নবীগঞ্জের ২টি চা বাগানে উৎপাদন বন্ধ
স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে: নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানীসহ কয়েকটি চা বাগানের উৎপাদন ১২ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বাগানের চা গাছগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া, একদিকে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের সহস্রাধিক চা শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। অন্যদিকে এ বছর কমপক্ষে ১ লাখ কেজি চা উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন বাগান কর্র্তৃপক্ষ। ১৯শে এপ্রিল রাত ১২টায় শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবলীলা। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিলাবৃষ্টির আঘাত। একটানা কয়েক ঘণ্টা পর রাত আড়াইটার দিকে ঝড়ের বেগ কমতে থাকে। এরই মধ্যে চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মৃণাল কান্তি দেবসহ শ্রমিক কলোনির ২০/৩০টি ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। গাছ ভেঙে ধসে পড়ে স্টাফদের ৩০/৪০টি ঘর। প্রায় অর্ধশত কাঁচাঘর সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে চা বাগানের সহস্রাধিক শেড ট্রি, ২/৩ শ’ রাবার গাছ, ৪/৫ শ’ কাঁঠাল ও কলাগাছ ভেঙে পড়ে। শুধু ভেঙেই পড়েনি। গাছগুলো চা বাগানের উপর ভেঙে পড়াতে চা গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়, কমপক্ষে আড়াইশ’ গ্রাম ও আধাকেজি ওজনের শিলাবৃষ্টিতে বাগানের নার্সারি সম্পূর্ণ রূপে বিনষ্ট হয়। নার্সারির এ অবস্থা থেকে ফিরে আসতে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ মাস লাগবে। তাছাড়া, পূর্ণাঙ্গভাবে বাগানের স্বাভাবিক উৎপাদন শুরু হতে কমপক্ষে ৬ মাস প্রয়োজন হবে। বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঝড়ে নার্সারি বিনষ্ট হওয়াতে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তারা জানান, ২০১১ সালে যেখানে সাড়ে ৩ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, সেখানে এবার দুই/আড়াই লাখ কেজি চা পাতা উৎপাদন হতে পারে। এ ব্যাপারে বাড়ি-ঘর ধসে পড়া চা শ্রমিক সুভাষ মুণ্ড, জহর লাল, অচিন্ত বাগচির সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, ঝড়ে বাড়িগুলোকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। এখন খোলা আকাশের নিচে বাস করতে হচ্ছে। তারা জানায়, বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পেলে আমাদের বসবাসের সুযোগ নেই। রোববার সরজমিন ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানে গেলে দেখা যায়, চা বাগানের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। শ্রমিকরা বেকার অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। অনেকে ধসে পড়া বাড়িঘর মেরামত করছে। আবার কিছু শ্রমিক চা বাগানে ভেঙে পড়া শেড ট্রি ও অন্যান্য গাছ কেটে পরিষ্কার করছে। এ ব্যাপারে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের ব্যবস্থাপক ফখরুল ইসলাম জানান, চা বাগানের ৩০ বছরের চাকরি জীবনে এতো বড় প্রলয়ঙ্করী ঝড় তিনি দেখেননি। আর এ ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এ দু’টি চা বাগান। এতে অনেক শ্রমিক বেকার হবে। চা উৎপাদন চরমভাবে হ্রাস পাবে। বাগানের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ইমাম ও বাওয়ানীতেই শুধু ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া বৃন্দাবন, মধুপুর চা বাগানেও ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
No comments