এ্যালজেবরার কী দরকার আছে? মূল : এন্ডু হ্যাকার- অনুবাদ : এনামুল হক
আমেরিকায় প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ স্কুল ছাত্রছাত্রী এবং কলেজে ভর্তি হওয়া সদ্য ২০ লাখ ছাত্রছাত্রীকে এ্যালজেব্রা বা বীজগণিত নিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়। হাইস্কুল ও কলেজ দুই জায়গাতেই বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী এ্যালজেব্রায় ফেল করবে বলে ধরেই নেয়া হয়।
তাহলে আমেরিকান ছাত্রদের কেন এই কঠিন পরীক্ষায় ফেলা? আমি নিজেকে ওই জোরালো অভিমতের দিকে দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের সেটা করা উচিত নয়।
আমার প্রশ্নটি এ্যালজেব্রা বা বীজগণিতকে ছাড়িয়ে আরও ব্যাপক পরিসরেÑজ্যামিতি থেকে ক্যালকুলাস হয়ে গণিতশাস্ত্রের গতানুগতিক অনুক্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাজ্যের রিজেন্ট ও আইনপ্রণেতারা এবং জনসাধারণের সিংহভাগ স্বতঃসিদ্ধ বলেই ধরে নেন যে প্রত্যেক তরুণ-তরুণীর বহুপদী ক্রিয়াকলাপ ও স্থিতিমাপ সমীকরণে দক্ষতা অর্জন করা উচিত।
এ্যালজেব্রার স্বপক্ষে বলার মতো অনেক যুক্তি আছে এবং এটা শেখার অনেক সুফলও আছে। বেশিরভাগ যুক্তি প্রথম শুনলে যথেষ্ট সঙ্গত মনে হবে। অনেক যুক্তি আমি এক সময় নিজেও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু যতই সেগুলো পরীক্ষা বা যাচাই করে দেখেছি ততই মনে হয়েছে সেগুলো বহুলাংশে বা সামগ্রিকভাবে ভ্রান্ত। গবেষণা বা তথ্যপ্রমাণের দ্বারা সেগুলো সমর্থিত নয় কিংবা সেগুলো আকাশকুসুুম যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত (আমি অবশ্য সংখ্যাত্মক দক্ষতার কথা বলছি না, যা ওয়াকিবহাল নাগরিক এবং ব্যক্তিগত আর্থিক সংস্থানের জন্য একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক নিয়মসূত্রের কথা বলছি)।
এই বিতর্কটা গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। গণিত শাস্ত্রকে বাধ্যতামূলক করা হলে আমরা তরুণ মেধাশক্তিকে আবিষ্কার করতে ও বিকশিত করে তুলতে পারব না। কঠোরতা বজায় রাখার স্বার্থে আমরা প্রকৃতপক্ষে আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতার ভা-ারকে নিঃশেষিত করে ফেলছি। আমি একথা বলছি একজন লেখক ও সমাজবিজ্ঞানী হিসাবে যার কাজ সংখ্যার ব্যবহারের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করে থাকে। আমার লক্ষ্য ছাত্রদের একটা কঠিন বিষয় থেকে রেহাই দেয়া নয় বরং মূল্যবান সম্পদকে ভ্রান্ত পথে চালিত করে আমরা যে বাস্তব সমস্যার জন্ম দিচ্ছি তার প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট করা।
গণিতের চাপ গোড়া থেকেই শুরু হয়ে যায়। আমাদের জাতির জন্য লজ্জার ব্যাপার হলো নবম গ্রেডের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি চারজনের একজন হাইস্কুলে পাঠ শেষ করতে ব্যর্থ হয়। সাউথ ক্যারোলিনায় ২০০৮ -০৯ সালে ৩৪ শতাংশ ফেল করেছে বলে গত বছর প্রকাশিত জাতীয় তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে। নেভাদায় ফেল করার হার ৪৫ শতাংশ। বেশিরভাগ শিক্ষক যাঁদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি তাঁরা একাডেমিক ক্ষেত্রে এই অকৃতকার্যতার একটা প্রধান কারণ হিসাবে এ্যালজেŸ্রা বা বীজগণিতের কথা উল্লেখ করেছেন।
