শ্বশুর ও পুত্রবধূর মাথা ন্যাড়া করে ঘোরানো হলো
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে: শ্বশুরের সঙ্গে পুত্রবধূর অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এমন অভিযোগে শ্বশুর আবদুুর রশিদ (৫০) ও পুত্রবধূ সালমা বেগম (২০)-কে মারপিটের পর মাথা ন্যাড়া করে আর কালো রঙ মাখিয়ে সারা গ্রাম ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে গ্রাম্য মাতব্বররা। ঘটনাটি তাকিয়ে দেখলেও মাতব্বরদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। এ ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সৈয়দ দামগারা গ্রামে গত রোববার সন্ধ্যায়। ওই ঘটনায় গত সোমবার গভীর রাতে গ্রাম্য মাতব্বর ওবায়দুল্লাহসহ সালিশ বৈঠকের ৩২ জনের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরা হলো- ওই গ্রামের মৃত আবদুল মান্নান মণ্ডলের ছেলে আবুল কাসেম মণ্ডল (৩০), আবদুল হামিদ মণ্ডলের ছেলে তোফাজ্জল মণ্ডল (৩৫) ও রবিউল ইসলাম (৩৮)। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, উপজেলার সৈয়দ দামগারা গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে ট্রাকের হেলপার জাকির মণ্ডল গত ৭ মাস আগে আদমদীঘি উপজেলার বিনসারা গ্রামের আবদুস ছালামের মেয়ে সালমা বেগমকে বিয়ে করে। স্বামী ট্রাকের হেলপার হওয়ার সুবাদে প্রায়ই বাইরে থাকতো। এই সুযোগে গ্রামের কতিপয় বখাটে যুবক নববধূ সালমাকে প্রায় উত্ত্যক্ত করতো। এমনকি নানা রকম কু-প্রস্তাব দিতো। সালমা বিষয়টি একদিন তার স্বামী জাকিরকে জানালে সে গিয়ে বখাটেদের বারণ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এরপর থেকেই তারা নানাভাবে ওই পরিবারকে সমাজে হেয় করার জন্য ফন্দি-ফিকির করে আসছিল। ঘটনার ১৫ দিন আগেও গ্রামের কতিপয় মাতব্বর পুত্রবধূর সঙ্গে আবদুর রশিদের অবৈধ সম্পর্ক আছে দাবি করে বাড়িঘর ভেঙে অন্য কোথায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। তা না হলে বাড়িঘর উচ্ছেদের হুমকিও দেয় তারা। এ ঘটনায় জের ধরে গত রোববার সন্ধ্যায় ওই গ্রামের মাতব্বর মো. ওবায়দুল্লাহ (৫০), ইছহাক আলী (৩২), রজীবউদ্দিন (৪০) জাহিদুল ইসলাম (৩৫), ধলু মুন্সীসহ (৩৮)সহ কমপক্ষে ৩০/৩৫ জন বেআইনিভাবে আবদুর রশীদের বাড়িতে গিয়ে শ্বশুর ও পুত্রবধূর অবৈধ সম্পর্ক আছে দাবি করে জোর করে সালিশ বসায়। সালিশের নামে প্রথমে তারা উভয়কে লাঠি দিয়ে প্রহার করে। এতে তারা দু’জন অসুস্থ হয়। পরে অবৈধ সম্পর্কের শাস্তি হিসেবে বৃদ্ধ আঃ রশীদ ও নববধূ সালমা বেগমের মাথার সব চুল কেটে ন্যাড়া করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা তাদের দু’জনকে পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায়। এরপর সালিশকারীরা উল্লাস করতে করতে তাদেরকে টেনে-হিঁচড়ে দুই কিলোমিটার দূরে ত্রিমোহনী এলাকায় ইসাহার আলীর দোকানের সামনে আটকে রাখে। এই বর্বরোচিত ঘটনা কমপক্ষে ৬-৭শ’ মানুষ প্রত্যক্ষ করে। রাত ১০টার দিকে পুলিশ আসছে শুনে সালিশকারীরা পালিয়ে যায়। ওই গ্রামের আবদুল হামিদ জানান, মাতব্বরদের ভয়ে কেউ ওই ঘটনার প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এ ঘটনায় আবদুর রশীদের ছোটভাই ভ্যানচালক আবদুল জলিল মণ্ডল বাদী হয়ে গ্রাম্য মাতব্বর সালিশকারী ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫ জনকে আসামি করে মোট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
No comments