অভিমতঃ যানজট নিরসনে প্রয়োজন রাজধানী বিকেন্দ্রীকরণ by মোহাম্মদ সদরুল আমীন রাশেদ
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ এবং ঢাকা বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ মেগাসিটি। বর্তমানে ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা প্রায় সোয়া এক কোটি। প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ জীবিকা অন্বেষণের তাগিদে এখানে এসে ভিড় জমাচ্ছে।
দেশের অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বড় বড় হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানার হেড কোয়ার্টার রাজধানীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ঢাকা শহরে তিল ধারণের জায়গাটুকুও যেন নেই। রাজধানীমুখী এ প্রবণতার কারণে এখানকার যানজটের অবস্থা সবারই জানা। দুর্বিষহ যানজট ও ঘনবসতির কারণে ঢাকা শহরে বসবাস করা আজ দায় হয়ে পড়েছে। যানজটের কবলে পড়ে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রতিটি সৃজনশীল মানুষের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হচ্ছে। ওভারব্রীজ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস তৈরি এবং রিকশা চলাচল বন্ধ করেও তেমন সফলতা আসেনি। সামান্য কাজের জন্য ঘর থেকে বেরুলেই যেন দিন শেষ হয়ে যায় যানজটে আটকা পড়ে। সঠিক সময়ে রওয়ানা দিয়েও সঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যমান যানবাহনের পাশাপাশি প্রতিদিন কমপক্ষে আরও শতাধিক নতুন গাড়ি নেমে আসছে ঢাকার রাস্তায়।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে সবকিছু রাজধানী নয়াদিল্লিকেন্দ্রিক গড়ে ওঠেনি বরং মুম্বাই, চেন্নাই, আগ্রা, কলকাতা, লক্ষ্মৌ, হায়দারাবাদ, কানপুর ও ব্যাঙ্গালোরে বিকেন্দ্রিভূতভাবে গড়ে উঠেছে। পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে যেসব দেশের রাজধানী অপেক্ষা অন্যান্য শহরের গুরুত্ব অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের—নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া ভার্জিনিয়া, টেক্সাস, শিকাগো, সানফ্রান্সিসকো, ফিলাডেলফিয়া, নিউ অরলিন্স, নিউ জার্সি, যুক্তরাজ্যের—ম্যানচেস্টার, গ্লাসগো, লিভারপুল, ব্রিস্টন, ব্রিস্টলি, জাপানের—ওসাকা, ইয়াকোহোমা, পাকিস্তানের—করাচি, লাহোর, কোয়েটা, পেশোয়ার, চীনের—সাংহাই, ক্যান্টন, কানাডার—কলম্বিয়া, কুইবেক, টরেন্টো, সেন্ট জর্জস, অস্ট্রেলিয়ার—সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন ও ডারউইন ইত্যাদি শহরের নাম বলা যেতে পারে। আমরা কি ভেবে দেখেছি অফিসে আসা-যাওয়াতে যদি দুই ঘণ্টা করে চার ঘণ্টা সময় যানজটের কারণে নষ্ট হয় তবে জাতি হিসেবে আমরা জীবনের কত শ্রমঘণ্টা সোনালি সময় অপচয় করছি। অন্যদিকে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে রাজধানীর প্রধান কয়েকটি সড়ক ছাড়া অধিকাংশ রাস্তারই বেহাল দশা। খানাখন্দে ভরপুর রাস্তায় যানজটে নাকাল হয়ে পড়ে মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষসহ সবাই। সামান্য কাজের জন্যও বাসা থেকে বেরুলে কাজ সেরে বাসায় ফিরতে দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জনসংখ্যাধিক্যের ফলে যথাসময়ে ময়লা-আবর্জনা ও পয়ঃনিষ্কাশন করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বাড়তি জনসংখ্যার বাসস্থানের জন্য অপরিকল্পিতভাবে দালানকোঠা নির্মাণের ফলে ঢাকা শহর ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আবার ঘনবসতির ফলে এখানে বাসা ভাড়ার দৌরাত্ম্য তো বেড়েই চলেছে। অন্যান্য জেলা শহর অপেক্ষা এখানকার বাসা ভাড়া দুই থেকে দশগুণ পর্যন্ত বেশি। ফলে ঢাকার জনগণের উপার্জনের টাকা ঢাকাতেই থেকে যাচ্ছে এবং গ্রামের পরিবার-পরিজনরা বঞ্চিত হচ্ছে। রাজধানীর নিউমার্কেট, গুলিস্তান, মৌচাক, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী ও পুরাতন ঢাকাসহ বেশিরভাগ এলাকায়ই সারা বছরই ঈদের বাজারের মতো ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এ্যম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো যানজটের কারণে সঠিক সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে চরম বেগ পেতে হয়। মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের জন্য যানবাহনে ওঠা বেগতিক হয়ে পড়ে। মোট কথা হলো এই সিটিতে বসবাস করা আজ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে রাজধানীর জনসংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে এনে যানজট নিরসন করা হলে ঢাকা অবশ্যই বিশ্বের একটি স্বাস্থ্যসম্মত অত্যাধুনিক মেগাসিটির মর্যাদা লাভ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস আশুলিয়ায় করার অনুমোদন দিয়ে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন। পর্যায়ক্রমে যদি এভাবে রাজধানী থেকে সচিবালয়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিল্পকারখানাসমূহ নিকটবর্তী স্থানে বা জেলায় (যেমন গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, সাভার) স্থানান্তরিত করার সাহসী পদক্ষেপ নেয়া হয় তবেই কেবল জনস্রোতের ঢাকামুখী হওয়া রোধ করা সম্ভব হবে। জেলা পর্যায়ে বড়মানের হাসপাতাল ও নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যাতে করে সর্বোচ্চ চিকিত্সা সেবা গ্রহণ ও নিয়োগ পরীক্ষাসমূহ জেলা শহর থেকেই নেয়া যায়। থানা ও জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিল্পকারখানা স্থাপন করা হলে দেশের সুষম উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। এমতাবস্থায় রাজধানী বিকেন্দ্রিকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে।