টেলিশির দীর্ঘদিনের শিক্ষক শার্লি ব্যাগওয়েল হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে “সকল ছাত্র বীজগণিতে পারদর্শিতা অর্জন করবে বলে আশা করলে আরও বেশি ছাত্র লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়বে।” যারা স্কুলে থেকে যায় তাদের অনেক সময় এক্সিট এক্সামিনেশন বা বিশেষ টেস্ট পরীক্ষা দিতে হয়। এসব পরীক্ষার প্রায় সবটাতেই বীজগণিতের উপাদান থাকে। ওকলাহোমায় গত বছর পাস করতে পারেনি ৩৩ শতাংশ আর ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ৩৫ শতাংশ। বীজগণিত বিত্তহীন, বিত্তবান, কৃষ্ণাঙ্গ কি শ্বেতাঙ্গ সব ধরনের ছাত্রের কাছে এক ক্লেশকর বাধা। নিউ মেক্সিকোয় ৪৩ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ছাত্রের অবস্থান ‘দক্ষতার’ নিচে। আর টেনিশিতে এই হার ৩৯ শতাংশ। এমনকি ভাল আর্থিক সাহায্য সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলগুলোয় অন্যান্য বিষয়ে মেধাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রী থাকলেও দেখা গেছে তারা বীজগণিতে আটকে যাচ্ছে। ক্যালকুলাস ও ট্রিগোনোমিট্রির কথা না হয় না-ই বলা হলো।
ক্যালিফোর্নিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় শুধু সেই ছাত্রের ভর্তির আবেদনপত্র বিবেচনায় নেয়া হয় যাদের তিন বছর গণিত বিষয়টি ছিল। এভাবে যারা কলা বা ইতিহাসের মতো ক্ষেত্রে চমৎকারিত্বের পরিচয় দিতে পারত তাদের অনেককে বাদ দেয়া হয়। কমিউনিটি কলেজের ছাত্ররাও গণিতের একই রকম অচলায়তনের সম্মুখীন হয়।
স্কুলগুলোর ওপর দ্বিবার্ষিক এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে স্কুলে ভর্তি হওয়া যেসব ছাত্রকে বীজগণিত নিতে হয়েছে তাদের এক-চতুর্থাংশেরও কম বীজগণিত ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়েছে।
এ্যাপালাচিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটির বারবারা বর্ণহাম বলেছেন, এমন অনেক ছাত্র আছে যারা এসব কোর্স তিনবার, চারবার, পাঁচবার করেছে। কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত পাস করলেও অনেকেই বাদ পড়ে যায়।
ড্রপআউটের আরেক পরিসংখ্যান দেখলে সমান সমবেদনার কারণ ঘটবে। উচ্চশিক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া সকল ছাত্রছাত্রীর মধ্যে শতকরা মাত্র ৫৮ জন স্নাতক ডিগ্রী লাভ করতে সক্ষম হয়। তাদের স্মাতক হওয়ার পথে মূল অন্তরায় নবীনদের গণিত। আমি ১৯৭১ সাল থেকে নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছি। সেখানে দেখেছি যে, ৫৭ শতাংশ ছাত্র বাধ্যতামূলক বীজগণিত কোর্স পাস করতে পারেনি। একটি ফ্যাকাল্টি রিপোর্টের নিরানন্দ অভিমত হলোÑ সকল পর্যায়ে গণিতে অর্কতকার্যতা অন্য যেকোন একাডেমিক বিষয়ের চেয়ে সামর্থ্যে বা ক্ষমতার ওপর অধিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দেখা গেছে যে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে গণিতে এফ ও ডি গ্রেড পাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা দ্বিগুণ।
গ্রেড উত্তীর্ণ হলেই তা যথেষ্ট নয়। অনেক কলেজ আছে যেগুলো গণিতে উঁচুমানের এক প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করে নিজেদের স্ট্যাটাস বাড়াতে চায়। কাজেই তারা স্যাটের গণিত অংশে ৭শ’ নম্বর চায়। ২০০৯ সালে এই উচ্চতা মাত্র ৯ শতাংশ ছেলে ও ৪ শতাংশ মেয়ে অর্জন করতে পেরেছিল।
