে সবার প্রথমে পরিচয় হয় স্নেহ ও ভালোবাসার। যখন তার বোঝার ক্ষমতা হয়, তখন সে বুঝতে পারে সে ভালোবাসা সাদা না কালো। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে যেন প্রতিটি শিশুর কাছে ভালোবাসার রঙটা সুন্দর হয়। ধর্মও এখানে বড় বিষয় নয়। বড় হচ্ছে ভালোবাসা।
তোমাদের একটা গল্প বলি। ১২ বছরের একটা ছেলে একদিন ক্যালিফোর্নিয়ায় আমার বাসায় এল। সঙ্গে তার মা।। ছেলেটি ক্যান্সারে মারা যাবে। তার মা আমাকে বলল, ও যেকোনো মুহূর্তে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পাবে। ছেলেটি আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। এজন্যই আমার কাছে নিয়ে আসা।
আমি ওকে বললাম, দেখ তোমার এলাকা কানসাসে যাবো। সেখানে একটি কনসার্ট করবো। আমি চাই তুমি আমার কনসার্টে আসো। এখন তোমাকে আমার জ্যাকেট এবং গ্লাভস দেব। এটি পড়ে তুমি সেই কনসার্টে আসবে।
সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির চোখ বিস্ময়ে ভরে গেল। সে বিস্মিত হয়ে বলল, সত্যিই তুমি আমার শহরে আসবে? এবং তোমার জ্যাকেট এবং গ্লাভস দেবে? আমি বললাম, অবশ্যই। কিন্তু তোমাকে আসতে হবে।
দুঃখের বিষয় ছিল আমি যখন তার শহরে যাই তখন সে পৃথিবীর অন্যপারে চলে গেছে। আমার করা সবচেয়ে বাজে কনসার্ট সেটি। এতো কষ্ট, বেদনা নিয়ে কনসার্ট আমি করিনি। আমি ছেলেটিকে বোঝাতে চেয়েছিলাম, এ পৃথিবীতে তোমার মূল্য আছে। তোমাকে শুধু তোমার মা-বাবা নয়, অন্যরাও ভালোবাসে। তাদের কাছেও তোমার মূল্য অনেক। অন্তত ওকে এ অনুভূতিটুকু দিতে পেরেছিলাম।
কিন্তু দেখ, ছেলেটির বয়স ছিল দশ। আমার দশ বছর বয়সে কেউ আমাকে এ অনুভূতিটা দিতে পারেনি। এমনকি আমার বাবাও না। আমার বাবা অনেক কঠিন মানুষ ছিলেন। তিনি কোনোদিন জড়িয়ে ধরে বলেননি, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কোনোদিন আমাকে বেলুন ওড়াতে দেননি। আমার দিকে কোনোদিন ওয়াটার বেলুন ছুড়ে মজা করেননি। কোনোদিন কোনো পার্কে বেড়াতে নিয়ে যায়নি। চিন্তা করো কি বিভৎস ছিল আমার শৈশব।
তবে একটি স্মৃতি আমার এখনও মনে পড়ে। একবার রাস্তা দিয়ে বাবার পাশে আমি হাঁটছি, হুট করে তিনি আমাকে একটা টাট্টুঘোড়ায় উঠিয়ে দিল। আমি তখন ভয়ে শেষ। কিন্তু বাবা হাততালি দিয়ে আমার সঙ্গে মজা করা শুরু করল। কিছু সময়ের জন্য বাবা আমার মতই শিশু হয়ে গিয়েছিল।
এই স্মৃতিটিই আমি ভুলতে পারি না। মানুষের মন এমনই। সেই শিশুকালে কি এক পাঁচ ছয় মিনিটের স্মৃতি আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। শিশুদের জন্য খুব বড় কিছু করার দরকার নেই। সামান্য কিছুই যথেষ্ট। যেখানে ভালোবাসা থাকবে, আদর থাকবে। স্নেহ থাকবে। এ পৃথিবীর বিভৎস চিত্রকে তাহলেও তারা সেই ভালোবাসা দিয়েই পাল্টে দিতে পারবে।
মাইকেল জ্যাকসন পাঁচ বছর বয়সে তার ভাইদের সঙ্গে জ্যাকসন(৫) মিউজিক্যাল গ্রুপে যোগ দেন। শুরু থেকেই মাইকেল জ্যাকসন তার দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে থাকেন। জ্যাকসনের(৫) প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডায়ানা রোজ’ প্রকাশ হয় ১৯৬৯ সালে। বছর শেষে তা টপচার্টে চলে আসে। অ্যালবামের প্রথম একক গান ‘আই ওয়ান্ট ইউ ব্যাক’১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে বিলবোর্ড হট ১০০ চার্টে ১ নম্বর পজিশনে স্থান করে নেয়।
