পবিত্র কোরআনের আলো-বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্টদের স্বরূপ

১৭। মাছালুহুম কামাছালিল লাযিস তাওক্বাদা না-রান; ফালাম্মা-আদ্বাআত মা হাওলাহু যাহাবাল্লাহু বিনুুরিহিম ওয়া তারাকাহুম ফি জুলুমাতিল লা-ইউবসিরুন। ১৮। ছুম্মুম বুকমুন উমইউন ফাহুম লা-ইয়ারজিউন। ১৯। আওকাছ্বায়্যিবিম মিনাছ ছামায়ী ফীহি জুলুমাতুওঁয়া রা'দুওঁয়াবারকুন; ইয়াজআলুনা আছ্বাবিআহুম ফী আ-যানিহিম মিনাছ্বাওয়ায়িকি্ব হাযারাল মাউতি, ওয়াল্লাহু মুহিতুম বিল কাফিরিন।


২০। ইয়াকাদুল বারক্বু ইয়াখত্বাফু আবছ্বারাহুম; কুল্লামা-আদ্বায়ালাহুম মাশাও ফিহি; ওয়া ইযা আজলামা আলাইহিম ক্বা-মু; ওয়া লাও শা-আল্লাহু লাহাযাবা বিছামইহিম ওয়া আবছ্বারিহিম; ইন্নাল্লাহা আ'লা কুলি্ল শাইয়িন ক্বাদীর।
[সুরা বাক্বারা, আয়াত ১৭-২০]

অনুবাদ :
১৭। এদের উদাহরণ হচ্ছে সেই ব্যক্তির মতো, যে আগুন জ্বালাতে চাইল, যখন তা তার সামনে আলোকোজ্জ্বল করে দিল, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের আলোটুকু ছিনিয়ে নিলেন এবং তাদের এমন অন্ধকারে ফেলে রাখলেন যে তারা কিছুই দেখতে পেল না।
১৮। এরা (তাদের অন্তর) বধির, অন্ধ ও মূক। অতএব এসব লোক ফিরে আসবে না।
১৯। অথবা এদের উদাহরণ এমন অবস্থা দিয়ে বর্ণনা করা যায় যে আসমান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির মধ্যে এরা। মাঝে রয়েছে অন্ধকার, মেঘের গর্জন ও বিদ্যুতের চমক। বিদ্যুতের গর্জন ও মৃত্যুর ভয়ে এরা নিজেদের কানে আঙুল ঢুকিয়ে রাখে, আল্লাহ তায়ালা কাফিরদের সব দিক থেকে ঘিরে রেখেছেন।
২০। মনে হয়, এখনই বিদ্যুৎ এদের চোখকে নিষ্প্রভ করে দেবে; আল্লাহ তায়ালা যখন এদের জন্য একটু আলো জ্বালিয়ে দেন তখন এরা তার মধ্যে চলতে থাকে, আবার যখন তিনি তাদের ওপর অন্ধকার চাপিয়ে দেন তখন এরা দাঁড়িয়ে যায়, অথচ আল্লাহ তায়ালা চাইলে সহজেই তাদের শোনার ও দেখার ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে পারতেন; নিশ্চয়ই তিনি সর্বশক্তিমান।

ব্যাখ্যা :
মক্কার মুশরিক কোরাইশরা যখন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সত্যের বাণী এবং তাঁর নবুয়ত নিয়ে চরম বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন উপরোক্ত আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে। এখানে উদাহরণ দিয়ে তাদের অবস্থা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। উদাহরণগুলো অত্যন্ত সহজ এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাপ্রসূত। বলা হয়েছে, এদের উদাহরণ ওই সব লোকের মতো, যারা অন্ধকারে আগুন জ্বালাতে চাইল। তাদের সামনে হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল। এরপর আল্লাহর ইচ্ছায় আলোটা নিভে গেল। এরা অন্ধকারে পড়ে রইল, কিছুই দেখতে পেল না। আল্লাহর কোরআন এবং রাসুল (সা.)-এর হেদায়েত অনুরূপভাবেই মক্কাবাসীর কাছে ক্ষণিকের আলোর ঝলকানির মতোই এলো। বিভ্রান্তরা যেহেতু এটা গ্রহণ করতে চাইল না, তাই তারা অন্ধকারেই পড়ে রইল। তারা সত্যকে দেখতে পেল না। তাদের চোখ, কান, মুখ, জাগতিক জ্ঞান-বুদ্ধি_সবই আছে; কিন্তু প্রকৃত অর্থে এরা বধির, অন্ধ ও মূক। এরা এখান থেকে ফিরে আসতে পারবে না। এখানেও আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত দেননি, বরং তাদের বিভ্রান্তি ও অপকর্মের পরিণতির কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এখানে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্টদের ব্যাপারে আরো দুটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ দুটি আয়াতের মূল বর্ণনায়ই বেশ জীবনঘনিষ্ঠ ও বাস্তবতাপ্রসূত। ১৯ ও ২০ নম্বর আয়াতে উদাহরণ দুটিকে আয়াতের মূল বর্ণনায়ই বেশ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্টদের সত্যের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য আল্লাহ তায়ালা এভাবে মানুষের উপলব্ধিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.