একথা সত্য যে, ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডার ছাত্ররা অঙ্ক পরীক্ষায় ভাল করে থাকে। কিন্তু সেটা তাদের ক্লাসরুমে শেখা বীজগণিতের জন্য নয় রবং ধৈর্র্য ও অধ্যবসায়ের জন্য। শেষের গুণ দুটোর জন্য তারা ভাল চাকরিতে ঠাঁই পেয়ে যায়। এটাও পরিষ্কার নয় যে, চাকরিতে আমাদের যে পরিমাণাত্মক বিচার-বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন হয় তার সঙ্গে ক্লাসরুমে শেখা অঙ্কের কোন সম্পর্ক আছে কিনা। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষা মনস্তত্ত্ববিদ জন পি স্মিথ গণিত শিক্ষার ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে কর্মক্ষেত্রে গাণিতিক যুক্তি ও বিচারবিশ্লেষণ স্কুলে শেখা গাণিতিক পরিভাষা থেকে লক্ষণীয়ভাবে আলাদা। এমনকি যেসব চাকরি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি প্রকৌশল ও গণিত এই চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল সেখানেও লোক নিয়োগ করার পর যে ধরনের কম্পিউটেশনের প্রয়োজন সেটিসহ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আমি পুরোপুরি একমত যে, একটা উন্নত শিল্প অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য হাইটেক জ্ঞানের প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলে যদি আমরা বিশ্বাস করি যে সমাধানটা বহুলাংশে একাডেমিক; তাহলে আমরা নিজেদেরকে প্রতারিত করছি।
একজন সন্দেহবাদী যুক্তি দিতে পারেন যে যদি আমাদের গণিত শিক্ষা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে নিরুৎসাহিত করে থাকে তারপরও খোদ গণিত শাস্ত্রকে দোষ দেয়া যায় না। এই শাস্ত্রটি কি আমাদের শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয় যা পরিমাণাত্মক হাতিয়ার যোগাচ্ছে এবং বিশেষ করে আমাদের হাইটেক যুগের অপরিহার্য ধারণাত্মক ক্ষমতা ও সামর্থ্যকে শাণিত করে তুলছে? (চলবে)
আমার প্রশ্নটি এ্যালজেব্রা বা বীজগণিতকে ছাড়িয়ে আরও ব্যাপক পরিসরেÑজ্যামিতি থেকে ক্যালকুলাস হয়ে গণিতশাস্ত্রের গতানুগতিক অনুক্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাজ্যের রিজেন্ট ও আইনপ্রণেতারা এবং জনসাধারণের সিংহভাগ স্বতঃসিদ্ধ বলেই ধরে নেন যে প্রত্যেক তরুণ-তরুণীর বহুপদী ক্রিয়াকলাপ ও স্থিতিমাপ সমীকরণে দক্ষতা অর্জন করা উচিত।
এ্যালজেব্রার স্বপক্ষে বলার মতো অনেক যুক্তি আছে এবং এটা শেখার অনেক সুফলও আছে। বেশিরভাগ যুক্তি প্রথম শুনলে যথেষ্ট সঙ্গত মনে হবে। অনেক যুক্তি আমি এক সময় নিজেও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু যতই সেগুলো পরীক্ষা বা যাচাই করে দেখেছি ততই মনে হয়েছে সেগুলো বহুলাংশে বা সামগ্রিকভাবে ভ্রান্ত। গবেষণা বা তথ্যপ্রমাণের দ্বারা সেগুলো সমর্থিত নয় কিংবা সেগুলো আকাশকুসুুম যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত (আমি অবশ্য সংখ্যাত্মক দক্ষতার কথা বলছি না, যা ওয়াকিবহাল নাগরিক এবং ব্যক্তিগত আর্থিক সংস্থানের জন্য একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক নিয়মসূত্রের কথা বলছি)।