২১ মার্চ, ২০০১। মাইকেল জ্যাকসন বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে একটি বক্তৃতা দেন। সেখানে জ্যাকসন ‘হিল দ্য কিডস’ নামে তার একটি প্রজেক্ট তুলে ধরেন। বিশ্বে শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা মাইকেলের সেই বক্তৃতা এখনও সারাবিশ্বে প্রসংশিত হচ্ছে। ২৯ আগস্ট এ মহান শিল্পীর জন্মদিনে সেই বক্তৃতার নির্বাচিত অংশের অনুবাদ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আমি মনে করি প্রতিটি শিশুকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। নতুন জায়গায় নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে দিতে হবে। এতে শিশুরা অনেক কিছু শিখতে পারবে। কারণ মানুষের জ্ঞান শুধু লাইব্রেরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এমনকি বই বা কলম সঙ্গে থাকলেও প্রকৃত শিক্ষিত হওয়া যায় না। একজন মানুষের হৃদয়ের আবেদন বোঝটাও এ ধরনের শিক্ষা।
আজ এখানে আমি পপ স্টার হয়ে আসিনি। আমি এসেছি ভবিষ্যতের স্টারদের মাঝে। যে প্রজন্মের অনেকেই জানে না ছেলেবেলার অনুভূতির কথা। অনেকে আবার ছোটবেলার কথা মনেই করতে চায় না।
এখানে সবাই ছোটবেলার প্রডাক্ট। কিন্তু আমার ছোটবেলাটা অন্য সবার মত কাটেনি। আমি অত্যন্ত মর্মান্তিক ছেলেবেলা কাটিয়েছি। যখন বাবা-মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার কথা তখন আমি তা পাইনি। আমি একটি মর্মান্তিক পরিবেশে বড় হয়েছি। এখানে অনেকের ছোটবেলা অন্যরকমও কেটেছে। যখন তোমাদের অনেকের ভালোবাসা পেয়ে বড় হওয়ার কথা, তখন অনেকেরই পড়াশোনার জন্য শাস্তি পেয়ে সময়টা চলে গেছে।
আমি মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে গান করি। এখনও আমি গানের সঙ্গেই নেচে যাচ্ছি। সময়ও দ্রুত যাচ্ছে। এখন আমার সফলতায় অনেকেই হিংসা করে। ছোটবেলায় আমারা পাগলের মত গান গাইতাম, নাচতাম। তখন আমারও ইচ্ছা হতো অন্যসব শিশুদের মত সাধারণ জীবন কাটাতে। আমারও ইচ্ছে হত অন্য সবার মত গাছে উঠে লাফাতে, বেলুন ওড়াতে, পার্কের বিভিন্ন রাইডে চড়তে। কিন্তু এগুলো করা আমার পক্ষে তখন সম্ভব হয়নি।
এজন্যই মনে হয় আমার শৈশবটা সত্যিকার অর্থে শৈশব ছিল না।
এখন শিশুদের দ্রুত বড় করে দেওয়ার চেষ্টা চলে। মনে হয় এ শৈশবটা যেন একটা বোঝা। আর এখানেই আমি কাজ করতে চাই। ওদের ছোট থাকতে দিন। ছোটবেলার অনুভূতিগুলো থেকে ওদের বঞ্চিত করবেন না।
মনোবিজ্ঞানীরা অসংখ্য বই লিখছেন। শিশুদের কীভাবে মানুষ করতে হবে এ বিষয়ে পিতা-মাতাকে শিক্ষা দিতে বইয়ের অভাব নেই। সেখানে তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা হয়। তাদের সঙ্গে কি ধরনের ব্যবহার করতে হবে এসব বিষয়েও সচেতন করে তোলার চেষ্টা করা হয়। আমি সেই সব মনোবিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ জানাই। অন্তত বইগুলো কেউ চাইলেই পড়তে পারবে। এ সুযোগটা তো অন্তত আছে।
আগের দিনে খুব ছোট্ট ঘরে মানুষ বাস করতো। আটোসাটো ভাবে বিদ্যুৎহীন ঘরে তারা থাকতো। খাওয়ার অভাব ছিল। অর্থের কষ্ট ছিল। এতো অভাবের মধ্যেও ভালোবাসার কোনো অভাব সে সব পরিবারে ছিল না।
কিন্তু আজকের সময়ে কেমন যেন একটা দূরত্বে থেকে শিশুরা বেড়ে উঠে। বাবা-মা তাদের সন্তানদের ব্যাপারে অনেক সচেতন। কিন্তু তারপরও কোথাও যেন একটা ঘাটতি থেকেই যায়। একটা শূন্যতা জায়গা করে নেয়। ভালোবাসার অভাবে প্রতিটি শিশুর হৃদয় কাতর হয়।
তবে আমি শিশুদের কিছু অধিকার সম্পর্কে প্রস্তাব দিতে চাই। প্রতিটি শিশু ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখে। সেটা যদি অর্জন করতে নাও পারে তারপরও তাকে ভালোবাসা দিতে হবে। প্রতিটি শিশু নিরাপত্তার অধিকার আছে।
