দুই দিনে দুই বৈঠক-নেতাদের শাসালেন খালেদা জিয়া by মোশাররফ বাবলু
শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করার পর রাজপথে তাৎক্ষণিক আন্দোলন না হওয়ায় সিনিয়র নেতাদের শাসিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁদের শাসানোর পর 'তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই' বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
কেন রাজপথে আন্দোলন হয়নি- চেয়ারপারসনের ধমক খাওয়ার পর এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি নেতারা। মামলার পর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সিনিয়র নেতা ও দলীয় আইনজীবীদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার দুই দফা বৈঠকে এসব ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্র জানায়।
গতকাল বুধবার দুপুরে খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসভবনে এবং গত সোমবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতা ও আইনজীবীদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন। গতকাল হাইকোর্টে দলীয় নেতাদের জামিন না হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে পরবর্তী আইনি লড়াই কিভাবে চালানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ ১৮ দলীয় জোটের শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পরও রাজপথে কোনো ধরনের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ না হওয়ায় 'মামলা না খাওয়া' সিনিয়র নেতাদের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ হন চেয়ারপারসন।
আরো জানা যায়, গত সোমবার হরতাল শেষে রাতে গুলশানের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে উপস্থিত সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'আপনারা কী করছেন? এতজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর আপনাদের ভূমিকা কী? শুধু বৈঠক ও প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকা আর টিভি টক শোতে কথা বললেই আন্দোলন হয় না। আন্দোলন করতে গেলে রাজপথে নামতে হয়। সিনিয়র নেতাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজিরা দিতে হয়।' এ অবস্থায় বিএনপির চেয়ারপারসন 'দলের তৃণমূল নেতাদের ওপরই একমাত্র ভরসা'- এমন মন্তব্য করেন বলে জানা গেছে।
নেতারা ছত্রভঙ্গ : গত রবিবার রাতে বোমা বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। পুলিশি তল্লাশির কারণে রাতে বাসায় ফেরেন না কেউ। মাঠের আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। বেশির ভাগ নেতা গা ঢাকা দিয়েছেন। দলীয় অনুষ্ঠানেও তাঁদের দেখা যায় না। মধ্যম সারির নেতারাও ভীত-সন্ত্রস্ত।
এ অবস্থায় গতকালের বৈঠকে খালেদা জিয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের জামিনে বের করে আনা ও যেসব নেতা এখনো গ্রেপ্তার হননি, তাঁদের আগাম জামিন কিভাবে করা যায় এবং সরকারবিরোধী পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচির কৌশল কী হবে- এসব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর ওই দিন কিংবা পরের দিন রাজধানীর কোথাও কোনো ধরনের বিক্ষোভ ছিল না, প্রতিবাদ ছিল না। এ নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চেয়ারপারসন সিনিয়র নেতাদের ওপর মনোক্ষুণ্ন হতেই পারেন। কারণ দলের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি আছে বলেই এমনটা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নেতাদের জামিনের ব্যাপারে আবেদন করার পর আদালত ব্রিবতবোধ করেছেন। এর পরও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দলীয় আইনজীবীদের পরামর্শ দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাননি কি গ্রেপ্তারের ভয়ে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর নির্দেশ নিয়েই মহাসচিব সব কিছু করছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই মহাসচিব সামনে এগোতে চান। তাই আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। আদালত বিব্রতবোধ করেছেন, এর পরও আইনের প্রতি বিএনপির শ্রদ্ধা আছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সরকার ভুল করেছে। মূলত সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে লাগাতার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা থামাতেই এই বোমা বিস্ফোরণের নাটক সাজানো হয়েছে।'
চেয়ারপারসনের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে কী হয়েছে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ও সরকারের দুঃশাসনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মামলা হওয়ায় বিরোধী দলের আন্দোলন স্থবির হয়ে পড়বে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার কারণে আন্দোলন আরো বেগবান হবে। ভবিষ্যতে সেই পরিস্থিতি দেখতে পাবেন।
নগর বিএনপির এক নেতা বলেন, 'আমার বিরুদ্ধেও অনেক মামলা আছে। এরপরও আমাদের মাঠে থাকতে হয়। দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাঁদের খোঁজ আর মেলে না। সিনিয়র নেতাদের হরতালের দিন কিংবা অন্যান্য কর্মসূচির দিন অন্তত পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত থাকা উচিত। বিএনপি চেয়ারপারসন সিনিয়র নেতাদের দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার পরামর্শ দিলেও তাঁরা তা পালন করেন না। সিনিয়র নেতারা প্রতিনিয়ত দলীয় কার্যালয়ে বসলে মাঠের নেতা-কর্মীদের সাহস আরো বেড়ে যেত। আন্দোলন আরো বেগবান হতো। কিন্তু সিনিয়র নেতাদের দুর্বলতার কারণেই সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না। এভাবে আন্দোলন হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে ১০ জুন পর্যন্ত বিএনপির দেওয়া আলটিমেটাম সফল হবে না।'
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বাসভবন ও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুটি বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবদীন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর। এ ছাড়া গতকালের বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, জোট নেতা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, মীর মো. নাসির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ। সোমবারের বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক এম এ মান্নান প্রমুখ।
বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ, দলের সিনিয়র নেতাদের নামে মামলা ও গ্রেপ্তার, সরকারবিরোধী আন্দোলন-পরবর্তী করণীয়, পাশাপাশি দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর গ্রেপ্তারসহ নগরীতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার বাড়িতে তল্লাশি এবং হরতালে পুলিশি বাধার তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