এই বিতর্কটা গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। গণিত শাস্ত্রকে বাধ্যতামূলক করা হলে আমরা তরুণ মেধাশক্তিকে আবিষ্কার করতে ও বিকশিত করে তুলতে পারব না। কঠোরতা বজায় রাখার স্বার্থে আমরা প্রকৃতপক্ষে আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতার ভা-ারকে নিঃশেষিত করে ফেলছি। আমি একথা বলছি একজন লেখক ও সমাজবিজ্ঞানী হিসাবে যার কাজ সংখ্যার ব্যবহারের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করে থাকে। আমার লক্ষ্য ছাত্রদের একটা কঠিন বিষয় থেকে রেহাই দেয়া নয় বরং মূল্যবান সম্পদকে ভ্রান্ত পথে চালিত করে আমরা যে বাস্তব সমস্যার জন্ম দিচ্ছি তার প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট করা।
গণিতের চাপ গোড়া থেকেই শুরু হয়ে যায়। আমাদের জাতির জন্য লজ্জার ব্যাপার হলো নবম গ্রেডের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি চারজনের একজন হাইস্কুলে পাঠ শেষ করতে ব্যর্থ হয়। সাউথ ক্যারোলিনায় ২০০৮ -০৯ সালে ৩৪ শতাংশ ফেল করেছে বলে গত বছর প্রকাশিত জাতীয় তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে। নেভাদায় ফেল করার হার ৪৫ শতাংশ। বেশিরভাগ শিক্ষক যাঁদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি তাঁরা একাডেমিক ক্ষেত্রে এই অকৃতকার্যতার একটা প্রধান কারণ হিসাবে এ্যালজেŸ্রা বা বীজগণিতের কথা উল্লেখ করেছেন।
টেলিশির দীর্ঘদিনের শিক্ষক শার্লি ব্যাগওয়েল হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে “সকল ছাত্র বীজগণিতে পারদর্শিতা অর্জন করবে বলে আশা করলে আরও বেশি ছাত্র লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়বে।” যারা স্কুলে থেকে যায় তাদের অনেক সময় এক্সিট এক্সামিনেশন বা বিশেষ টেস্ট পরীক্ষা দিতে হয়। এসব পরীক্ষার প্রায় সবটাতেই বীজগণিতের উপাদান থাকে। ওকলাহোমায় গত বছর পাস করতে পারেনি ৩৩ শতাংশ আর ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ৩৫ শতাংশ। বীজগণিত বিত্তহীন, বিত্তবান, কৃষ্ণাঙ্গ কি শ্বেতাঙ্গ সব ধরনের ছাত্রের কাছে এক ক্লেশকর বাধা। নিউ মেক্সিকোয় ৪৩ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ছাত্রের অবস্থান ‘দক্ষতার’ নিচে। আর টেনিশিতে এই হার ৩৯ শতাংশ। এমনকি ভাল আর্থিক সাহায্য সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলগুলোয় অন্যান্য বিষয়ে মেধাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রী থাকলেও দেখা গেছে তারা বীজগণিতে আটকে যাচ্ছে। ক্যালকুলাস ও ট্রিগোনোমিট্রির কথা না হয় না-ই বলা হলো।
ক্যালিফোর্নিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় শুধু সেই ছাত্রের ভর্তির আবেদনপত্র বিবেচনায় নেয়া হয় যাদের তিন বছর গণিত বিষয়টি ছিল। এভাবে যারা কলা বা ইতিহাসের মতো ক্ষেত্রে চমৎকারিত্বের পরিচয় দিতে পারত তাদের অনেককে বাদ দেয়া হয়। কমিউনিটি কলেজের ছাত্ররাও গণিতের একই রকম অচলায়তনের সম্মুখীন হয়।
স্কুলগুলোর ওপর দ্বিবার্ষিক এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে স্কুলে ভর্তি হওয়া যেসব ছাত্রকে বীজগণিত নিতে হয়েছে তাদের এক-চতুর্থাংশেরও কম বীজগণিত ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়েছে।
এ্যাপালাচিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটির বারবারা বর্ণহাম বলেছেন, এমন অনেক ছাত্র আছে যারা এসব কোর্স তিনবার, চারবার, পাঁচবার করেছে। কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত পাস করলেও অনেকেই বাদ পড়ে যায়।
