দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা হতাশাজনকঃ বাস্তবতাকে আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা
বিনিয়োগ ও শিল্পখাতে মহাজোট সরকারের ব্যর্থতা ঢাকা দেয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাদের ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পরও দেশের বিনিয়োগ ও শিল্প উত্পাদন বৃদ্ধি দূরে থাক ক্রমেই পিছু হটছে। গত দু’মাসেই গ্যাসভিত্তিক শিল্প কারখানায়গুলোর উৎপাদন প্রায় ৫০ ভাগ কমে গেছে।
বিদ্যুৎ সঙ্কট চরম আকার ধারণ করায় শিল্প খাতে এর আগে করা শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিদ্যুত্ ও গ্যাস সঙ্কটের কারণে অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এ অবস্থায় বিনিয়োগ ও শিল্প প্রবৃদ্ধিতে ধস নামা স্বাভাবিক। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় দেশি বিনিয়োগ থমকে দাঁড়িয়েছে আর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। গত বছরের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় চলতি বছর একই সময়ে রফতানি আয় কমেছে ৬ শতাংশ। কোনো বিরোধী দল বা পত্রিকার নয়, এ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের। একই সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ভাগে শিল্প উত্পাদনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। অথচ বিগত বিএনপি জোট সরকারের শেষ বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ। অর্থনীতির এই অধোগতি কাটাতে আওয়ামী মহাজোট সরকারের এক বছরের অর্জন শূন্য বলা যথেষ্ট নয়। ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা সৃষ্টিতেও তারা সক্ষম হয়েছে বলা যাবে না। বিনিয়োগ তথা অর্থনীতির প্রধান বাধা জ্বালানি সঙ্কটসহ অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে ও পরিবেশ সৃষ্টিতেও সরকার সক্ষম হয়নি। সরকার সমর্থক চাঁদাবাজদের দাপটে শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা। নিরাপত্তার অভাবে সবাই শঙ্কিত। এ অবস্থায় নতুন করে পুঁজি বিনিয়োগ দূরে থাক, বিনিয়োজিত পুঁজি ধরে রাখতেই তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন। জ্বালানি সঙ্কটের কারণে লোকসান গুনতে গুনতে অনেক কারখানাই বন্ধ হয়ে গেছে। শীতের শেষে এখনই বিদ্যুতের লোডশেডিং এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সামনে গ্রীষ্মে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাবা যায় না। এ অবস্থায় গ্যাস রেশনিং করে আর যাই হোক শিল্প বিনিয়োগের আশা দিবাস্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। দেশি বিনিয়োগ না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগও ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের ১২০ কোটি ডলারের স্থলে ২০০৮-০৯ বছরে ৯৪ কোটি ১০ লাখ ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। গত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ২০ লাখ ডলার, চলতি বছরের একই সময়ে তা নেমে এসেছে ২৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। অর্থমন্ত্রী কষ্ট করে ঢোক গেলার মতোই এ তথ্য স্বীকার করে বলেছেন, স্থানীয় বিনিয়োগ না বাড়লে কোনো দেশেই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে না। রফতানি আয়ের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের তুলনায় চলতি বছরে রফতানি আয় ৪৮ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা কমে গেছে। এ সময়ে ধরা রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এটা ১২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার কম। অর্থনীতির এই পিছু হটা ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার চাইতে সরকার দলীয় রাজনীতি অতীত বিষয় নিয়েই যেন বেশি বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে।
সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ অর্থনীতি চাঙ্গা করা বা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক নয়—এটা সংশ্লিষ্ট মহল থেকে বার বার বলা হলেও কোনো ফল হচ্ছে না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, সেগুলো মোটেই বিনিয়োগবান্ধব নয়—এমন কথা সস্প্রতি স্বীকার করেছেন খোদ বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান। যে কারণে ২০০৯ সাল ছিল বিনিয়োগশূন্য। ব্যর্থতার আরও একটা প্রমাণ এখন পর্যন্ত শিল্পনীতি ঘোষণা করতে না পারা। এক্ষেত্রে শিল্পমন্ত্রীর ঢাকঢোল পেটানোই সার হয়েছে। তবে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়াকে অবশ্য সরকার সাফল্যের নিদর্শন হিসেবে দেখাতে চেয়েছে। কিন্তু মানুষ এখন আর অতটা বোকা নয়। বিনিয়োগ না হওয়াতেই যে এমনটা হয়েছে সেটা না বোঝার কারণ নেই। একই কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও অলস টাকার মজুত রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগ বন্ধ্যাত্বের এমন রেকর্ড মহাজোট সরকারের ব্যর্থতাকেই বড় করে তোলে! বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ থাকায় পুঁজির ব্যবহার বেড়েছে জমিজমা কেনায়, নির্মাণ শিল্পে আর শেয়ারবাজারের ফটকাবাজিতে। উত্পাদন খাতের তুলনায় অনুত্পাদন খাতের ফুলে-ফেঁপে ওঠা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, তার প্রমাণ ক্রমাবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা অবস্থা। রাজনীতিও যে এর বাইরে থাকতে পারে না, সেটা দিন দিন পরিষ্কার হয়ে উঠছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না করে সরকার এখন দলীয় ও অতীতমুখী নানান ইস্যু নিয়েও বেশি সময়ক্ষেপণ করছে, বিরোধী দল ও মত নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে এই বাড়াবাড়ি আসলে জনগণের দৃষ্টি থেকে নিজের পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু এভাবে কি প্রকৃত অবস্থা আড়াল করে রাখা যায়?
সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ অর্থনীতি চাঙ্গা করা বা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক নয়—এটা সংশ্লিষ্ট মহল থেকে বার বার বলা হলেও কোনো ফল হচ্ছে না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, সেগুলো মোটেই বিনিয়োগবান্ধব নয়—এমন কথা সস্প্রতি স্বীকার করেছেন খোদ বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান। যে কারণে ২০০৯ সাল ছিল বিনিয়োগশূন্য। ব্যর্থতার আরও একটা প্রমাণ এখন পর্যন্ত শিল্পনীতি ঘোষণা করতে না পারা। এক্ষেত্রে শিল্পমন্ত্রীর ঢাকঢোল পেটানোই সার হয়েছে। তবে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়াকে অবশ্য সরকার সাফল্যের নিদর্শন হিসেবে দেখাতে চেয়েছে। কিন্তু মানুষ এখন আর অতটা বোকা নয়। বিনিয়োগ না হওয়াতেই যে এমনটা হয়েছে সেটা না বোঝার কারণ নেই। একই কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও অলস টাকার মজুত রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগ বন্ধ্যাত্বের এমন রেকর্ড মহাজোট সরকারের ব্যর্থতাকেই বড় করে তোলে! বিনিয়োগের পথ রুদ্ধ থাকায় পুঁজির ব্যবহার বেড়েছে জমিজমা কেনায়, নির্মাণ শিল্পে আর শেয়ারবাজারের ফটকাবাজিতে। উত্পাদন খাতের তুলনায় অনুত্পাদন খাতের ফুলে-ফেঁপে ওঠা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, তার প্রমাণ ক্রমাবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা অবস্থা। রাজনীতিও যে এর বাইরে থাকতে পারে না, সেটা দিন দিন পরিষ্কার হয়ে উঠছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না করে সরকার এখন দলীয় ও অতীতমুখী নানান ইস্যু নিয়েও বেশি সময়ক্ষেপণ করছে, বিরোধী দল ও মত নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে এই বাড়াবাড়ি আসলে জনগণের দৃষ্টি থেকে নিজের পর্বতপ্রমাণ ব্যর্থতা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু এভাবে কি প্রকৃত অবস্থা আড়াল করে রাখা যায়?
No comments