অশান্ত রাঙামাটিঃ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাস্তবসম্মত উদ্যোগ চাই
রাঙামাটির সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়িতে শনিবারের সংঘর্ষে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ২ উপজাতি জীবন হারিয়েছেন। বাঙালি ও উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষ থামাতে আসা সেনাসদস্যদের ওপর উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হামলার ফলে গোলাগুলির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বেশি দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে।
মাসাধিককাল ধরে স্থানীয় ভূমিবিরোধ, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পাহাড়িদের বাঙালি খেদাও আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট বাঙালি-উপজাতি বিরোধ শুক্রবারের এক সামান্য ঘটনায় দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। উভয়পক্ষের ১১টি গ্রামের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হয়। লুটপাট করা হয় সবকিছু। বাঘাইহাট, গঙ্গারাম, সীমানাছড়ির প্রায় ছয় কিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের জন্য বাঙালি ও উপজাতি উভয়পক্ষ একে অপরকে দায়ী করেছে।
বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হলেও সেখানকার অধিবাসীদের জীবন থেকে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে বহু আগে। অশান্তির আগুনে জ্বলছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। পাকিস্তান সৃষ্টির সময় শুরু হলেও কাপ্তাই বিদ্যুত্ প্রকল্পই অশান্তির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাঁধ নির্মাণের ফলে এক বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে হাজার হাজার উপজাতিকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করে। পাকিস্তান সরকার তাদের প্রতি ন্যায়বিচার দেখিয়েছে এটা কোনোভাবেই বলা যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চাকমা রাজা পাকিস্তানের পক্ষ নিলে সেখানে নতুন করে অশান্তি দেখা দেয়। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব উপজাতিদের বাঙালি হতে বললে তার তীব্র বিরোধিতা দেখা দেয়। তত্কালীন উপজাতীয় গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র লারমার নেতৃত্বেই পাহাড়িদের জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু হয়। গড়ে ওঠে শান্তিবাহিনী। ভারতের প্রত্যক্ষ আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শুরু হয় শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রাম। সংঘাত, সংঘর্ষ, রক্তপাত তখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছিল পার্বত্য অঞ্চলে। পাশাপাশি শুরু হয় শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা। খালেদা জিয়ার প্রথম আমলে শান্তি আলোচনার ফল পাওয়া যেতে থাকে। তখনই প্রথম উপজাতীয় বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ শুরু হয়। পরবর্তী শেখ হাসিনা সরকার আনুষ্ঠানিক ‘শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষর করে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিদার হলেও বাস্তবে মোটেই শান্তি আসেনি। ঐতিহাসিকভাবে সেখানকার আর্থ-সামাজিক ও ভূমিব্যবস্থার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন সরকারের চাপিয়ে দেয়া সমাধান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে অস্বীকার করা যাবে না। সর্বশেষ ‘শান্তিচুক্তি’তে বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের উপেক্ষা করাই বর্তমান অশান্তির একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অশান্তি যেন বাড়তে শুরু করে। ‘শান্তিচুক্তি’ বাস্তবায়নের নামে বিভিন্ন স্থান থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের মদতদান ও বাঙালিদের উচ্ছেদের ঘটনা থেকেই আবারও পার্বত্য অঞ্চল সংঘাতময় হয়ে উঠেছে।
এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থা এবং মিশনারিদের সন্দেহজনক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। শনিবারের সংঘর্ষের পেছনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশনে’র হাত রয়েছে বলে প্রকাশ্যেই অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ‘শান্তিচুক্তি’র পক্ষে-বিপক্ষে পাহাড়ি জনগণের বিভক্তি খুবই স্পষ্ট। জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং ইউপিডিএফের বিরোধ প্রায়ই সংঘাত উস্কে দেয়। এর উপর রয়েছে জাতীয়ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা। শাসক দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপির প্রভাব সর্বত্র দৃশ্যমান। এ অবস্থায় পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি এবং বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে এগুনো হবে বাস্তবসম্মত। পাহাড়ি-বাঙালি সব পক্ষ এবং সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠান পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সুগম করতে পারে। তবে অতীতের মতো সেখানকার স্থানীয় বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যকে গুরুত্বসহ বিবেচনায় আনতে হবে, পাশাপাশি বাঙালিদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সব আয়োজনই নিষম্ফল হবে জোর দিয়ে বলা যায়।
বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হলেও সেখানকার অধিবাসীদের জীবন থেকে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে বহু আগে। অশান্তির আগুনে জ্বলছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। পাকিস্তান সৃষ্টির সময় শুরু হলেও কাপ্তাই বিদ্যুত্ প্রকল্পই অশান্তির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাঁধ নির্মাণের ফলে এক বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে হাজার হাজার উপজাতিকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করে। পাকিস্তান সরকার তাদের প্রতি ন্যায়বিচার দেখিয়েছে এটা কোনোভাবেই বলা যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চাকমা রাজা পাকিস্তানের পক্ষ নিলে সেখানে নতুন করে অশান্তি দেখা দেয়। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব উপজাতিদের বাঙালি হতে বললে তার তীব্র বিরোধিতা দেখা দেয়। তত্কালীন উপজাতীয় গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র লারমার নেতৃত্বেই পাহাড়িদের জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু হয়। গড়ে ওঠে শান্তিবাহিনী। ভারতের প্রত্যক্ষ আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শুরু হয় শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রাম। সংঘাত, সংঘর্ষ, রক্তপাত তখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছিল পার্বত্য অঞ্চলে। পাশাপাশি শুরু হয় শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা। খালেদা জিয়ার প্রথম আমলে শান্তি আলোচনার ফল পাওয়া যেতে থাকে। তখনই প্রথম উপজাতীয় বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণ শুরু হয়। পরবর্তী শেখ হাসিনা সরকার আনুষ্ঠানিক ‘শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষর করে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবিদার হলেও বাস্তবে মোটেই শান্তি আসেনি। ঐতিহাসিকভাবে সেখানকার আর্থ-সামাজিক ও ভূমিব্যবস্থার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন সরকারের চাপিয়ে দেয়া সমাধান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে অস্বীকার করা যাবে না। সর্বশেষ ‘শান্তিচুক্তি’তে বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের উপেক্ষা করাই বর্তমান অশান্তির একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অশান্তি যেন বাড়তে শুরু করে। ‘শান্তিচুক্তি’ বাস্তবায়নের নামে বিভিন্ন স্থান থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের মদতদান ও বাঙালিদের উচ্ছেদের ঘটনা থেকেই আবারও পার্বত্য অঞ্চল সংঘাতময় হয়ে উঠেছে।
এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থা এবং মিশনারিদের সন্দেহজনক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। শনিবারের সংঘর্ষের পেছনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশনে’র হাত রয়েছে বলে প্রকাশ্যেই অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে ‘শান্তিচুক্তি’র পক্ষে-বিপক্ষে পাহাড়ি জনগণের বিভক্তি খুবই স্পষ্ট। জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং ইউপিডিএফের বিরোধ প্রায়ই সংঘাত উস্কে দেয়। এর উপর রয়েছে জাতীয়ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা। শাসক দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপির প্রভাব সর্বত্র দৃশ্যমান। এ অবস্থায় পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি এবং বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে এগুনো হবে বাস্তবসম্মত। পাহাড়ি-বাঙালি সব পক্ষ এবং সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতিনিধি সমন্বয়ে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠান পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সুগম করতে পারে। তবে অতীতের মতো সেখানকার স্থানীয় বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্যকে গুরুত্বসহ বিবেচনায় আনতে হবে, পাশাপাশি বাঙালিদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সব আয়োজনই নিষম্ফল হবে জোর দিয়ে বলা যায়।
No comments