ড্রপআউটের আরেক পরিসংখ্যান দেখলে সমান সমবেদনার কারণ ঘটবে। উচ্চশিক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া সকল ছাত্রছাত্রীর মধ্যে শতকরা মাত্র ৫৮ জন স্নাতক ডিগ্রী লাভ করতে সক্ষম হয়। তাদের স্মাতক হওয়ার পথে মূল অন্তরায় নবীনদের গণিত। আমি ১৯৭১ সাল থেকে নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছি। সেখানে দেখেছি যে, ৫৭ শতাংশ ছাত্র বাধ্যতামূলক বীজগণিত কোর্স পাস করতে পারেনি। একটি ফ্যাকাল্টি রিপোর্টের নিরানন্দ অভিমত হলোÑ সকল পর্যায়ে গণিতে অর্কতকার্যতা অন্য যেকোন একাডেমিক বিষয়ের চেয়ে সামর্থ্যে বা ক্ষমতার ওপর অধিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দেখা গেছে যে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে গণিতে এফ ও ডি গ্রেড পাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা দ্বিগুণ।
গ্রেড উত্তীর্ণ হলেই তা যথেষ্ট নয়। অনেক কলেজ আছে যেগুলো গণিতে উঁচুমানের এক প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করে নিজেদের স্ট্যাটাস বাড়াতে চায়। কাজেই তারা স্যাটের গণিত অংশে ৭শ’ নম্বর চায়। ২০০৯ সালে এই উচ্চতা মাত্র ৯ শতাংশ ছেলে ও ৪ শতাংশ মেয়ে অর্জন করতে পেরেছিল।
একথা সত্য যে, ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও কানাডার ছাত্ররা অঙ্ক পরীক্ষায় ভাল করে থাকে। কিন্তু সেটা তাদের ক্লাসরুমে শেখা বীজগণিতের জন্য নয় রবং ধৈর্র্য ও অধ্যবসায়ের জন্য। শেষের গুণ দুটোর জন্য তারা ভাল চাকরিতে ঠাঁই পেয়ে যায়। এটাও পরিষ্কার নয় যে, চাকরিতে আমাদের যে পরিমাণাত্মক বিচার-বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন হয় তার সঙ্গে ক্লাসরুমে শেখা অঙ্কের কোন সম্পর্ক আছে কিনা। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষা মনস্তত্ত্ববিদ জন পি স্মিথ গণিত শিক্ষার ওপর গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন যে কর্মক্ষেত্রে গাণিতিক যুক্তি ও বিচারবিশ্লেষণ স্কুলে শেখা গাণিতিক পরিভাষা থেকে লক্ষণীয়ভাবে আলাদা। এমনকি যেসব চাকরি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি প্রকৌশল ও গণিত এই চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল সেখানেও লোক নিয়োগ করার পর যে ধরনের কম্পিউটেশনের প্রয়োজন সেটিসহ পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আমি পুরোপুরি একমত যে, একটা উন্নত শিল্প অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার জন্য হাইটেক জ্ঞানের প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলে যদি আমরা বিশ্বাস করি যে সমাধানটা বহুলাংশে একাডেমিক; তাহলে আমরা নিজেদেরকে প্রতারিত করছি।
একজন সন্দেহবাদী যুক্তি দিতে পারেন যে যদি আমাদের গণিত শিক্ষা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে নিরুৎসাহিত করে থাকে তারপরও খোদ গণিত শাস্ত্রকে দোষ দেয়া যায় না। এই শাস্ত্রটি কি আমাদের শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয় যা পরিমাণাত্মক হাতিয়ার যোগাচ্ছে এবং বিশেষ করে আমাদের হাইটেক যুগের অপরিহার্য ধারণাত্মক ক্ষমতা ও সামর্থ্যকে শাণিত করে তুলছে? (চলবে)
No comments