সরকারি কলেজে ৪০০০ শিক্ষকের পদ শূন্য
সোলায়মান তুষার: সরকারি কলেজে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। জেলা পর্যায়ের প্রায় ১০০ সরকারি কলেজে শিক্ষক-স্বল্পতা চলছে। এ কারণে সরকারি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এসব কলেজের প্রায় ১৫০টি বিভাগ একেবারেই শিক্ষকশূন্য। অবস্থা এত ভয়াবহ যে, উপজেলা পর্যায়ে কোন কোন কলেজে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে পুরো বিভাগ চলছে। একমাত্র শিক্ষক পালা করে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন। সরকারি কলেজে শিক্ষক সঙ্কটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররাই শুধু নন, সরকারি কলেজের শিক্ষকরাও চাকরির জন্য ঢাকা ছাড়তে নারাজ। বছরের পর ঢাকায় সরকারি কলেজে চাকরি করছেন প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষক। এর বাইরেও অনেক শিক্ষক রয়েছেন যারা শিক্ষকতার চেয়ে শিক্ষা প্রশাসনে সম্পৃক্ত হওয়ার পর আর শিক্ষকতায় ফিরে যেতে চাইছেন না। এরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমী (নায়েম), পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), শিক্ষা বোর্ডগুলোয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে প্রেষণে ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সংযুক্তি হিসেবে রয়েছেন। এ ছাড়াও রয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে শিক্ষকরা। মাউশি সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় অবস্থানরতদের কারও স্বামী ঢাকায় অন্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন। কারও স্ত্রী ঢাকায় চাকরিরত অন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে একসঙ্গে থাকার জন্য এসব শিক্ষক-শিক্ষিকা মন্ত্রণালয়ে ও মাউশি’তে বছরের পর বছর ওএসডি হয়ে ঢাকায় পড়ে আছেন। কলেজে কোন ক্লাস নেন না। প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন। যারা ঢাকার বাইরে বদলি হতে অনিচ্ছুক রাজধানীর ১০টি সরকারি কলেজে একই পদে শিক্ষকতা করছেন বছরের পর বছর। ঢাকার বাইরে বদলির আদেশ দেয়া হলেও এ সব শিক্ষক নানা কৌশলে রাজধানীতেই থাকছেন। তারা সব সরকারের আমলেই তদবিরের জোরে এবং অন্যান্য সুযোগ নিয়ে ঢাকায় রয়ে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে- অনেক সময় শিক্ষকরা ঢাকায় আসার জন্য রাজধানীর সরকারি কলেজ, এনসিটিবি, সাধারণ, মাদ্রাাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তর ও দপ্তরকে টার্গেট করে মন্ত্রণালয়ে ও মাউশিতে তদবির করেন। এজন্য অনেক সময় শিক্ষকরা তাদের বিদ্যমান পদের চেয়ে নিম্নপদে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর যেখানে সুযোগ পান বা পদ খালি পান সেখানে যোগ দেন। সহযোগী অধ্যাপক এনসিটিবি’তে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে ডেপুটেশনে আছেন প্রায় ১০ জনের বেশি। যদিও একজন সহযোগী অধ্যাপক গবেষণা কর্মকর্তার অনেক উপরের পদ। মাউশি’র একজন কর্মকর্তা জানান, শিক্ষকরা সাধারণত গ্রামে থাকতে চান না। রাজধানী, বিভাগ এবং জেলা শহরের নামী সরকারি কলেজে আসার জন্য ওএসডি/ডেপুটেশন ছাড়াও বদলির তদবিরে ব্যস্ত থাকেন তারা। এর মধ্যে ঢাকায় থাকার প্রবণতা বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি। জীবন যাপনের সুবিধা এবং প্রাইভেট কোচিংয়ের কারণে অনেক শিক্ষক গ্রামের কলেজে যেতে চান না। তীব্র শিক্ষক সঙ্কটের কারণে শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে সরকারি কলেজগুলো ছিটকে পড়ছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও মাউশি’র পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়ার কথা বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে শোনা গেলেও তার বাস্তবায়ন নেই। রাজনৈতিক চাপ ও তদবিরের কারণে তা ভাটা পড়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান-উর-রশিদ বলেন, দেশের সরকারি কলেজগুলোতে প্রায় চার হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। তিনি বলেন, বছরের পর বছর শিক্ষকরা ঢাকায় বিভিন্ন উপায়ে থাকছেন।
তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, তীব্র শিক্ষক সঙ্কটে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, তীব্র শিক্ষক সঙ্কটে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
No comments