সব শিশুকে বোঝাতে হবে এ পৃথিবীতে তাদের মূল্য অন্যসব কিছুর চেয়ে বেশি। পৃথিবী তাদের কাছে তুচ্ছ। তাদের কথা শুনতে হবে। সেটা যদি হাস্যকর হয় তারপরও সে কথার মূল্য দিতে হবে। তারা যদি রাতে স্কুলের বই না পড়ে গল্পের বই পড়তে চায়, তাহলে তার সে কাজ করার অধিকার দিতে হবে। পৃথিবীর কোনো সংবাদের প্রতি যদি তাদের আগ্রহ নাও থাকে তারপরও তাকে গল্পের বই পড়তে দিতে হবে। তাদের করুণার দৃষ্টিতে নয়, বরং ভালোবাসার চোখে দেখতে হবে।
আমার প্রিয় বন্ধুরা, একটি বিষয় মনে রাখবে, প্রতিটি মানব শিশুর সঙ্গে সবার প্রথমে পরিচয় হয় স্নেহ ও ভালোবাসার। যখন তার বোঝার ক্ষমতা হয়, তখন সে বুঝতে পারে সে ভালোবাসা সাদা না কালো। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে যেন প্রতিটি শিশুর কাছে ভালোবাসার রঙটা সুন্দর হয়। ধর্মও এখানে বড় বিষয় নয়। বড় হচ্ছে ভালোবাসা।
তোমাদের একটা গল্প বলি। ১২ বছরের একটা ছেলে একদিন ক্যালিফোর্নিয়ায় আমার বাসায় এল। সঙ্গে তার মা।। ছেলেটি ক্যান্সারে মারা যাবে। তার মা আমাকে বলল, ও যেকোনো মুহূর্তে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পাবে। ছেলেটি আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। এজন্যই আমার কাছে নিয়ে আসা।
আমি ওকে বললাম, দেখ তোমার এলাকা কানসাসে যাবো। সেখানে একটি কনসার্ট করবো। আমি চাই তুমি আমার কনসার্টে আসো। এখন তোমাকে আমার জ্যাকেট এবং গ্লাভস দেব। এটি পড়ে তুমি সেই কনসার্টে আসবে।
সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির চোখ বিস্ময়ে ভরে গেল। সে বিস্মিত হয়ে বলল, সত্যিই তুমি আমার শহরে আসবে? এবং তোমার জ্যাকেট এবং গ্লাভস দেবে? আমি বললাম, অবশ্যই। কিন্তু তোমাকে আসতে হবে।
দুঃখের বিষয় ছিল আমি যখন তার শহরে যাই তখন সে পৃথিবীর অন্যপারে চলে গেছে। আমার করা সবচেয়ে বাজে কনসার্ট সেটি। এতো কষ্ট, বেদনা নিয়ে কনসার্ট আমি করিনি। আমি ছেলেটিকে বোঝাতে চেয়েছিলাম, এ পৃথিবীতে তোমার মূল্য আছে। তোমাকে শুধু তোমার মা-বাবা নয়, অন্যরাও ভালোবাসে। তাদের কাছেও তোমার মূল্য অনেক। অন্তত ওকে এ অনুভূতিটুকু দিতে পেরেছিলাম।
কিন্তু দেখ, ছেলেটির বয়স ছিল দশ। আমার দশ বছর বয়সে কেউ আমাকে এ অনুভূতিটা দিতে পারেনি। এমনকি আমার বাবাও না। আমার বাবা অনেক কঠিন মানুষ ছিলেন। তিনি কোনোদিন জড়িয়ে ধরে বলেননি, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কোনোদিন আমাকে বেলুন ওড়াতে দেননি। আমার দিকে কোনোদিন ওয়াটার বেলুন ছুড়ে মজা করেননি। কোনোদিন কোনো পার্কে বেড়াতে নিয়ে যায়নি। চিন্তা করো কি বিভৎস ছিল আমার শৈশব।
তবে একটি স্মৃতি আমার এখনও মনে পড়ে। একবার রাস্তা দিয়ে বাবার পাশে আমি হাঁটছি, হুট করে তিনি আমাকে একটা টাট্টুঘোড়ায় উঠিয়ে দিল। আমি তখন ভয়ে শেষ। কিন্তু বাবা হাততালি দিয়ে আমার সঙ্গে মজা করা শুরু করল। কিছু সময়ের জন্য বাবা আমার মতই শিশু হয়ে গিয়েছিল।
এই স্মৃতিটিই আমি ভুলতে পারি না। মানুষের মন এমনই। সেই শিশুকালে কি এক পাঁচ ছয় মিনিটের স্মৃতি আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। শিশুদের জন্য খুব বড় কিছু করার দরকার নেই। সামান্য কিছুই যথেষ্ট। যেখানে ভালোবাসা থাকবে, আদর থাকবে। স্নেহ থাকবে। এ পৃথিবীর বিভৎস চিত্রকে তাহলেও তারা সেই ভালোবাসা দিয়েই পাল্টে দিতে পারবে।
No comments