চালের দাম নিয়ে দুর্ভাবনা বাড়ছেঃ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে
বাজারে চালের দাম বাড়ছে। মোটা চালের দাম ৩০ টাকা ছুঁয়েছে। সরু ও মাঝারি মানের চালের দামও জরুরি অবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। সরু চাল কেজিপ্রতি ৪৫-৪৬ টাকা ও মাঝারি চালের দাম ৩৬-৩৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির হিসাবে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে সরু চালের ক্ষেত্রে ৬.৫৮ শতাংশ এবং মাঝারি চালের ক্ষেত্রে ৯.৩৮ শতাংশ। গত এক বছরে এ বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ১৪.০৮ শতাংশ এবং ১৬.৬৭ শতাংশ। ধানের গোলা বলে পরিচিত উত্তরাঞ্চল থেকেও ধান-চালের দাম বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যমন্ত্রী একদিনের ব্যবধানে দু’ধরনের মন্তব্য করেছেন। গত বুধবার তিনি বাজারে চালের দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসায়ীরা বরাবরই কারসাজি করে দাম বাড়ায়। অথচ এর একদিন আগেই, মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, দাম বাড়ার পেছনে কোনো কারসাজি নেই। সরবরাহ সঙ্কটের কারণে চালের দাম বাড়ছে। বাজারের অস্থিরতার মতোই খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যও বেশ অস্থির হয়ে উঠেছে, দেখাই যাচ্ছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের দুর্ভাবনা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
দেশে বছরে চালের চাহিদা কমবেশি ২ কোটি ৭০ লাখ টনের মতো। এবারে আমনের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে, দাবি সরকারের। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার টন। অন্যদিকে গত মৌসুমে বোরো চাল উত্পাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮৫ লাখ টন। অর্থাত্ চাহিদার চেয়ে বেশি চালই দেশে উত্পাদিত হয়েছে। তারপরও বাজারে চালের দাম বাড়ছে কেন? চাল উত্পাদনের হিসাব যদি অসত্য না হয়ে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বলে কিছু নেই এবং সেখানে সরকারের নজরদারিও অত্যন্ত দুর্বল। তাই ব্যবসায়ীদের কারসাজি হয়ে উঠেছে বাধাহীন।
তবে ব্যবসায়ীদের কারসাজির অভিযোগের পেছনে যুক্তি আছে। দেশে বিনিয়োগ মন্দার কারণে ব্যাংকগুলোতে টাকার পাহাড় জমে ওঠায় চাল ব্যবসায়ী ও মিলাররা সীমাহীন ব্যাংক ঋণ পেয়েছে। ১৩ শতাংশ হার সুদে ঋণ নিয়ে ধান-চাল মজুত করে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছে তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ বস্তা পর্যন্ত চাল মজুতের খবর পত্রিকান্তরে জানা গেছে। দেশের ধান উত্পাদন এলাকাগুলোর সীমান্ত অঞ্চলে মাড়োয়ারিদের টাকায় ধান-চাল মজুতের রমরমা ব্যবসাও চলছে প্রকাশ্যে। তাছাড়া পরিবহন ব্যয়, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে নানা ধরনের মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের হাতে চালের মজুত নিয়ে যত কথা, বলা হোক না কেন, তা যে সন্তোষজনক নয়ই সেটি খাদ্যমন্ত্রীর কথা থেকে প্রকাশ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অতিশিগিগর চালের দাম কমানোর নির্দেশ দিলেও সরকারের কাছে যে পরিমাণ চাল মজুত আছে তা দিয়ে বাজারে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হলেও দাম কমানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। কারণ দাম বেশি হওয়ায় সরকারের নির্ধারিত মূল্যে আমন সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি। চলতি মৌসুমে বোরো উত্পাদন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উত্পাদনে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে এখনই সংশয় প্রকাশ করেছে খোদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। আবহাওয়াগত কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় বীজ সঙ্কট, সেচ সঙ্কট প্রভৃতি কারণে মাঠ পর্যায়ে বোরো আবাদ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে যাবে বলে ধারণা করা যায়। ধান উত্পাদনে শীর্ষে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলেও কম সেচ লাগে এমন ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষক। ধান উত্পাদনের এমন চিত্র খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের দুর্ভাবনা বাড়িয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির দরপত্র আহ্বান করার কথা জানা গেলেও বাজারে এর প্রভাব নিয়ে আশাবাদী না হওয়াই ভালো। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কথা অনেক দিন থেকেই শোনা যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় আমদানি করা চালের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকার কম হবে না বলেই সংশ্লিষ্টদের ধারণা। খোলাবাজারে বিক্রি করা ওএমএসের চাল মান খারাপের কারণে মানুষ কিনছে না। ফলে এর প্রভাব আশানুরূপ হবে না। বোরো ধান ওঠার এখনও মাসদুয়েক বাকি। এ সময়কালে জরুরি ভিত্তিতে মজুতবিরোধী ব্যবস্থা নিয়ে চালের দাম স্থিতিশীল রাখা না গেলে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিই অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে—এমন আশঙ্কা উড়িয়ে না দেয়াই সঠিক হবে।
দেশে বছরে চালের চাহিদা কমবেশি ২ কোটি ৭০ লাখ টনের মতো। এবারে আমনের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হয়েছে, দাবি সরকারের। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার টন। অন্যদিকে গত মৌসুমে বোরো চাল উত্পাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮৫ লাখ টন। অর্থাত্ চাহিদার চেয়ে বেশি চালই দেশে উত্পাদিত হয়েছে। তারপরও বাজারে চালের দাম বাড়ছে কেন? চাল উত্পাদনের হিসাব যদি অসত্য না হয়ে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বলে কিছু নেই এবং সেখানে সরকারের নজরদারিও অত্যন্ত দুর্বল। তাই ব্যবসায়ীদের কারসাজি হয়ে উঠেছে বাধাহীন।
তবে ব্যবসায়ীদের কারসাজির অভিযোগের পেছনে যুক্তি আছে। দেশে বিনিয়োগ মন্দার কারণে ব্যাংকগুলোতে টাকার পাহাড় জমে ওঠায় চাল ব্যবসায়ী ও মিলাররা সীমাহীন ব্যাংক ঋণ পেয়েছে। ১৩ শতাংশ হার সুদে ঋণ নিয়ে ধান-চাল মজুত করে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছে তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ বস্তা পর্যন্ত চাল মজুতের খবর পত্রিকান্তরে জানা গেছে। দেশের ধান উত্পাদন এলাকাগুলোর সীমান্ত অঞ্চলে মাড়োয়ারিদের টাকায় ধান-চাল মজুতের রমরমা ব্যবসাও চলছে প্রকাশ্যে। তাছাড়া পরিবহন ব্যয়, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে নানা ধরনের মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের হাতে চালের মজুত নিয়ে যত কথা, বলা হোক না কেন, তা যে সন্তোষজনক নয়ই সেটি খাদ্যমন্ত্রীর কথা থেকে প্রকাশ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অতিশিগিগর চালের দাম কমানোর নির্দেশ দিলেও সরকারের কাছে যে পরিমাণ চাল মজুত আছে তা দিয়ে বাজারে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হলেও দাম কমানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। কারণ দাম বেশি হওয়ায় সরকারের নির্ধারিত মূল্যে আমন সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি। চলতি মৌসুমে বোরো উত্পাদন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উত্পাদনে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে এখনই সংশয় প্রকাশ করেছে খোদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। আবহাওয়াগত কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় বীজ সঙ্কট, সেচ সঙ্কট প্রভৃতি কারণে মাঠ পর্যায়ে বোরো আবাদ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে যাবে বলে ধারণা করা যায়। ধান উত্পাদনে শীর্ষে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলেও কম সেচ লাগে এমন ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষক। ধান উত্পাদনের এমন চিত্র খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের দুর্ভাবনা বাড়িয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির দরপত্র আহ্বান করার কথা জানা গেলেও বাজারে এর প্রভাব নিয়ে আশাবাদী না হওয়াই ভালো। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কথা অনেক দিন থেকেই শোনা যাচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় আমদানি করা চালের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকার কম হবে না বলেই সংশ্লিষ্টদের ধারণা। খোলাবাজারে বিক্রি করা ওএমএসের চাল মান খারাপের কারণে মানুষ কিনছে না। ফলে এর প্রভাব আশানুরূপ হবে না। বোরো ধান ওঠার এখনও মাসদুয়েক বাকি। এ সময়কালে জরুরি ভিত্তিতে মজুতবিরোধী ব্যবস্থা নিয়ে চালের দাম স্থিতিশীল রাখা না গেলে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিই অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে—এমন আশঙ্কা উড়িয়ে না দেয়াই সঠিক হবে।
No comments