হরতালে বোমাবাজি ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে পুলিশ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা মকবুল আহমদ, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির শেখ শওকত হোসেন নিলু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ দলের শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে। ইতিমধ্যে এসব মামলায় রিজভী, রতনসহ ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসভবনে এবং গত সোমবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতা ও আইনজীবীদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন। গতকাল হাইকোর্টে দলীয় নেতাদের জামিন না হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে পরবর্তী আইনি লড়াই কিভাবে চালানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ ১৮ দলীয় জোটের শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পরও রাজপথে কোনো ধরনের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ না হওয়ায় 'মামলা না খাওয়া' সিনিয়র নেতাদের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ হন চেয়ারপারসন।
আরো জানা যায়, গত সোমবার হরতাল শেষে রাতে গুলশানের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে উপস্থিত সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, 'আপনারা কী করছেন? এতজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর আপনাদের ভূমিকা কী? শুধু বৈঠক ও প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত থাকা আর টিভি টক শোতে কথা বললেই আন্দোলন হয় না। আন্দোলন করতে গেলে রাজপথে নামতে হয়। সিনিয়র নেতাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজিরা দিতে হয়।' এ অবস্থায় বিএনপির চেয়ারপারসন 'দলের তৃণমূল নেতাদের ওপরই একমাত্র ভরসা'- এমন মন্তব্য করেন বলে জানা গেছে।
নেতারা ছত্রভঙ্গ : গত রবিবার রাতে বোমা বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন। পুলিশি তল্লাশির কারণে রাতে বাসায় ফেরেন না কেউ। মাঠের আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। বেশির ভাগ নেতা গা ঢাকা দিয়েছেন। দলীয় অনুষ্ঠানেও তাঁদের দেখা যায় না। মধ্যম সারির নেতারাও ভীত-সন্ত্রস্ত।
এ অবস্থায় গতকালের বৈঠকে খালেদা জিয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের জামিনে বের করে আনা ও যেসব নেতা এখনো গ্রেপ্তার হননি, তাঁদের আগাম জামিন কিভাবে করা যায় এবং সরকারবিরোধী পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচির কৌশল কী হবে- এসব নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর ওই দিন কিংবা পরের দিন রাজধানীর কোথাও কোনো ধরনের বিক্ষোভ ছিল না, প্রতিবাদ ছিল না। এ নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চেয়ারপারসন সিনিয়র নেতাদের ওপর মনোক্ষুণ্ন হতেই পারেন। কারণ দলের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি আছে বলেই এমনটা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নেতাদের জামিনের ব্যাপারে আবেদন করার পর আদালত ব্রিবতবোধ করেছেন। এর পরও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দলীয় আইনজীবীদের পরামর্শ দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাননি কি গ্রেপ্তারের ভয়ে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর নির্দেশ নিয়েই মহাসচিব সব কিছু করছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই মহাসচিব সামনে এগোতে চান। তাই আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। আদালত বিব্রতবোধ করেছেন, এর পরও আইনের প্রতি বিএনপির শ্রদ্ধা আছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সরকার ভুল করেছে। মূলত সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে লাগাতার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা থামাতেই এই বোমা বিস্ফোরণের নাটক সাজানো হয়েছে।'
চেয়ারপারসনের সঙ্গে সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে কী হয়েছে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ও সরকারের দুঃশাসনের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মামলা হওয়ায় বিরোধী দলের আন্দোলন স্থবির হয়ে পড়বে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার কারণে আন্দোলন আরো বেগবান হবে। ভবিষ্যতে সেই পরিস্থিতি দেখতে পাবেন।
নগর বিএনপির এক নেতা বলেন, 'আমার বিরুদ্ধেও অনেক মামলা আছে। এরপরও আমাদের মাঠে থাকতে হয়। দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাঁদের খোঁজ আর মেলে না। সিনিয়র নেতাদের হরতালের দিন কিংবা অন্যান্য কর্মসূচির দিন অন্তত পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত থাকা উচিত। বিএনপি চেয়ারপারসন সিনিয়র নেতাদের দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার পরামর্শ দিলেও তাঁরা তা পালন করেন না। সিনিয়র নেতারা প্রতিনিয়ত দলীয় কার্যালয়ে বসলে মাঠের নেতা-কর্মীদের সাহস আরো বেড়ে যেত। আন্দোলন আরো বেগবান হতো। কিন্তু সিনিয়র নেতাদের দুর্বলতার কারণেই সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না। এভাবে আন্দোলন হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে ১০ জুন পর্যন্ত বিএনপির দেওয়া আলটিমেটাম সফল হবে না।'
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বাসভবন ও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুটি বৈঠকেই উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবদীন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর। এ ছাড়া গতকালের বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, জোট নেতা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, মীর মো. নাসির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ। সোমবারের বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক এম এ মান্নান প্রমুখ।
বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ, দলের সিনিয়র নেতাদের নামে মামলা ও গ্রেপ্তার, সরকারবিরোধী আন্দোলন-পরবর্তী করণীয়, পাশাপাশি দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর গ্রেপ্তারসহ নগরীতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার বাড়িতে তল্লাশি এবং হরতালে পুলিশি বাধার তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
হরতালে বোমাবাজি ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে পুলিশ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা মকবুল আহমদ, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির শেখ শওকত হোসেন নিলু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ দলের শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে। ইতিমধ্যে এসব মামলায় রিজভী, রতনসহ ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
No comments