মোহাম্মদ সদরুল আমীন রাশেদ
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে সবকিছু রাজধানী নয়াদিল্লিকেন্দ্রিক গড়ে ওঠেনি বরং মুম্বাই, চেন্নাই, আগ্রা, কলকাতা, লক্ষ্মৌ, হায়দারাবাদ, কানপুর ও ব্যাঙ্গালোরে বিকেন্দ্রিভূতভাবে গড়ে উঠেছে। পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে যেসব দেশের রাজধানী অপেক্ষা অন্যান্য শহরের গুরুত্ব অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের—নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া ভার্জিনিয়া, টেক্সাস, শিকাগো, সানফ্রান্সিসকো, ফিলাডেলফিয়া, নিউ অরলিন্স, নিউ জার্সি, যুক্তরাজ্যের—ম্যানচেস্টার, গ্লাসগো, লিভারপুল, ব্রিস্টন, ব্রিস্টলি, জাপানের—ওসাকা, ইয়াকোহোমা, পাকিস্তানের—করাচি, লাহোর, কোয়েটা, পেশোয়ার, চীনের—সাংহাই, ক্যান্টন, কানাডার—কলম্বিয়া, কুইবেক, টরেন্টো, সেন্ট জর্জস, অস্ট্রেলিয়ার—সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন ও ডারউইন ইত্যাদি শহরের নাম বলা যেতে পারে। আমরা কি ভেবে দেখেছি অফিসে আসা-যাওয়াতে যদি দুই ঘণ্টা করে চার ঘণ্টা সময় যানজটের কারণে নষ্ট হয় তবে জাতি হিসেবে আমরা জীবনের কত শ্রমঘণ্টা সোনালি সময় অপচয় করছি। অন্যদিকে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে রাজধানীর প্রধান কয়েকটি সড়ক ছাড়া অধিকাংশ রাস্তারই বেহাল দশা। খানাখন্দে ভরপুর রাস্তায় যানজটে নাকাল হয়ে পড়ে মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষসহ সবাই। সামান্য কাজের জন্যও বাসা থেকে বেরুলে কাজ সেরে বাসায় ফিরতে দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জনসংখ্যাধিক্যের ফলে যথাসময়ে ময়লা-আবর্জনা ও পয়ঃনিষ্কাশন করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বাড়তি জনসংখ্যার বাসস্থানের জন্য অপরিকল্পিতভাবে দালানকোঠা নির্মাণের ফলে ঢাকা শহর ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আবার ঘনবসতির ফলে এখানে বাসা ভাড়ার দৌরাত্ম্য তো বেড়েই চলেছে। অন্যান্য জেলা শহর অপেক্ষা এখানকার বাসা ভাড়া দুই থেকে দশগুণ পর্যন্ত বেশি। ফলে ঢাকার জনগণের উপার্জনের টাকা ঢাকাতেই থেকে যাচ্ছে এবং গ্রামের পরিবার-পরিজনরা বঞ্চিত হচ্ছে। রাজধানীর নিউমার্কেট, গুলিস্তান, মৌচাক, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী ও পুরাতন ঢাকাসহ বেশিরভাগ এলাকায়ই সারা বছরই ঈদের বাজারের মতো ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এ্যম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো যানজটের কারণে সঠিক সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে চরম বেগ পেতে হয়। মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষের জন্য যানবাহনে ওঠা বেগতিক হয়ে পড়ে। মোট কথা হলো এই সিটিতে বসবাস করা আজ দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে রাজধানীর জনসংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে এনে যানজট নিরসন করা হলে ঢাকা অবশ্যই বিশ্বের একটি স্বাস্থ্যসম্মত অত্যাধুনিক মেগাসিটির মর্যাদা লাভ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস আশুলিয়ায় করার অনুমোদন দিয়ে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন। পর্যায়ক্রমে যদি এভাবে রাজধানী থেকে সচিবালয়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিল্পকারখানাসমূহ নিকটবর্তী স্থানে বা জেলায় (যেমন গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, সাভার) স্থানান্তরিত করার সাহসী পদক্ষেপ নেয়া হয় তবেই কেবল জনস্রোতের ঢাকামুখী হওয়া রোধ করা সম্ভব হবে। জেলা পর্যায়ে বড়মানের হাসপাতাল ও নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যাতে করে সর্বোচ্চ চিকিত্সা সেবা গ্রহণ ও নিয়োগ পরীক্ষাসমূহ জেলা শহর থেকেই নেয়া যায়। থানা ও জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিল্পকারখানা স্থাপন করা হলে দেশের সুষম উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। এমতাবস্থায় রাজধানী বিকেন্দ্রিকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে।
মোহাম্মদ সদরুল আমীন রাশেদ
No comments