বিএনপি শ্রমিকদের হত্যা করে: প্রধানমন্ত্রী
ইকবাল আহমদ সরকার, টঙ্গী থেকে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রক্ত নেয়াই বিএনপি’র চরিত্র। হরতালেও পাঁচ জনকে খুন করেছে তারা। ’৭৫-এর পর দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে অনেক ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। দেশ ও মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিকভাবে চলবে। মে দিবসে মঙ্গলবার টঙ্গীর টেলিফোন শিল্প সংস্থার মাঠে শ্রমিক লীগ আয়োজিত শ্রমিক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী মহান মে দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এই দিনটি শ্রমিকদের। শহীদ শ্রমিকদের, বিশ্বের নিবেদিতপ্রাণ শ্রমিকদের। আমাদের সরকারের কাছে শ্রমিকদের কিছু চাইতে হয় না। শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষ দু’বেলা পেট পুরে খাবে এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হোক এটাই আমাদের লক্ষ্য। বতর্মান সরকারের আমলে শিল্পোন্নয়ন ও নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেই শ্রমিকদের বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। সরকার ৬৮ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ সরকারি। সরকার ২৭টি বন্ধ কারখানার মধ্যে ২৪টি চালু করেছে। বিএনিপি’র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্ত নেয়াই বিএনপি’র চরিত্র। হরতালেও পাঁচ জনকে হত্যা করেছে তারা। ঘুমন্ত পরিশ্রান্ত শ্রমিকদের গুলি করে হত্যা করে তারা। শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ঘটনা এবং ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করেন তিনি। হরতাল প্রসঙ্গে বিরোধী দলের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন করুন ভাল কিন্তু মানুষ পুড়িয়ে মারবেন কেন? একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে পুড়িয়ে মারে কি করে? উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যে হরতাল দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) চান না, আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখুক। সংবিধান সংশোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সংবিধান সংশোধন করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতেই ফিরিয়ে দিয়েছি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কমর্সূচি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার মিলে চালের কেজি ৪০ টাকায় নিয়ে গিয়েছিল, যা বর্তমানে ২৮ টাকায় চাল পাওয়া যাচ্ছে। শ্রমিকদের ছেলে-মেয়ের জন্য ওএমএস-এর মাধ্যমে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। ১০ টাকায় অ্যাকাউন্ট করার সুযোগ রয়েছে, বিদ্যুতে ২০ শতাংশ রেয়াত দেয়া হচ্ছে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম তিন হাজার টাকা মজুরি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি কল-কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে চালু করার আশ্বাসও দেন তিনি। জেলাবাসীর উদ্দেশে তিনি টেলিফোন শিল্প সংস্থার মাঠে স্টেডিয়াম নির্মাণ, গাজীপুরের হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি গাজীপুরকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা দেয়ার আশ্বাস দেন। সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে আরেকবার সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান। এ শ্রমিক সমাবেশে গাজীপুর জেলার সব এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দুপুর থেকেই মিছিল করে ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি অনেকে বাদক দলও নিয়ে আসতে থাকেন। বিকাল ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে পৌঁছার সময় বিশাল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। মাঠে জায়গা না পেয়ে অনেকে অবস্থান নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের ওপর। জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টারের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, গাজীপুরের সংসদ সদস্য রহমত আলী, আকম মোজাম্মেল হক, জাহিদ আহসান রাসেল, মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ।
No comments